নিউজ ডেস্ক : ড. ইউনূস এমডি পদের লোভে হিলারি ক্লিনটনকে দিয়ে পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধ করিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।এজন্য তার ওপর চাপ এসেছিল।এমনকি ছেলে-মেয়েসহ পরিবারের ওপরও চাপ দেওয়া হয়েছিল বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।বুধবার (৮ জুন) রাতে জাতীয় সংসদের অধিবেশনে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ ও দেশের বৃহৎ এ অবকাঠামোর উদ্বোধনের তারিখ চূড়ান্ত হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে আনা প্রস্তাবের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা জানান। এ সময় অধিবেশনে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সভাপতিত্ব করেন।প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি ৯৬ সালে সরকার গঠনের পর যখন জাপানে যাই তখন তাদের বলি, আপনারা যমুনা সেতু করে দিয়েছেন আমি পদ্মা সেতু, রূপসা সেতু চাই। ২০০১ সালের ৪ জুলাই আমি পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করি। বিএনপি ক্ষমতায় এসে সেই প্রকল্প বাতিল করে দেয় এবং তারা বলে, এখানে হবে না, তারা আরিচায় করবে। সেতুর কাজ বন্ধ করে দিল, যাক একদিক দিয়ে ভালোই হলো। আমরা দ্বিতীয়বার সরকারে আসার পর আবার উদ্যোগ নিই। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার একটা উদ্যোগ নিয়েছিল, একজন সংসদ সদস্য বলেছেন। কিন্তু সেই সেতুর সঙ্গে রেল ছিল না, বিদ্যুৎ ছিল না, গ্যাসের লাইন ছিল না, কোনো কিছুই ছিল না। সেই সেতুর দৈর্ঘ মাত্র ৫.৮ কিলোমিটার করেছিল। আমরা যখন ক্ষমতায় এলাম, আমাদের কথা ছিল এই সেতু যখন করবো রেল, সড়ক, গ্যাস, বিদ্যুৎ এমনকি ওয়াইফাই কানেকশন এই সব কিছু মিলেই কিন্তু সেতুর পরিকল্পনা নিই।প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক টাকা আমাদের খরচ করতে হয়েছে। কিন্তু কারো ধারণাই নেই এই সেতুটা নির্মাণ করতে যে টেকনলজি, যে যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়েছে। আজকে টাকার অংক নিয়ে হিসাব করলে চলবে না, এটা আমরা নিজস্ব অর্থায়নে করেছি।আমরা যখন সেতুর উদ্যোগ নিই তখন এডিবিকে নিয়েছিলাম। কিন্তু এর মধ্যে বিশ্বব্যাংক এসে ঢোকে। কিন্তু আমাদের দেশে মানুষ কতটা স্বার্থপর হয়, একটুও দেশপ্রেম, দায়িত্ববোধ থাকে না। আমাদের দেশে অনেক ব্যাংক আছে, সেখানে অনেক এমডি আছেন। গ্রামীণ ব্যাংক একটা ব্যাংক তার যিনি এমডি তিনি হচ্ছেন ড. ইউনূস। আইন মতো ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত এমডি থাকা যায়।কিন্তু বেআইনিভাবে ৭১ বছর বয়স পর্যন্ত তিনি এমডি ছিলেন। স্বাভাবিকভাবে বাংলাদেশ ব্যাংক তাকে নোটিশ দেয়, তাকে অপমান করা হয়নি। মুহিত সাহেব এবং গহর রিজভী সাহেব প্রস্তাব দেন আপনি গ্রামীণ ব্যাংকের উপদেষ্টা হয়ে যান। কিন্তু এমডিই ওনাকে থাকতে হবে। আমরা তাকে অনেক বেশি সুযোগ দিয়েছি। গ্রামীণ ব্যাংককে ৪০০ কোটি টাকা দিয়েছিলাম যাতে টিকে থাকে। একজন এমডি এতো টাকার মালিক হন কীভাবে এবং ক্লিনটন ফাউন্ডেশনে এতো টাকা দেন কীভাবে, কার টাকা দেন, কীভাবে দিলেন সেটা তো কেউ খোঁজ করলো না! যারা আমাদের পদ্মা সেতু নিয়ে দুর্নীতির কথা বললো। আমি, আমার বোন রেহানা, আমার ছেলে, মেয়ে কেউ বাদ যায়নি। তাদের প্রতি অকথ্য অত্যাচার, মশিউর রহমান সাহেব, আমাদের শফিক, মোশারফ, মন্ত্রী আবুল হোসেন এদের ওপর যে জুলুম তারা করেছে…! যখন এই পদ্মা সেতুর টাকা বন্ধ করে দিল একটা মিথ্যা অপবাদ দিয়ে, তখন আমরা বললাম যে আমরা নিজের টাকায় করবো। অনেকেই ভেবেছিল এটা অস্বাভাবিক। কিন্তু আমি বলেছিলাম, না আমরা পারবো, আত্মবিশ্বাস ছিল। কারণ এই যে অপমান শুধু অন্যায়ই না স্টেট ডিপাটমেন্ট দুই দুই বার আমার ছেলে সজিব ওয়াজেদ জয়কে ডেকে নিয়ে বলেছে, তোমার মাকে বলো এমডির পদ থেকে ইউনূসকে সরানো যাবে না। ইউনূস বাংলাদেশ ব্যাংকের বিরুদ্ধে এবং আমাদের সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করলেন। প্রত্যেকটা মামলাতেই হেরে গেলেন। আইন তো ওনার বয়স কমাতে পারে না। হিলারি ক্লিনটনকে দিয়ে আমাকে ফোন করিয়েছেন, টনি ব্লেয়ারের স্ত্রী শেরি ব্লেয়ারকে দিয়ে ফোন করিয়েছেন। ইউনূসকে ব্যাংকের এমডি রাখতে হবে। নোবেল পুরস্কার যে পায় সে এমডি পদের জন্য এতো লালায়িত কেন।শেখ হাসিনা বলেন, পদ্মা সেতু, আমি মনে এটা আমাদের ভেতরে আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি করেছে, টেকনলজির প্রতি দেশের মানুষের জ্ঞান হয়েছে। ভবিষ্যতে আরও উন্নত কাজ করতে পারবো। আর সবচেয়ে বড় কথা হলো, বাংলাদেশ যে নিজেরা পারে এই ধারণাটা, এটাই বাংলাদেশের মর্যাদা সারা বিশ্বে উজ্জ্বল করেছে। ড. ইউনূস একটা এমডি পদের লোভে হিরারি ক্লিনটনকে দিয়ে এই পদ্মা সেতুর টাকা বন্ধ করিয়েছিলেন। তারা ভেবেছিলেন যে আমরা এখানে তাদের শর্ত মেনে নেবো। কিন্তু আমি শেখ মুজিবের মেয়ে, অন্যায়ের কাছে মাথানত করিনি, করবো না। এই দেশকে এই দেশের মানুষকে ভালোবাসি। দেশের মানুষের মাথা হেট হোক এই কাজ কোনো দিন করবো না।