‘মানুষ কতটুকু সেবা পেলো। মানুষের জীবনমান কতটা সহজ হলো। সেটাই হচ্ছে সব থেকে বড় কথা। ’
সরকার প্রধান বলেন, ‘সব জায়গায়, সব কিছুই যে লাভবান হবে সেটা না। কিন্তু লাভবান করা যায়। আমরা বিআরটিসিকেও যেমন লাভবান করেছি, আজকে রেল যেটাকে অলাভজনক বলে বন্ধ করতে বলা হয়েছিল এবং বন্ধ করে দিয়েছিল বিএনপি সরকার, সেটা চালু করে আমরা এটা প্রমাণ করেছি যে রেলকেও লাভবান করা যেতে পারে এবং করা যায়। রেলও আজকে লাভবান প্রতিষ্ঠানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ’
‘এখানে লোকবল আরও ভালোভাবে দিতে পারলে, লাইনগুলো আরও সম্প্রসারণ করতে পারলে এবং এই যে নতুন নতুন আমরা লাইন করছি এগুলো চালু হয়ে গেলে আমি মনে করি এটা আরও লাভবান হবে। ’
বিএনপির আমলে রেল বন্ধ করার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সব থেকে বেশি পণ্য পরিবহন করতে পারে রেল। আবার মানুষ যাতায়াতও করতে পারে রেলে অল্প খরচে। সেই রেলকেই সব থেকে দুঃখের বিষয় বিএনপি সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে রেল বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়। মূলত আমাদের বিআরটিসি বন্ধ করার পরিকল্পনা, রেল বন্ধ করার পরিকল্পনা এসব পরামর্শ দিয়েছে বিশ্ব ব্যাংক। ’
‘গোল্ডেন হ্যান্ডসেকের মাধ্যমে ১০ হাজার কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছিল। অনেক রেল লাইন বন্ধ করে দেওয়া হয়। রেল আসলে মুখ থুবড়ে পড়ে। আওয়ামী লীগ যখন সরকারে আসে তখন আমরা চেষ্টা করেছি এই রেলকে আবার নতুনভাবে গড়ে তোলা এবং মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে সুগম করা। ’
দেশকে এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে টানা তিনবারের সরকার প্রধান বলেন, ‘আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীতে এটাই আমাদের লক্ষ্য। স্বাধীনতার জাতির পিতা আমাদের স্বল্পোন্নত দেশে উন্নীত করেছিলেন। আজ আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। কাজেই এই মর্যাদা ধরে রেখে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। মাঝে মধ্যে বিপত্তি আসে। এটা হচ্ছে দুঃখজনক। ’
বিগত বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলনের সময় রেলে অগ্নিসংযোগের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যখন আমরা নতুন নতুন কোচ কিনলাম, নতুন লোকোমোটিভ কিনলাম, ইঞ্জিন কিনলাম, সেই সময় বিএনপি শুরু করলো অগ্নিসন্ত্রাস। সব থেকে দুঃখজনক। ’
‘যে নতুন রেলগুলো, যাত্রী নিয়ে যাচ্ছে সেই রেলে আগুন দেওয়া, আগুন দিয়ে রেল লাইন, রেল কোচ, রেল ইঞ্জিন বিএনপি পুড়িয়ে দিয়েছিল। এটা নাকি তাদের আন্দোলন ছিল। ’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি জানি না মানুষকে পুড়িয়ে মারা বা চলন্ত বাস, গাড়ি অথবা রেলে আগুন দিয়ে, লঞ্চে আগুন দিয়ে এটা কোনো ধরনের আন্দোলন। এটা তো এক ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। অবশ্য তারা তো ক্ষমতা দখলকারীদের হাতে ক্ষমতায় বসে প্রতিষ্ঠিত পার্টি। জনগণের মধ্যে থেকে তো উঠে আসেনি। কাজেই জনগণের কল্যাণে তাদের দৃষ্টি থাকে না। ক্ষমতার লোভটাই তাদের বড়। মানিলন্ডারিং, দুর্নীতি, জঙ্গিবাদ সৃষ্টি, বাংলা ভাই সৃষ্টি, এগুলোই তো তাদের কাজ ছিল। তারা তো দেশের মানুষের কল্যাণে কিছু করেনি। ’ অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে কমলাপুর প্রান্ত থেকে বক্তব্য রাখেন রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন।
গত ১৩ বছরে রেলের কিছু গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের রেলওয়েকে গণপরিবহনে রূপান্তরে বিভিন্ন কার্যক্রম শুরু করে।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং জানায়, ২০১১ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক রেলপথ মন্ত্রণালয় গঠন করেন। বিগত ১৩ বছরে শেখ হাসিনা সরকার ৫৬৩ দশমিক ৯৫ কিলোমিটার নতুন রেল লাইন নির্মাণ করে; ১২৭৮ কিলোমিটার রেললাইন পুনঃনির্মাণ করে; নতুন ১০৯টি স্টেশন বিল্ডিং নির্মাণ করে এবং ৬৪৩টি নতুন রেলসেতু নির্মাণ করে। যাত্রী সেবার মান বাড়াতে ই-টিকিটিং চালু করা হয়েছে।
এছাড়া এই সময়ে বিভিন্ন রুটে চালু করা হয়েছে ১৪৪টি নতুন যাত্রীবাহী ট্রেন। ৪টি নতুন রেলওয়ে সেকশন নির্মাণ। ৪টি বন্ধ রেলওয়ে সেকশন পুনঃচালু করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং আরও জানায়, রেলওয়েতে এখন ৩৭টি প্রকল্প চলমান। রেলওয়ের মাস্টারপ্ল্যান (২০১৬-২০৪৫) হালনাগাদ করা হয়েছে। বর্তমানে ৪৩টি জেলায় রেললাইন আছে। প্রকল্পগুলো সমাপ্ত হলে আরও ১৬ জেলায় রেললাইন যুক্ত হবে। পদ্মাসেতুতে রেললাইন নির্মাণ কাজ চলমান।
পদ্মা সেতু পার হয়ে ভাঙ্গা থেকে একদিকে যেমন যশোর হয়ে খুলনা পর্যন্ত যোগাযোগ স্থাপন করা হবে। অপরদিকে সোজা বরিশাল হয়ে একেবারে পায়রা নতুন নৌবন্দর পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইস্পিড ট্রেন লাইন করার চিন্তা-ভাবনা আছে সরকারের।