ঢাকা: নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ী ও দোকান কর্মচারীদের সঙ্গে ঢাকা কলেজের ছাত্রদের বারবার সংঘর্ষ বন্ধে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ চান ব্যবসায়ী নেতারা। তারা মনে করেন, পুলিশ বা প্রশাসন দিয়ে এ সমস্যার সমাধান হবে না।তারা বলছেন, স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও ছাত্রদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের এ ধরনের সংঘর্ষ কোনোভাবেই কাম্য নয়। পুলিশ বা প্রশাসন দিয়ে এ সমস্যার স্থায়ী সুরাহা আসবে না। এজন্য প্রবীণ রাজনৈতিক নেতাদের দিক নির্দেশনায় প্রশাসনকে কাজ করার আহবান জানিয়েছেন ব্যবসায়ী নেতারা।জানা যায়, এলিফ্যান্ট রোডসহ নিউ মার্কেট এলাকায়, নিউ মার্কেট, গাউছিয়া সুপার মার্কেট, চন্দ্রিমা সুপার মল, চাঁদনী চক, হকার্স মার্কেট, নিউ ম্যানশনসহ প্রায় ৪৫টি মার্কেট আছে। এসব মার্কেটে কয়েক লাখ মানুষের কর্মসংস্থান রয়েছে। সোমবার শুরু হওয়া সংঘর্ষ মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে। বুধবারও নিউ মার্কেট বন্ধ রয়েছে। ফলে ২০০ কোটি টাকার বেশি ক্ষতির আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।
এ বিষয়ে মঙ্গলবার (১৯ এপ্রিল) রাতে বৃহত্তর এলিফ্যান্ট রোড দোকান ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. তৌফিক আহসান বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছর পর ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ছাত্রদের সংঘর্ষ হচ্ছে, এটা মেনে নেওয়া যায় না। এ ধরনের সংঘর্ষ আমরা কখনই কামনা করি না। ছাত্ররা লেখাপড়া করবে আর ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করবে। সংঘর্ষ হলেই প্রশাসন হস্তক্ষেপ করে তা দিয়ে কি আজ পর্যন্ত সংঘর্ষ বন্ধ হয়েছে। সাময়িক বন্ধ করতে পেরেছে। স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে হলে সরাসরি রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ দরকার। তাদের দিক নির্দেশনা এলে সব পরিষ্কার হয়ে যাবে।তিনি বলেন, আমাদের দেশে প্রতিবছরই ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ছাত্রদের সংঘর্ষ হয়ে বাধে। এটা চিরতরে বন্ধের কোনো পথ নেই। তবে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ হলে বন্ধ হতে পারে। পুলিশ বা প্রশাসন দিয়ে সুরাহা আসবে না। কলেজ বন্ধ করে দিল। যখন আবার কলেজ খুলবে তখন আবার এই সংঘর্ষ হবে। তাই স্থায়ী সমাধানের পথ খুঁজতে হবে। রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ হলে এখানকার পরিবেশ স্বাভাবিক ও সুষ্ঠু হবে। তাহলে কি ছাত্র-ব্যবসায়ীদের এই সংঘর্ষ মূলত রাজনৈতিক, জানতে চাইলে ব্যবসায়ী এই নেতা বলেন, আমি সেটা বলতে পারবো না। প্রবীণ রাজনৈতিক নেতারা বসে প্রশাসনকে যদি দিক নির্দেশনা দেন তাহলে একটা সুন্দর পরিবেশ ফিরে আসবে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, ব্যবসায়ী ও দোকান কর্মচারীদের সঙ্গে ছাত্রদের চলমান সংঘর্ষ কোনো সুস্থ ধারার কাজ বলে আমি মনে করি না। এখানে কোনো না কোনো ষড়যন্ত্র লুকিয়ে আছে। এগুলো বের করার জন্য আমি সরকারের কাছে অনুরোধ জানাই।
নিউ মার্কেট দোকান মালিক সমিতির সভাপতি আমিনুল ইসলাম শাহীন বলেন, আমরা চাই সহাবস্থান। ছাত্ররা পড়াশোনা করবে আমরা ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করবো। প্রশাসন যদি পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে তাহলে আমরা আশা করছি দোকানপাট খুলতে পারবো। তিনি বলেন, আমরা স্থায়ী সমাধান চাই। রাজনীতিতে সক্রিয় অনেকেই চেষ্টা করেছেন এটা সমাধানের জন্য। তিনি বলেন, হঠাৎ কোথা থেকে যেন ১০ থেকে ১৫ জনের হেলমেট পরা গ্রুপ এসে দোকানে আগুন ধরিয়ে দিল, লুটপাট, ভাঙচুর করল। এরা আসলে কারা। আমাদের ব্যবসায়ী তো না। আমরা যতটুকু খোঁজ নিয়েছি তাতে এটা নিশ্চিত বলতে পারি, এরা অন্য কোনো মার্কেটেরও লোকজন না।তিনি বলেন, তারা কোথা থেকে এসে এ কাণ্ড ঘটালো, সাংবাদিকদেরও মারধর করেছে। রামদা, চাপাতি ও রড নিয়ে রাস্তায় নেমেছে। এরা কারা, এটা আগে চিহ্নিত করা দরকার। তাদের চিহ্নিত করে সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানাই। প্রমাণ হিসেবে সিসিটিভি ফুটেজ রয়েছে। গোয়েন্দাদের মাধ্যমে চিহ্নিত করে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে এটা নিষ্পত্তি হওয়া দরকার বলে মনে করি। জানা যায়, সোমবার মধ্যরাত থেকে নিউ মার্কেট ব্যবসায়ী ও দোকান কর্মচারীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষে ১০ সাংবাদিকসহ অর্ধশতাধিক ছাত্র ব্যবসায়ী আহত হয়েছেন। বন্ধ রয়েছে নিউমার্কেট এলাকার সব দোকানপাট। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ঢাকা কলেজ ও এর ছাত্রাবাসগুলো।