নিউজ ডেস্ক : মুন্সিগঞ্জের বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলের বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ ও তাকে গ্রেফতার করানোর ঘটনা পরিকল্পিত বলে মনে করছেন দেশের বামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা। বিজ্ঞান শিক্ষায় বাধা সৃষ্টি করতে এবং সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে তাকে ফাঁসানো হয়েছে বলেও মনে করেন তারা।অবিলম্বে তার নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেছেন তারা।মুন্সিগঞ্জের বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞানের শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলকে সম্প্রতি বিজ্ঞান ক্লাসে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। বিজ্ঞান ক্লাসে তাকে ধর্ম বিষয়ে প্রশ্ন করে এবং তা রেকর্ড করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের ঘটনা পরিকল্পিত বলে মনে করছেন বামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা। তারা বলছেন, বিজ্ঞান শিক্ষায় বাধা সৃষ্টি করতে বিজ্ঞান ও ধর্মের মধ্যে বিভেদ তৈরির উদ্দেশে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে এবং তাকে গ্রেফতার করানো হয়েছে। এ ঘটনার মধ্য দিয়ে দেশে সাম্প্রদায়িক মনোভাবের বিস্তৃতিও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে বলে মণে করেন তারা। কোনো ধরনের অজুহাত তৈরি না করে অবিলম্বে তারা শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলকে নিঃশর্ত ও সম্মানের সঙ্গে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানান। পাশাপাশি যারা তাকে গ্রেফতার করিয়েছে তাদের গ্রেফতার ও শাস্তি দাবি করেন তারা।এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, আমাদের দেশে সাম্প্রদায়িক মনোভাব এতটাই বিস্তৃত হয়েছে যেটা এ হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলের ঘটনার মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ঘটনাটি পরিকল্পিতভাবে ঘটানো হয়েছে। বিজ্ঞান শিক্ষায় বাধা সৃষ্টি করতে বিজ্ঞান ও ধর্মের মধ্যে বিভেদ তৈরির জন্য পরিকল্পিতভাবে এটা করানো হয়েছে। এটি অত্যন্ত ভয়ঙ্কর বিষয়। আমরা চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের কথা বলছি, বিজ্ঞানের কথা বলছি, আবার বিজ্ঞান শিক্ষা নিয়ে এটা করা হচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির ঘটনা এসবই পরিকল্পিত। সেখানে তো আশপাশে বড় মসজিদ আছে, আলাদা করে করে নামাজের জায়গার দাবি কেন। বিজ্ঞানের শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে, এটা নিয়ে যেন কোনো ধরনের অজুহাত তৈরি করা না হয়।জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, দীর্ঘদিন ধরে সাম্প্রদায়িক চর্চার কারণে এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। যারা হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে তাদের গ্রেফতার করতে হবে। তিনি কোনো আইন ও ধর্মবিরোধী বক্তব্য দেননি। তাকে নিঃশর্তভাবে মুক্তি দিতে হবে। যারা তার গ্রেফতারে ভূমিকা রেখেছে তাদের শাস্তি দিতে হবে। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে সরে যাওয়ার কারণে এ ধরনের ঘটনার বহিঃপ্রকাশ ঘটছে। সাম্প্রদায়িক শক্তি অপতৎপরতা চালিয়ে মানুষকে বিজ্ঞান চর্চা থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। সরকারের কিছু কার্যকলাপেও এ অপশক্তি এ ধরনের ঘটনা ঘটানোর সাহস পাচ্ছে। সাম্প্রদায়িক শক্তির তৎপরতা বন্ধ করতে না পারলে এ সমস্যাগুলো দূর হবে না। হৃদয় চন্দ্রু মণ্ডলকে অবিলম্বে নিঃশর্ত, সম্মান ও শিক্ষকের যথাযথ মর্যাদা দিয়েই মুক্তি দিতে হবে।