এ ঘটনার পরে নেপালে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত স্বর্ণ পাচারে একজন সরকারি কর্মকর্তা কিভাবে জড়িত হলেন, তার পরিপূর্ণ তদন্ত হওয়া প্রয়োজন জানিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন। একই সঙ্গে ব্যাগেজ রুল সংশোধন ও স্বর্ণ পাচার রোধে নজরদারি বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন রাষ্ট্রদূত।
এই চিঠির একটি কপি বাংলানিউজটায়েন্টিফোর.কমের হাতে এসেছে।
নেপালের কাস্টমস কর্তৃপক্ষ স্বর্ণ চোরাচালানে জড়িত থাকায় যে আট বাংলাদেশিকে আটক করেছে তারা হলেন, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশনের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. মিরাজুল ইসলাম (বাংলাদেশি অফিসিয়াল পাসপোর্ট নম্বর ওসি৬০০৯০৮৩), সালমান আহমেদ (বাংলাদেশি পাসপোর্ট নম্বর বিটি০২১২১৫৪), মো. ইউনুস আলী (বাংলাদেশি পাসপোর্ট নম্বর বিকিউ০৩৯৩২৮৮), জাহিদুল ইসলাম (বাংলাদেশি পাসপোর্ট নম্বর এও০১০০৮৮৫), তৌহিদুল তানভীর (বাংলাদেশি পাসপোর্ট নম্বর এও১২৪১৪৬৯), সোবহান তালুকদার (বাংলাদেশি পাসপোর্ট নম্বর বিটি০৬৯৩৫৯৯) ও আশরাফুল ইসলাম (বাংলাদেশি পাসপোর্ট নম্বর বিএন০৯৮৭৭১)।এরপর ঘটনার পুরো বর্ণনা দিয়ে ঢাকায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তফা কামালকে চিঠি পাঠিয়েছেন নেপালে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত।
রাষ্ট্রদূত চিঠিতে উল্লেখ করেন, অফিসিয়াল পাসপোর্টধারী ব্যক্তি পুলিশের একজন এসআই। তিনি বাংলাদেশের ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কাজ করেন। তার জামিনের জন্য ৩৩ লাখ নেপালি রুপি জরিমানা দিয়েছেন। নেপাল কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশকে জানিয়েছে, আটক ব্যক্তিরা শক্তিশালী পাচারকারী চক্রের সঙ্গে জড়িত। এই চক্রের সঙ্গে নেপালের কেউ জড়িত কি না, তা যাচাই করতে তারা আটকদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। পাশাপাশি তারা এও জানান, সোনা চোরাচালানের বিষয়ে বাংলাদেশকে সতর্ক করাও তাদের আটক করার অন্যতম কারণ। প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের ব্যাগেজ রুল অনেক বেশি নমনীয়। পাচারকারীরা এই নিয়মের সুযোগ নিয়ে থাকে।
কাঠমান্ডুতে জিজ্ঞাসাবাদে এসব বাংলাদেশি স্বর্ণ পাচারে জড়িত বলে স্বীকার করেছেন। তবে চক্রটি নিরীহ বাংলাদেশিদের মাধ্যমেও স্বর্ণ পাচার করিয়েছে বলে স্বীকার করেছে। আটক আটজনের মধ্যে দুইজন জানিয়েছেন, তারা ওই চক্রের অনুরোধে স্বর্ণ বহন করছিলেন। স্বর্ণ বহন করার বিনিময়ে তারা প্রত্যেকে ১০ হাজার টাকা করে নগদ অর্থ পাবেন বলে প্রলোভন দেখিয়েছিল। সেই লোভের বশবর্তী হয়ে তারা স্বর্ণ বহন করেন বলেও জানান।
আটককৃতদের মুক্তির জন্য কাঠমান্ডুতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস নেপালি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা শুরু করে। বাংলাদেশ দূতাবাসের পক্ষ থেকে বলা হয়, আটক ব্যক্তিরা ট্রানজিট যাত্রী। ফলে তারা নেপালের আইনের আওতাধীন নয়। তাদের মুক্তির লক্ষ্যে রাষ্ট্রদূত নিজে নেপালের অর্থমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ওই সময় নেপালের অর্থমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্র সচিব জানান, আটক ব্যক্তিদের তিনজন মুক্তির জন্য নেপালের কর্তৃপক্ষের কাছে ৭৬ লাখ নেপালি রুপি পরিশোধ করেছেন।জননিরাপত্তা বিভাগের সচিবের কাছে পাঠানো চিঠিতে রাষ্ট্রদূত বলেন, স্বল্প সময়ের মধ্যে এত বেশি জরিমানার অর্থ পরিশোধের মাধ্যমে তাদের একটি চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয় নিশ্চিত করে। আটক অবশিষ্ট ব্যক্তিদের দূতাবাস বন্ড সই দিয়ে আদালত থেকে ছাড়িয়ে আনে। তারা পাসপোর্ট ফিরে পাওয়ার পর বাংলাদেশে ফিরে আসেন।