সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাংকিং সেবা বন্ধ হচ্ছে!

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাংকিং সেবা বন্ধ হচ্ছে!
 নিউজ ডেস্ক  : বেশ কয়েকটি ব্যাংক গ্রাহকদের ভাইবার, হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক মেসেঞ্জারের মত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাংকিং সেবা প্রদান করছে। এতে তথ্য সুরক্ষার ঝুঁকি তৈরি হওয়ায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সেবা প্রদান কার্যক্রম বন্ধ করার পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থার এ ধরনের পদক্ষেপ ডিজিটাল ব্যাংকিংকে জনপ্রিয় করার উদ্যোগের জন্য বাধা বলে মনে করছে ব্যাংকগুলো।কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইতোমধ্যে দু’টি ব্যাংকের আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে যারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাংকিং সেবা চালু করতে চেয়েছিল।সম্প্রতি ব্যাংকগুলোকে পাঠানো চিঠিতে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, ব্যাংকগুলো যদি ফেসবুক মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ এবং ভাইবারের মাধ্যমে সেবা প্রদান করে, তাহলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষে কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করা অসম্ভব হবে। কারণ তাদের (ভাইবার, হোয়াটমঅ্যাপ, ফেসবুক মেসেঞ্জার) বাংলাদেশে কোনো অফিস নেই।
বাংলাদেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) নীতিমালা অনুযায়ী, যে কোনো উৎপাদিত, সংগৃহীত এবং প্রক্রিয়াকৃত তথ্য দেশের অভ্যন্তরে তথ্য স্থানীয়করণের নিয়ম অনুযায়ী সংরক্ষণ করতে হবে।বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা মেসেজিং প্ল্যাটফর্মগুলোর বাংলাদেশের মধ্যে তথ্য সংরক্ষণ করার জন্য কোনো ব্যবস্থা নেই, তাই গ্রাহকদের তথ্য পাচার হতে পারে। গ্রাহকদের আগ্রহ এবং আর্থিক তথ্য নিরাপত্তার জন্য এতে সম্ভাব্য হুমকি রয়েছে।কেন্দ্রীয় ব্যাংক চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি ব্যাংকগুলোকে চিঠি দিয়ে তাদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে দেওয়া ব্যাংকিং পরিষেবা সম্পর্কিত তথ্য সরবরাহ করতে বলে।বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের এই ধরনের ব্যাংকিং পরিষেবা না দেওয়ার জন্য আরও একটি নির্দেশনা নিয়ে আসতে পারে।বাংলাদেশের কিছু ব্যাংক ইতোমধ্যেই মেসেজিং প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে আর্থিক পরিষেবা প্রদান করছে, যা করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে অনেক বেশি জনপ্রিয় হয়েছে।মূলত হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে গ্রাহকরা ব্যালেন্স অনুসন্ধান করতে পারেন, অ্যাকাউন্ট স্টেটমেন্ট পেতে পারেন, এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকে তহবিল স্থানান্তর করতে পারেন, মোবাইল ফোন রিচার্জ এবং ইউটিলিটি বিল পরিশোধ করতে পারেন।অনলাইন ব্যাংকিংয়ের জন্য গ্রাহকদের ক্রমবর্ধমান পছন্দকে অগ্রাধিকার দিয়ে কিছু ব্যাংক ইতোমধ্যেই ডিজিটাল ব্যাংকিং সম্প্রসারণ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে প্ল্যাটফর্ম তৈরির জন্য বিপুল পরিমান বিনিয়োগও করেছে।বেসরকারিখাতের মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক (এমটিবি) ২০২১ সালের জুনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাংকিং চালু করে এবং একমাস পরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আবেদন করে।বাংলাদেশ ব্যাংক এমটিবির আবেদন গেল বছরের অক্টোবরেই বাতিল করে দিয়েছে। ইতোমধ্যে ১১ হাজার গ্রাহক হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে সেবা পেতে মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের প্ল্যাটফর্মে নিবন্ধন করেছেন।এ বিষয়ে মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ইতোমধ্যে জনবল নিয়োগ করা হয়েছে।বিশ্বের অনেক দেশ ব্যাংকগুলোকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে পরিষেবা প্রদানের অনুমতি দিয়েছে।মাহবুবুর রহমান বলেন, তরুণ গ্রাহকরা এখন প্রথাগত ব্যাংকের পরিবর্তে ডিজিটাল ব্যাংকিং পছন্দ করেন তাই আমরা বিশ্ব মডেল অনুসরণ করে পরিষেবাটি চালু করেছি।বেসরকারিখাতের ঢাকা ব্যাংক ২০২০ সালে হোয়াটসঅ্যাপ ব্যাংকিং চালু করে। এ বিষয়ে ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমরানুল হক চৌধুরী বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উচিত ব্যাংকগুলোকে অন্তত ছোট পরিসরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাংকিং কার্যক্রম চালানোর অনুমতি দেওয়া। ’জানা গেছে, ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড গত বছর দুই লাখের বেশি গ্রাহককে ফেসবুক মেসেঞ্জার এবং ভাইবারের মাধ্যমে ব্যাংকিং সেবা দিয়েছে।প্রাইম ব্যাংক চার থেকে পাঁচ মাস আগে হোয়াটসঅ্যাপ ব্যাংকিং চালু করেছিল এবং প্ল্যাটফর্মটি দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে নিবন্ধিত গ্রাহক ৭০ হাজারের কাছাকাছি।বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) সাবেক সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবির বলেন, আইসিটি নীতিমালার তথ্য স্থানীয়করণের নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে তাদের তথ্য দেশের অভ্যন্তরে সংরক্ষণ করতে হবে।প্রতিবেশী দেশ ভারতের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, হোয়াটসঅ্যাপ ২০১০ সালে ভারতে একটি সার্ভার সেট করেছে, যাতে দেশে উৎপন্ন তথ্য স্থানীয়ভাবে সংরক্ষণ করা যায়।তিনি আরও বলেন, ‘সরকার হোয়াটসঅ্যাপকে বাংলাদেশে একটি সার্ভার স্থাপনের অনুরোধ করতে পারে। যা এই সমস্যার সমাধান করবে। ’বাংলাদেশের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উচিত হবে না সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে সেবা প্রদান নিষিদ্ধ করা। কারণ গ্রাহকরা ক্রমবর্ধমান ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা গ্রহণ করছে।তিনি আরও বলেন, আমাদের ভারতের মডেল অনুসরণ করা উচিত এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উচিত সামাজিক যোগযোগ মাধ্যম প্ল্যাটফর্মগুলোর সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা।তিনি বলেন, হোয়াটসঅ্যাপ বাংলাদেশে সার্ভার স্থাপনে আগ্রহ দেখাতে পারে, কারণ এতে তাদের আয়ও বাড়বে।কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে ব্যাংকগুলোকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সাইটের মাধ্যমে সেবা সংক্রান্ত অভিযোগ গ্রহণ ও সমাধানের অনুমতি দেয়।

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

দুর্ঘটনার আশঙ্কায় জনমনে উদ্বগে বীরগঞ্জের সড়কগুলো দাপিয়ে বড়োচ্ছে কিশোর চালকরা

সন্দ্বীপে কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনা উদ্বোধন