তিনি বলেন, ‘জনগণের ভোট চুরি করেছিল বলে কী হয়েছিল তার পরিণতি। গণঅভ্যুত্থান হয়েছিল, আন্দোলন হয়েছিল, সংগ্রাম হয়েছিল, সেই সংগ্রামের মধ্যে আন্দোলনের মধ্যে খালেদা জিয়া, বাধ্য হয়েছিল পদত্যাগ করতে, ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন আর ৩০ মার্চ খালেদা জিয়া পদত্যাগ করতে বাধ্য হয় গণআন্দোলনে। আজকে যারা নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন করে তাদের আমি স্মরণ করাতে চাই। সেই ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন এবং খালেদা জিয়ার পদত্যাগের কথা। তাদের তৃতীয়বারের প্রধানমন্ত্রী তো দেড় মাসও ক্ষমতায় থাকতে পারে নাই। কারণ, ভোট চুরির অপরাধে নাকে খত দিয়ে তাকে পদত্যাগ করতে হয়েছিল। ’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘পদত্যাগ করতে যাবে রাষ্ট্রপতি ভবনে আমাদের পারমিশন নিয়ে যেতে হয়েছিল, জনগণের পারমিশন নিয়ে তাকে যেতে হয়েছিল। এই পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছিল। ভোট চুরি করলে জনগণ ছেড়ে দেয় না। এটা বাস্তবতা। ’
‘বাংলাদেশের মানুষের ভোটের অধিকার নিয়ে অতীতে যারা ছিনিমিনি খেলেছে, তারা তাদের শাস্তি পেয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ তাদের ক্ষমতা থেকে হটিয়েছে। ’
টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ পরপর তিনবার সরকারে এসেছে, জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েছে, জণগণের ভোটে যদি নির্বাচিত না হতাম তাহলে তিন তিন বার আমরা সরকারে আসতে পারতাম না। আর আজকে ১৩ বছর পূর্ণ করতে পারতাম না। এটা হলো বাস্তবতা। এই বাস্তবতাকে স্বীকার করতে হবে। ’
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান এবং জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সময়কার নির্বাচনের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে যারা নির্বাচন নিয়ে কথা বলে, প্রশ্ন তোলে তাদের কাছে আমার প্রশ্ন? …রাষ্ট্রপতি নির্বাচন হয়েছে ক্ষমতায় বসে, উর্দি পরে, একদিকে সেনাবাহিনী প্রধান, আরেকদিনে রাষ্ট্রপতি, স্বঘোষিত রাষ্ট্রপতি। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী। সে নির্বাচনে জনগণ কি ভোট দিতে পেরেছিল? সেখানে ভোট ছিল কোথায়? তারপর আবার দল গঠন করা হলো, ক্ষমতায় বসে ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে দল গঠন করা, সেই দলেরই নাম হচ্ছে বিএনপি। ’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচন, বহু পূর্ব থেকে ঘোষণা, আওয়ামী লীগ ৪০টার বেশি সিট পাবে না। তখন শুধু সরকারি পত্রিকাই ছিল, সেখানে সেটাই লেখা হয়েছিল। আওয়ামী লীগ একটি সংগঠন, ৪৯ সালে যার জন্ম, যে সংগঠনের মাধ্যমে ভাষার আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ সেই সংগঠন এ রকম ভোট পাবে না। এটা কি করে হতে পারে? কিন্তু সেই ঘটনাই বাংলাদেশে ঘটেছিল। ’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তাহলে সে নির্বাচনের খেলাটা কি ছিল? ওই নির্বাচনটা জনগণের ভোটে হয়নি। অবৈধ ক্ষমতাকে বৈধ করার জন্য সংসদে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সেটাকে বৈধকরণ করার প্রচেষ্টা। সেই খেলাটাই হয়েছিল জনগণের ভোট নিয়ে। জনগণের ভোটের অধিকার লঙ্ঘন করে। এ খেলাই চলছিল দীর্ঘদিন। ’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘তারপর ’৮১ সালের নির্বাচনটা দেখি, …’৮১ সালের নির্বাচনে আমাদের ক্যান্ডিডেট ছিলেন, তিনিও ভুলে গেছেন তার নির্বাচনে কি ঘটেছিল। সমস্ত জায়গায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ওপরে অকথ্য অত্যাচার-নির্যাতন। তারপর আসলো ’৮৬ সালের নির্বাচন, ৪৮ ঘণ্টা নির্বাচন বন্ধ করে রেজাল্ট পাল্টে দেওয়া হলো। ’
‘’৯১ সালের নির্বাচন, কোনো দলই তখন সংখ্যাঘরিষ্ঠতা পেল না। আমাকে প্রস্তাব দিয়েছিল তখনকার রাষ্ট্রপতি, আমরা মেজরিটি পাইনি বলে আমি সে প্রস্তাবে রাজি হইনি। যে জামায়াত আর জাতীয় পার্টির সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করতে পারি। আমি বললাম যে, এই দুর্বল অবস্থায় তো আমি ক্ষমতায় যেতে চাই না। …কারণ আমার ক্ষমতার প্রয়োজন হচ্ছে দেশের উন্নয়ন করা। যাই হোক বিএনপি জামায়াতের সহযোগিতায় সরকার গঠন করে। ’
অনেকে বাংলাদেশে উন্নয়ন সহ্য করতে পারে না মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের উন্নয়নটা যারা সহ্যই করতে পারে না, তাদের মুখে ওই কিছুই হলো না, কিছুই হলো না কথা। তাদের বলবো নিজেরা আয়নায় একটু চেহারা দেখেন। আর অতীতে কী করেছেন সেটা দেখেন। ’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ভালো কাজ করলেই তার বিরুদ্ধে লেগে থাকা, এটা এক শ্রেণির মানুষের অভ্যাস। কারণ যারা এদেশের স্বাধীনতা চায়নি, যারা খুনিদের নিয়ে এবং যুদ্ধাপরাধীদের নিয়ে সরকার গঠন করে, রাষ্ট্রপরিচালনা করে বাংলাদেশকে, বাংলাদেশের উন্নয়নকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করতে চেয়েছিল তাদের কিছু প্রেতাত্মা এখনো সমাজে আছে। রাজনৈতিক অঙ্গনে আছে এবং তারাই এগুলো করে বেড়াচ্ছে। শুধু এখানে না বিদেশে গিয়ে নালিশ করে বেড়াচ্ছে। তাদের কাছে তথ্য দিচ্ছে। ’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যে সমস্ত যুদ্ধাপরাধীদের এ দেশে বিচার হয়েছে, সাজা হয়েছে, তাদের ছেলেপেলে এবং যারা পালিয়ে গেছে। আর সেই সাথে সাথে এতিমের অর্থ আত্মসাৎ করে জেলে, দয়া করে আমরা তাকে বাসায় থাকতে দিয়েছি, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এবং সব থেকে ব্যয়বহুল হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। আর তার ছেলে ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা এবং দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে পলাতক হয়ে বিদেশে গেছে পালিয়ে। কিন্তু ষড়যন্ত্র বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। ’
‘আর যাদের জন্য মায়াকান্না, একটা হচ্ছে দুর্নীতিতে সাজাপ্রাপ্ত আর আরেকটা খুনি। ২১ অগাস্ট গ্রেনেড হামলা করে যারা আমাকে হত্যা করতে চেয়েছিল, আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল, আইভি রহমানের হত্যাকারী সেই হত্যাকারীরা আজকে সব থেকে বেশি সোচ্চার। ’
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের মানুষ মর্যাদা পায় মন্তব্য করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘বাংলাদেশ আজকে এগিয়ে যাচ্ছে, আন্তর্জাতিক মহল বলে উন্নয়নের রোল মডেল, আর আমাদের দেশের কিছু লোক আছে তারা তো ঘেউ ঘেউ করেই যাচ্ছে। এই ঘেউ ঘেউ করতে থাকুক। এতে আমাদের কিচ্ছু আসে যায় না। ’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারে থাকলে দেশের উন্নয়নের চাকাটা গতিশীল থাকবে। যারা এদেশকে খুনির রাজত্ব করেছিল, যুদ্ধাপরাধীদের রাজত্ব করেছিল, দুর্নীতির রাজত্ব করেছিল তাদের স্থান বাংলার মাটিতে হবে না। এই কথাটা স্পষ্ট জানাতে হবে এদেরকে। পাশাপাশি জণগণের অধিকার নিয়ে আমরা কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেব না। ’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত আলোচনা সবায় দলটির শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, খায়রুজ্জামান লিটন, যুগ্ম সম্পাদক দীপু মনি, হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম।