মমতার উপ-নির্বাচন ঘিরেও যুদ্ধকালীন প্রস্তুতি

মমতার উপ-নির্বাচন ঘিরেও যুদ্ধকালীন প্রস্তুতি
কলকাতা: ‘বাংলা নিজের মেয়েকেই চায়’, একুশের বিধানসভা ভোটে এই স্লোগান তুলেই ২১৩ আসন পেয়ে বাজিমাত করেছিল পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। তবে বাংলাজুড়ে তৃণমূলের হাওয়া বইলেও শুভেন্দু অধিকারীর কাছে পরাস্ত হয়েছিলেন দলের সুপ্রিমো মমতা বন্দোপাধ্যায়।অবশ্য মমতা সেবার নিজের কেন্দ্র বদল করে নন্দীগ্রামে প্রার্থী হয়েছিলেন। কিন্তু আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠেয় উপ-নির্বাচনে মমতা ফিরে এসেছেন তার নিজ কেন্দ্রে। আক্ষরিক অর্থে দক্ষিণ কলকাতার ভবানীপুর কেন্দ্র তার গড় বলা চলে। বসতবাড়ি কালীঘাট এই কেন্দ্রেরই অন্তর্গত। ফলে জন্ম থেকে এখানেই মমতার বেড়ে ওঠা। এই কেন্দ্রেরই ভোটার তিনি।
মমতার জয়ের ব্যাপারে কোন সংশয় না থাকলেও ৮টা ওয়ার্ডে নিয়ে তৈরি ভবানীপুর বিধানসভায় সকাল-বিকেল প্রচার শুরু করে দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। এমনকি, বিশেষ জনসংযোগে অংশ নিচ্ছেন প্রার্থী মমতাও। মমতার বিরুদ্ধে এবারের বিজেপি প্রার্থী আইনজীবী প্রিয়াঙ্কা টিব্রেওয়াল ও বামেদের প্রার্থী আইনজীবী শ্রীজীব বিশ্বাস। তবে প্রচারের প্রথম থেকেই বিজেপি-বামেদের চেয়ে অনেকটাই এগিয়ে মমতার দল। প্রচারে বিশেষ রণনীতিতে এগোচ্ছেন তৃণমূল নেত্রী।মূলত, ভবানীপুর বিধানসভা কেন্দ্রকে বলা হয় মিনি ইন্ডিয়া। সেখানে সব ভাষাভাষীর বাস। তাদের মধ্যে ধনী, মধ্যবিত্ত, গরিব সব প্রোফাইল এই কেন্দ্রের ভোটার। ফলে সেসব কথা চিন্তা করে শুধু বাংলা নয়, হিন্দি ও ইংরেজিতে ব্যানার, পোস্টার, দেওয়াল লিখন, লিফলেট বানানো হয়েছে। অপরদিকে যেহেতু করোনা-বিধির কারণে বড় ধরনের জমায়েত, মিছিল-সভা করা যাবে না, তাই ঠিক হয়েছে ছোট ছোট পথসভা চলবে ভবানীপুরজুড়ে। এই কেন্দ্রের ৮টি ওয়ার্ডের দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হয়েছে ৭ নেতামন্ত্রীকে। তারাই সব ধরনের প্রচার কর্মসূচির নজরে রাখছেন। সব মিলিয়ে ৫৭টি পথসভা করার কথা তৃণমূল কংগ্রেসের। ইতোমধ্যে যা শুরু হয়ে গেছে।পাশাপাশি প্রচারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে দলের নারী বিগ্রেডকে। নারী কর্মীরা প্রচারে নেমেছেন। তারা ভবানীপুরের প্রতিটা পরিবারর কাছে জানতে চাইছেন, তাদের কী কী সমস্যা আছে? মমতার সরকারের কোন কোন পরিষেবা তারা পেয়েছেন? কোনগুলো এখনো পাননি, পরিবারগুলোর চাহিদা বা প্রয়োজন কী, সবটাই জানবে এবং কাগজে কলমে নথিভূত করছেন। একইসঙ্গে তাদের সামনে নারী বিগ্রেড তুলে ধরছেন তিনবারের নারী মুখ্যমন্ত্রী মমতা কী কী কাজ করেছেন।তিন তিনবার মমতার ক্ষমতার প্রত্যাবর্তন। তা সত্ত্বেও কেন এই যুদ্ধকালীন প্রস্তুতি? কারণ, ভবানীপুর উপ নির্বাচনে জিতলেই মুখ্যমন্ত্রী পদে থাকা নিশ্চিত হবে মমতার। নন্দীগ্রামে তিনি হারায় ভবানীপুর থেকে জিতে আসতে হচ্ছে।  তথ্য বলছে, একুশের বিধানসভা নির্বাচনের সময় ভবানীপুর কেন্দ্র থেকে ২৮ হাজার ভোটে জিতেছেন বর্তমান কৃষিমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। মমতা জন্য এই কেন্দ্র থেকে পদত্যাগ দিয়ে দায়িত্ব নিয়েছেন খড়দা কেন্দ্রে। যদিও সেখানে এখই হচ্ছে না উপ-নির্বচান। তবে সে যাই হোক, হয়ে যাওয়া বিধানসভা নির্বাচনে ভবানীপুরের অন্তর্গত ৮টির মধ্যে ৬টিতেই লিড ছিল তৃণমূলের। ২টিতে লিড ছিল বিজেপির। কিন্তু ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে ৬টি ওয়ার্ডেই এগিয়ে ছিল বিজেপি। দুটিতে তৃণমূল।রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, ভবানীপুরে বড় ফ্যাক্টর অবাঙালি ভোট ব্যাংক। যা অনেকটাই লোকসভায় পেয়েছিল বিজেপি। তাহলে বিধানসভায় অন্য ফল কেন?বিশেষজ্ঞদের মতে, বিধানসভা নির্বাচনে অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষকে পছন্দই করেনি বিজেপি ভোটরারা। তবে এবার অবাঙালি ভোট ব্যাংকের কথা মাথায় রেখে বিজেপি প্রার্থী করেছেন প্রিয়াঙ্কাকে। পাশাপাশি অতি অল্প সংখ্যক ভোট হলেও আছে বামেদের। ফলে শাসক দলের সামান্য রণনীতি ভুল হলেই তীরে এসে তরী ডুবতে পারে।যদিও রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, নির্বাচন আর উপ নির্বাচন এক মাপকাঠিতে নির্ধারণ করা যায় না। ফলে মমতার জয় হওয়ার সম্ভবনা সবচেয়ে বেশি। তবে তৃণমুল এটা জানে দলের ভুলের খেসারত দিতে হবে সুপ্রিমো মমতাকে। চিরতরে হারাতে হবে মুখ্যমন্ত্রীর গদি। ফলে এ ভোটকে গুরুত্ব দিচ্ছে মমতার দল।  এ বিষয়ে বামপ্রার্থী শ্রীজীব বিশ্বাস বলেন, ‘মমতা ছাড়া ওই দলে কিছু আছে নাকি। দলে তো একটাই পোস্ট, বাকি ল্যাম্পপোস্ট। না হলে যে দলে ২১৩টা বিধায়ক আছেন সেই দলের মুখ্যমন্ত্রী নিয়ে চিন্তা করতে হয়? তারা জানে সুপ্রিমো ক্ষমতাচ্যুত হওয়া মানেই গোটা তৃণমূল দলটাই ভেঙে যাবে। তাই চলমান করোনাতেও এই যুদ্ধকালীন প্রস্তুতি। ’অপরদিকে দমতে রাজি নন বিজেপি নেত্রী প্রিয়াঙ্কা। বাড়ি বাড়ি তিনিও জোর প্রচার করছেন। বাড়ি বাড়ি ঘুরে আত্মবিশ্বাসী প্রিয়াঙ্কা বলছেন, ‘ভবানীপুরে ৭০ শতাংশ ভোটার ভোট দিতে পাড়লেই আমিই জিতব। ’ফলে এটা নিশ্চিত এই নির্বাচনের দিকে শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, তাকিয়ে রয়েছে গোটা ভারত।কারণ মোদী বিরোধীরা জানেন, ২০২৪ মোদীকে একমাত্র বেগ দিতে পারে বাংলার মমতা। তার হারা জেতার ওপর অনেকটাই নির্ভর করছে ভারতের মোদী বিরোধী জোটের ভবিষ্যত। ভোটের ফল প্রকাশ আগামী ৩ অক্টোবর।

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণের ৮ মাস না পেরোতেই ভাঙন

সিন্ডিকেটের কারনে আলুর দামের উর্ধ্বগতি