বরিশাল প্রতিনিধি : বরিশালে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় এবার বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুনিবুর রহমানের বিরুদ্ধে আদালতে পৃথক দুটি মামলার আবেদন করা হয়েছে।রোববার (২২ আগস্ট) বরিশালের অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ অভিযোগ দুটি দাখিল করা হয়।তবে এ বিষয়ে মামলার বিচারক এখনো কোনো আদেশ দেননি বলে জানিয়েছেন বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস ও বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট আফজালুল করিম।আদালতে পৃথক অভিযোগ দাখিল করেছেন বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র ও বরিশাল জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. রফিকুল ইসলাম এবং বরিশাল সিটি করপোরেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা বাবুল হালদার।অ্যাডভোকেট মো. রফিকুল ইসলামের আদালতে দাখিল করা অভিযোগে বরিশাল সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মুনিবুর রহমান, বরিশাল মেট্রোপলিটনের কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরুল ইসলাম, উপ-পরিদর্শক এসআই মো. শাহজালাল মল্লিক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দেহরক্ষী পাঁচ আনসার সদস্যসহ অজ্ঞাতনামা ৪০ থেকে ৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।অপর দিকে বিসিসির রাজস্ব কর্মকর্তা বাবুল হালদার আদালতে দাখিল করা অভিযোগে বরিশাল সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মুনিবুর রহমান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দেহরক্ষী পাঁচ আনসার সদস্যসহ অজ্ঞাতনামা ৪০ থেকে ৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।উভয় অভিযোগেই আসামিদের বিরুদ্ধে সরকারি চাকরির সুবাদে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা, ষড়যন্ত্রমূলকভাবে জনগণের জান-মালের ক্ষতি সাধন করা এবং দেশে অরাজকতা সৃষ্টির পায়তাঁরা করার অভিযোগ করা হয়েছে। পাশাপাশি আসামিদের বিরুদ্ধে সিটি করপোরেশনের মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরিনয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর সন্মান ক্ষুণ্ন করার গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থেকে বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড উল্লেখ করা হয়েছে।অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, কাউন্সিলরদের সমন্বয়ে সভার মাধ্যমে বরিশাল সিটি করপোরেশন এলাকাকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য শহরের বিভিন্ন অলিতে-গলিতে টানানো ব্যানার ফেস্টুন নামিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ শুরু করেন পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা। গত ১৮ আগস্ট রাতে পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা নগরের ২৩ নম্বর ওয়ার্ডস্থ উপজেলা নির্বাহী কার্যালয়ের বিভিন্ন ব্যানার-ফেস্টুন অপসারণকালে এক নম্বর আসামি ইউএনও মুনিবুর রহমানের নেতৃত্বে আনসার সদস্যরা এতে বাধা দেন। বিষয়টি মামলার এক নম্বর সাক্ষী বিসিসির প্রশাসনিক কর্মকর্তা স্বপন কুমার দাসের কাছ থেকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে জানতে পারেন সিটি মেয়র। পরে তিনি প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে সঙ্গে নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে উপস্থিত হন। এ সময় মেয়র নিজের পরিচয় দেওয়া সত্ত্বেও নির্বাহী কর্মকর্তা উত্তেজিত হন এবং ষড়যন্ত্রমূলকভাবে পরিকল্পনা অনুযায়ী মেয়রসহ তার সঙ্গে থাকা সবার ওপর গুলি বর্ষণ করা হয়। এ সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার হুকুমে আনসার সদস্যরা মেয়রকে খুন করার উদ্দেশ্যে তাকে লক্ষ্য করে এলোপাথাড়িভাবে শটগান দিয়ে গুলি বর্ষণ করতে থাকেন। পরে ঘটনাস্থলে উপস্থিতিরা মানবপ্রাচীর তৈরি করে মেয়রকে রক্ষা করে গাড়িতে উঠিয়ে দেন। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে সিটি করপোরেশনের স্টাফসহ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা সেখানে জড়ো হন। তখনও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আনসার সদস্যদের তাদের ওপরও গুলি বর্ষণের নির্দেশ দেন। এরপর পুলিশ এসে আওয়ামী লীগ নেতাদের বেদম লাঠিচার্জ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। গুলি বর্ষণ ও পুলিশের লাঠিচার্জে ৫০ জন গুলিবিদ্ধ, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মোটরসাইকেল ভাঙচুর ও ১০০টি মোটরসাইকেল গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে গিয়ে এক কোটি টাকার ক্ষতিসাধন করে।অভিযোগে এক নম্বর আসামি সরকারি কর্মকর্তা হয়েও দীর্ঘদিন ধরে শত্রুপক্ষের অবৈধ অর্থে প্রভাবিত হয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে মেয়রকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলিবর্ষণ করে গুরুতর অপরাধ করেছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।অপরদিকে থানায় মামলা করতে গেলে সেখানে অভিযোগ না নেওয়ায় আদালতে অভিযোগ দাখিলে বিলম্ব হয়েছে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।মামলার বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তালুকদার ইউনুস বলেন, বরিশাল সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মুনিবুর রহমানকে প্রধান অভিযুক্ত করে দুটি অভিযোগ আদালতে দায়ের করা হয়েছে। সেখানে আনসার বাহিনীসহ অন্যান্যরা আসামি রয়েছেন। মামলা দুটির বাদীর জবানবন্দি নিয়েছে আদালত এখন অভিযোগ দুটিই আদেশের অপেক্ষায়।
তিনি বলেন, প্রশাসন ও আওয়ামী লীগ মুখোমুখি হবে না। দেশ পরিচালনা করেন প্রধানমন্ত্রী আর তার সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করে রাষ্ট্রের কর্মচারীরা। তাদের কাজ তারা করবে। আমাদের এখানে যে ঘটনা ঘটেছে, আমরা আশা করি শতভাগ ন্যায় বিচার পাবো। মুখোমুখি হওয়ার কোনো কারণ নেই।