ভাঙন ঝুঁকিতে চাঁদপুরের শিলাচর গ্রামের ২০০ পরিবার

ভাঙন ঝুঁকিতে চাঁদপুরের শিলাচর গ্রামের ২০০ পরিবার
চাঁদপুর প্রতিনিধি : পদ্মানদীর পানি বৃদ্ধি পেলেই ভাঙন শুরু হয় চাঁদপুর সদর উপজেলার রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নের শিলাচর এলাকায়।  গত কয়েকদিনের ভাঙনে বহু পরিবার বসতভিটা ও ফসলি জমি হারিয়েছে।এখন হুমকির মুখে আছে বলাশিয়া গুচ্ছ গ্রামসহ শিলাচরের দুই শতাধিক পরিবার। আতঙ্কের মধ্যেই দিন-রাত অতিবাহিত করছেন ওই এলাকার লোকজন।  ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য স্থানীয় চেয়ারম্যান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) মাধ্যমে জেলা প্রশাসক ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীকে জাানিয়েছেন।স্থানীয়রা জানান, ২০২০ সালেও বড় ধরনের ভাঙনের মুখে পড়ে শিলারচর এলাকাটি। তখন ওমর আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের একটি নতুন তিনতলা ভবন পদ্মায় বিলীন হয়ে যায়। একই সঙ্গে বসতবাড়ি হারায় শতাধিক পরিবার। বর্তমানে প্রায় দুই শতাধিক পরিবার এ এলাকায় বসবাস করছে।সরেজমিন দেখা যায়, কয়েকটি পরিবার তাদের ঘরবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন, কেটে নিচ্ছেন জমির গাছপালা। কেউ কেউ একাধিকবার নদী ভাঙনের শিকার হয়েছেন।ভাঙনের শিকার শুক্কুর ডালীসহ বেশ কয়েকজন জানান, অন্য কোথাও জায়গাজমি না থাকায় আপাতত অন্যের জায়গায় আশ্রয় নিচ্ছেন তিনি। নদীতে পানি বৃদ্ধি পেলে ভাঙন বেড়ে যায়। তাই নদী ভাঙন রোধের স্থায়ী একটা ব্যবস্থা চান তারা।ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত আবু হানিফ প্রধানিয়া  বলেন, আগেও নদীতে বাড়ি ভাঙছে। আবার গাঙে পানি বাইড়া বাড়ি ভাইঙা গেল। দু’দিন হইলো অন্যের জায়গায় ঘর তুলছি।স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য আলী আহমদ বলেন, পদ্মা নদীর ভাঙনে ইউনিয়নের ছয়টি ওয়ার্ডই নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার পথে। নদীর স্রোত এবং অপরিকল্পিতভাবে ড্রেজিং করার কারণে আমরা ভাঙন হুমকিতে আছি। সরকার যদি দ্রুত ব্যবস্থা না নেয়, আমরা কোথায় আশ্রয় নেব?রাজরাজেশ্বর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হযরত আলী বেপারী  বলেন, আমাদের ৩৮ বর্গকিলোমিটার রাজরাজেশ্বরী ইউনিয়নের শিলাচর গ্রামের ২০০ পরিবারের বসতভিটা এরই মধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। গত কয়েকদিন দু’টি কবরস্থান, দু’টি মসজিদ, একটি ঈদগা ও একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ভাঙন হুমকিতে বলাশিয়া গুচ্ছ গ্রাম। সেখানে শত পরিবারের বসবাস। বিষয়টি আমি লিখিতভাবে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানিয়েছি।চাঁদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সানজিদা শাহনাজ  বলেন, আমরা ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেছি। বিষয়টি আমাকে চেয়ারম্যান লিখিতভাবে জানিয়েছেন। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলেছেন। স্থানটি তিন নদীর মোহনা এবং ভাঙন প্রতিরোধ টেকনিক্যাল বিষয় হওয়ায় আমি বেশি কিছু বলতে পারছি না। চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম রেফাত জামিল  বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কারিগরি কমিটি পদ্মার ভাঙনসহ তিন নদীর মোহনা রক্ষায় ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে স্টাডি করেছে। তাদের রিপোর্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। এখন তাদের স্টাডির বিষয়টি যাচাই বাছাই করার জন্য আমাদের ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং (আইডাব্লিউএম) খুব শিগগিরই সার্ভে করতে আসবে।  তিনি আরো বলেন, কারিগরি কমিটিসহ ভাঙন প্রতিরোধ নিয়ে যারা কাজ করছেন, তাদের সঙ্গে কথা বলে এবং সঙ্গে থেকে আমি বুঝতে পেরেছি, ইচ্ছে করলেই হঠাৎ পদ্মার ওই অংশের ভাঙন প্রতিরোধ করা যাবে না। কারণ ওখানে প্রতিরোধ করলে, তার প্রভাব চাঁদপুর শহরের মোলহেডে এসে পড়বে। এছাড়া এর আগে চাঁদপুর শহরের বিপরীতের চরগুলো অপসারণ করতে হবে।

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

দুর্ঘটনার আশঙ্কায় জনমনে উদ্বগে বীরগঞ্জের সড়কগুলো দাপিয়ে বড়োচ্ছে কিশোর চালকরা

সন্দ্বীপে কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনা উদ্বোধন