চির নিদ্রায় ডাঃ নূর মোহাম্মদ

চির নিদ্রায় ডাঃ নূর মোহাম্মদ

মোস্তাকিম ফারুকী : যথাযোগ্য মর্যাদায় মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক কেরানীগঞ্জ উপজেলার তেঘরিয়া ইউনিয়নের বাঘৈর গ্রামের বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ নূর মোহাম্মদের জানাযা গতকাল সোমবার সম্পন্ন হয়েছে। বীর মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ নূর মোহাম্মদ কেরানীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান ও দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগের আহ্বায়ক শাহীন আহমেদের পিতা।
গত রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় ভারতের নয়া দিল্লির মেডেন্টা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন।
গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৯ টায় বাঘৈর ঈদগাহ ময়দানে প্রথম জানাযা এবং সকাল ১০ টায় উপজেলার তেঘরিয়া ইউনিয়নের বেয়ারা এলাকায় প্রস্তাবিত অধ্যাপক হামিদুর রহমান স্টেডিয়ামে তার দ্বিতীয় নামাজে জানাযা সম্পন্ন হয়েছে।
জানাযার, আগে কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অমিত দেবনাথ ও দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানারভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ এই বীরের প্রতি গার্ড অব অর্নার প্রদান করেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী ঢাকা-৩ আসনের সংসদ সদস্য নসরুল হামিদ বিপু।
কেরানীগঞ্জ উপজেলার চেয়ারম্যান মরহুমের ছেলে শাহীন আহমেদ বলেন, আমার বাবা জীবনে কখনো অভিমান করেনি, কারো অমঙ্গল কামনা করেনি। মানুষের বিপদের সংবাদ শুনার পর কখনো যাকে থামিয়ে রাখা যেত না, তিনি হচ্ছেন আমার বাবা। গত কয়েকদিন আগে পাশের গ্রামের কিছু মানুষ পারিবারিক কলহের জের ধরে অসুস্থ হয়ে পড়ে। রাত ১টায় বাবা সেই সংবাদ শুনে সেখানে চলে যাচ্ছিল। আমি নিষেধ করছিলাম, এত রাতে যেতে হবে না। কিন্তু উনাকে থামানো যায়নি। বলল আমি না গেলে হয়ত অনেক প্রাণ বিনা চিকিৎসায় ঝরে যেতে পারে। একজন ডাক্তার হিসেবে তাদের চিকিৎসা সেবার জন্য হলেও আমার যাওয়া উচিৎ। অথচ সেই সময়ে উনার শারীরিক অবস্থা খুব সুস্থ ছিল না। নিজে অসুস্থ থাকা সত্ত্বেও অন্যের বিপদে কখনো পিছপা হয় নি। আমার বাবা চলার পথে কারো সাথে যদি কোন মনমালিন্য থাকে তবে বাবার পক্ষ থেকে আমি ক্ষমা চাই, কারো সাথে যদি কোন লেনদেন থাকে আমাকে জানাবেন, আমি তা পরিশোধ করে দিব। আমার বাবার জন্য সবাই দোয়া করবেন। আমাদের জন্য দোয়া করবেন। আমরা চার ভাই, আমরা যেন বাবার আদর্শ নিয়ে বাকিটা জীবন কাটাতে পারি। আমরা আপনাদের সেবায় কাজ করতে চাই, কেরানীগঞ্জের মানুষের জন্য কাজ করতে চাই।
জানাযা শেষে ঢাকা-২ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক খাদ্যমন্ত্রী এডভোকেট কামরুল ইসলামের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধাঞ্জলি দেওয়া হয়। পর্যায়ক্রমে কেরানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, সেচ্চাসেবকলীগ, ছাত্রলীগ, কেরানীগঞ্জ টেলিভিশন জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ ঔষধ ব্যবসায়ী সমিতি, ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগ, ৯টি ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর শাহ্ খুশী, বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষ থেকে শ্রদ্ধাঞ্জলি দেওয়া হয়। শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ শেষে তার লাশ দাফনের উদ্দেশ্যে গ্রামের বাড়ী লক্ষিপুর জেলার রামগঞ্জে নিয়ে যাওয়া হয়।
জানাযার আগে ঐতিহ্যবাহী ডাক্তার বাড়ি থেকে লাশ বের করা হলে শত শত মানুষ কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। পথে পথে অগণিত মানুষ ফুল দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের এই বীরের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানান। বাঘৈর আলিয়াপাড়া ঈদগাহ মাঠে জানাযায়, শত শত মানুষ অংশ গ্রহণ করে। পরে সকাল ১১ টায় লাশ নিয়ে যাওয়া হয় ক্রিকেট স্টেডিয়াম মাঠে। সেখানে, লাখো জনতার ভিড় নামে। স্টেডিয়াম পরিপূর্ণ হয়ে নামাজের সারি ছড়িয়ে পড়ে রাস্তায়। শত শত গাড়ির চাপে পুলিশ প্রশাসনকে বেগতিক অবস্থায় পড়তে হয়। জানাযা শেষে বীর মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ নুর মোহাম্মদের লাশ তার গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে রওয়ানা হয়। এ সময় শতাধিক গাড়ি বহর ছুটে চলে লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সের পিছনে। শোকার্ত মানুষ হাত নেড়ে ফুল আর চোখের জলে একাত্তরের এই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে শেষ বিদায় জানান।

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

বাংলাদেশি কর্মীদের বেতন না দিয়ে শাস্তির মুখে মালয়েশিয়ান কোম্পানি

বিশ্বকাপ খেলতে যুক্তরাষ্ট্রের পথে বাংলাদেশ দল