এবারের বিধানসভা নির্বাচনে ভোট হয়েছিল ২৯২টি আসনে। জঙ্গিপুর ও সামশেরগঞ্জের বামপ্রার্থী করোনায় প্রাণ হারান। পাশাপাশি শান্তিপুর এবং দিনহাটা কেন্দ্রে বিজেপির দুই সংসদ সদস্য জগন্নাথ সরকার ও নিশীথ প্রামাণিক ইতোমধ্যেই জয়ী হয়েও বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে এমপি পদে ফিরে গেছেন। এছাড়া ভোট মিটে যাওয়ার পর করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যান খড়দহের জয়ী তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী কাজল সিনহা। সম্প্রতি মৃত্যু হয়েছে গোসাবার বিধায়ক জয়ন্ত নস্করের।
পাশাপাশি এবারের বিধানসভা ভোটে ভবানীপুর কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের টিকিটে জয়ী হয়েছিলেন রাজ্যের বর্তমান কৃষিমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। অন্যদিকে, সাংবিধানিক নিয়ম অনুযায়ী নন্দীগ্রামে পরাজিত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কোনো একটি কেন্দ্র থেকে জিতে আসতে হবে। সে কারণেই, শোভনদেব কিছুদিন আগেই ভবানীপুর আসন থেকে বিধায়ক পদে ইস্তফা দিয়েছেন। ফলে তৃণমূল সুপ্রিমো ফের একবার ভবানীপুর কেন্দ্র থেকে প্রার্থী হতে চলেছেন। স্বভাবতই এই কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা-কর্মীদের রক্তচাপ বাড়তে শুরু করেছে। তাদের কাছে এখন বড় চ্যালেঞ্জ দিদিকে রেকর্ড ভোটে জিতিয়ে আনা।
জাতীয় নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, ভবানীপুরের পাশাপাশি বাকি ছয়টি কেন্দ্রের নির্বাচন অফিসেও ভোটের ব্যস্ততা শুরু হয়ে গেছে। তবে সবার নজর রয়েছে দক্ষিণ কলকাতার ভবানীপুর কেন্দ্রের উপনির্বাচনের দিকে। ২০১১ সালে মমতা বন্দোপাধ্যায় প্রথমবার মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসলেও সেই সময়ও তিনি বিধায়ক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি। পরে সুব্রত বক্সি ভবানীপুর কেন্দ্রের বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দিলে ছয় মাসের মধ্যে উপনির্বাচনে জিতে আসেন মমতা। এরপর ২০১৬ সালেও তিনি এই কেন্দ্র থেকেই জিতে দ্বিতীয়বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারের দায়িত্ব নেন। এবারই মমতা কেন্দ্র বদল করে নন্দীগ্রাম থেকে ভোটে লড়েছিলেন। হারতে হয় বিজেপি প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারীর কাছে। ফলে আরও একবার ভবানীপুরেকেই বেছে নিয়েছেন মমতা।
২৫ জুন বাকি থাকা সাতটি আসনে দ্রুত উপনির্বাচন সেরে ফেলার আর্জি জানিয়ে নির্বাচন কমিশনের কাছে চিঠি দিয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস। নবান্ন সুত্রে জানা যায়, শুক্রবার (২ জুলাই) বিকেলে সেই বিষয়ে সম্মতি জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এরপরই ভবানীপুর বিধানসভা কেন্দ্রের জন্য তৎপরতা শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন। আগামী বুধবার (৭ জুলাই) অবধি চলবে সেই কর্মসূচি।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ভবানীপুর বিধানসভা কেন্দ্রের জন্য প্রায় চারশো ইভিএম বরাদ্দ করা হয়েছে। সেই ইভিএম চেকিংয়ের কাজও শুরু হয়েছে। রাজনৈতিকমহল মনে করছেন আগামী সেপ্টম্বর মাসেই রাজ্যে সাত আসনে নির্বাচন হতে চলেছে।
ফলে ফের একবার সবার চোখ থাকবে মমতার কেন্দ্রের দিকে। কারণ, এ কেন্দ্র থেকে তৃণমূল সুপ্রিমো আবারও পরাজিত হলে ছাড়তে হবে মুখ্যমন্ত্রীর আসন। অপরদিকে, বিনাদ্বন্দ্বে মমতাকে একচুল জমি ছেড়ে দেবে না বিজেপি, তা সবাই বুঝছেন। ইতোমধ্যে আবার রাজ্য কংগ্রেস সভাপতি অধীরঞ্জন চৌধুরী জানিয়েছেন, মমতার বিপক্ষে তাদের কোনো প্রার্থী থাকবে না। তবে এ নিয়ে তাদের দলের অন্দরেই বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে। কারণ, ভবনীপুর কেন্দ্রর কংগ্রেস নেতারা এটা মানছে না বলেও জানিয়ে দিয়েছে। ফলে মমতার প্রার্থী হওয়া কেন্দ্রে মেঘের রঙ যে আরও একবার গাঢ়ো কালো হতে যাচ্ছে, তা নিঃসন্দেহে বলা যেতে পারে। তবে রাজনৈতিক বিশেজ্ঞরা জয়ী হওয়ার ক্ষেত্রে অনেখানি এগিয়ে রেখেছেন মমতাকেই।