চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিভাসু) অ্যানাটমি মিউজিয়ামের সামনে স্থাপিত সেই জিরাফের কঙ্কালটি উদ্বোধন করা হয়েছে। এছাড়া সিভাসু’র ৭ জন শিক্ষককে সেরা গবেষণা পুরস্কার প্রদান করা হয়।শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন শনিবার (২৬ জুন) অনলাইনে যুক্ত থেকে কঙ্কাল উদ্বোধন ও গবেষণা পুরস্কার প্রদান করেন।
এ আয়োজনে প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন সিভাসু’র উপাচার্য প্রফেসর ড. গৌতম বুদ্ধ দাশ। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মোহাম্মদ নূরুল আবছার খান ও ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন। অতিথি ছিলেন চ্যানেল আই’র বিশেষ প্রতিনিধি মোস্তফা মল্লিক। সভাপতিত্ব করেন সিভাসু’র পরিচালক (গবেষণা ও সম্প্রসারণ) প্রফেসর ড. মো. আশরাফ আলি বিশ্বাস। প্রধান অতিথি মো. মাহবুব হোসেন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল কাজ হচ্ছে গবেষণার মাধ্যমে নতুন নতুন জ্ঞান সৃষ্টি এবং সে জ্ঞানকে সমাজে ছড়িয়ে দেওয়া। সিভাসু তার কার্যক্রম শুধু গবেষণা এবং জ্ঞান সৃষ্টির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেনি। সমাজের এবং রাষ্ট্রের প্রয়োজনে কিভাবে ভূমিকা রাখতে হয়- করোনা অতিমারির সময়ে সিভাসু সে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। তিনি আরও বলেন, করোনা শনাক্তকরণ ল্যাব স্থাপন এবং বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজে আরটি-পিসিআর প্রদানের মাধ্যমে করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে সিভাসু যেভাবে এগিয়ে এসেছে, তা প্রশংসনীয়। করোনাকালীন সময়ে জনস্বার্থে সিভাসু যে ভূমিকা রেখে চলেছে, তা জাতি সবসময় স্মরণে রাখবে। সিভাসু এ ধরনের কার্যক্রম আগামিতেও চলমান রাখবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। শিক্ষা সচিব বলেন, নিয়মিত গবেষণা বরাদ্দের বাইরে করোনাসহ উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলায় পরিচালিত গবেষণা কর্মকাণ্ডে অর্থ বরাদ্দ দিতে সরকার সবসময় প্রস্তুত রয়েছে। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও গবেষকদের পুরস্কার প্রদান করা হয়। সেরা গবেষণা পুরস্কার পেয়েছেন মেরিন বায়োরিসোর্স সাইন্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মো. আসাদুজ্জামান, মেডিসিন ও সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মো. আহাদুজ্জামান, ফিশ বায়োলজি অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর, ফিজিওলজি, বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড ফার্মাকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাহমুদুল হাসান, ডেইরি ও পোল্ট্রি সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. এ কে এম হুমায়ুন কবির, প্যাথলজি ও প্যারাসাইটোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. আবদুল আলীম, অ্যাপ্লাইড কেমিস্ট্রি অ্যান্ড কেমিক্যাল টেকনোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শামসুল মোর্শেদ। এছাড়া মৌখিক উপস্থাপনায় ৪ জন এবং পোস্টার উপস্থাপনায় ৩ জন শিক্ষককে পুরস্কৃত করা হয়। অনুষ্ঠানে সিভাসু’র ৪ জন গবেষককে গবেষণা প্রকাশনা অনুদান প্রদান করা হয়। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মীর্জা ফারুক ইমামসহ বিভিন্ন দফতরের পরিচালক, বিভাগীয় প্রধান, দফতর প্রধান ও শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন।সিভাসু উপাচার্য ড. গৌতম বুদ্ধ দাশের সহযোগিতায় দেশের প্রথম কঙ্কাল জাদুঘর গড়ে তোলা হয় সিভাসুতে। এই জাদুঘরের প্রবেশপথে বসানো হয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানা থেকে সংগ্রহ করা জিরাফের কঙ্কাল। ২০১৯ সালে মারা যাওয়া জিরাফটির অস্থি ছয় মাস পর কবর থেকে তুলে বিশেষ ব্যবস্থায় চট্টগ্রামে এনে বিভিন্ন রাসায়নিক মিশিয়ে অ্যানাটমি বিভাগে সংরক্ষণ করা হয়। এরপর প্রতিটি অস্থি প্রায় দেড় বছর ধরে জোড়া দিয়ে জিরাফের অবয়ব ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। কঙ্কাল আনা থেকে সংরক্ষণ ও জোড়া লাগাতে খরচ হয়েছে আড়াই লাখ টাকা। অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া পৃথিবীর আর কোনও দেশে জিরাফের কঙ্কাল নেই। ৩য় কঙ্কালটি স্থাপিত হয়েছে সিভাসুতে।