কিশোর গ্যাং ‘ডেয়ারিং কোম্পানির’ নেতৃত্বে লন্ডনফেরত রাজিব

কিশোর গ্যাং ‘ডেয়ারিং কোম্পানির’ নেতৃত্বে লন্ডনফেরত রাজিব
নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীর উত্তরা ও গাজীপুরের টঙ্গী এলাকায় আধিপত্য ও ক্ষমতা বিস্তার করে আসছিলো কিশোর গ্যাং ‘ডেয়ারিং কোম্পানি’ বা ‘ডি কোম্পানি’র সদস্যরা। ছিনতাই, মাদকের কারবার, মারামারিসহ বিভিন্ন অপকর্ম করতে এই গ্রুপে রয়েছে ৫০ জনেরও বেশি সদস্য।ডেয়ারিং কোম্পানির নের্তৃত্বে প্রত্যক্ষভাবে ছিলেন গ্রেফতার হওয়া রাজিব চৌধুরী বাপ্পি ওরফে লন্ডন বাপ্পি (৩৫)। ফেসবুক মেসেঞ্জারে ‘ডেয়ারিং কোম্পানি’ নামে একটি গ্রুপ খুলে সেখানে তার গ্যাংয়ের সদস্যদের নির্দেশনা দিতেন তিনি। এই গ্রুপের সদস্যদের মাধ্যমে গত ৫ বছর ধরে উত্তরা-টঙ্গীতে আধিপত্য বিস্তার ও নানা অপরাধ কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছিলেন ‘লন্ডন বাপ্পি’। আর এই কাজে তার ছোট ভাই পাপ্পু তাকে সহযোগীতা করতেন বলে জানিয়েছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)।  রোববার (০৬ জুন) বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।  গত ৫ জুন রাতভর রাজধানীর উত্তরা ও  টঙ্গী এলাকার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ডেয়ারিং কোম্পানি (ডি কোম্পানি) নামে কিশোর গ্যাং গ্রুপের পৃষ্ঠপোষক রাজিব চৌধুরী বাপ্পি ওরফে লন্ডন বাপ্পি (৩৫) ও মাঠ পর্যায়ে নেতৃত্ব দানকারী মইন আহমেদ নীরব ওরফে ডন নীরব (২৪) সহ মোট ১২ জনকে গ্রেফতার করে র‍্যাব-১।  গ্রেফতার অন্য সদস্যরা হলো- মো. তানভীর হোসেন ওরফে ব্যাটারি তানভীর (২৪), মো. পারভেজ ওরফে ছোট পারভেজ (১৯), মো. তুহিন ওরফে তারকাটা তুহিন (২১), মো. রাজিব আহমেদ নীরব ওরফে টম নীরব (৩০), মো. সাইফুল ইসলাম শাওন (২৩), মো.. রবিউল হাসান (২০), মো. শাকিল ওরফে বাঘা শাকিল (২৮), মো. ইয়াছিন আরাফাত ওরফে বিস্কুট ইয়াছিন (১৮), মো. মাহফুজুর রহমান ফাহিম (২২), ইয়াছিন মিয়া ওরফে প্রিন্স ইয়াছিন (১৯)।  অভিযানে তাদের কাছ থেকে ১২টি মোবাইল ফোন এবং নগদ ৬ হাজার ১৩০ টাকা উদ্ধার করা হয়।  র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গ্রেফতার আসামিদের দেওয়া তথ্যমতে টঙ্গীর পূর্ব আরিচপুরে লন্ডন বাপ্পির আস্তানাসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ২টি বিদেশি পিস্তল, ২টি চাপাতি, ২টি রামদা, ৩টি লোহার রড এবং ১টি ছুরি উদ্ধার করে র‍্যা-১।  তিনি বলেন, গত ১ জুন গাজীপুরের টঙ্গী পূর্ব আরিচপুর এলাকায় একটি ফুচকার দোকানে বসা নিয়ে মারামারির ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় সেখানে বসে থাকা তুহিন ও তুষার নামে দুই যুবককে এলোপাথাড়ি ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ডেয়ারিং কোম্পানির গ্যাং গ্রুপের দুই সদস্য গুরুতর জখম করে। পরে এই ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে ৩ জুন রাতে একই এলাকার টেইলার্সের দোকানসহ বিভিন্ন বাড়িতে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায় তারা। এতে ওই দোকানের মালিক রূপালী, তার স্বামী আরজু মিয়ার পাশাপাশি সুজন মিয়া নামের একজনকে কুপিয়ে জখম করে তারা। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীরা টঙ্গী পূর্ব থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।  এই ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। র‍্যাব-১ এই ঘটনার ছায়া তদন্ত করে দুর্ধর্ষ কিশোর গ্যাং গ্রুপ ‘ডেয়ারিং কোম্পানির’ পৃষ্ঠপোষক ও লিডার নীরবসহ ১২ জনকে গ্রেফতার করে।  এই গ্রুপটি উত্তরা ও টঙ্গী এলাকায় ছিনতাই, চুরি, মারামারি, মাদকের কারবারসহ বিভিন্ন অপরাধ করে আসছিলো।কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গ্রেফতার আসামিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ও তদন্তে আমরা জানতে পেরেছি, ডেয়ারিং গ্রুপে অন্তত ৫০ জন সদস্য রয়েছে। তাদের সবাইকে প্রতি সপ্তাহে পৃষ্ঠোপোষক লন্ডন বাপ্পি জনপ্রতি ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা করে দিতেন। এছাড়াও নানা ধরনের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বাপ্পির মাসিক আয় ২ থেকে ৩ লাখ টাকা রয়েছে বলে জানতে পেরেছি।  তিনি বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তারা ডি কোম্পানি ওরফে ডেয়ারিং কোম্পানি কিশোর গ্যাং গ্রুপের সক্রিয় সদস্য। তারা এলাকায় মাদক সেবন, স্কুল-কলেজে বুলিং, র‍্যাগিং, ইভটিজিং, ছিনতাই, চাঁদাবাজি-ডাকাতি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অশ্লীল ভিডিও শেয়ারসহ নানাবিধ অনৈতিক কাজে লিপ্ত থাকার বিষয়ে স্বীকার করে। এছাড়াও তারা টঙ্গীতে সংঘটিত দুটি সংঘর্ষের ঘটনায় জড়িত থাকার কথাও স্বীকার করেছে।  তিনি বলেন, গ্রেফতার আসামিরা গ্রুপের অনেক সদস্যদের নাম-পরিচয় বলেছে। আমরা তাদের গ্রেফতারে অভিযান চালাচ্ছি। পাশাপাশি এই গ্রুপের সব সদস্যদের ওপর র‍্যাবের গোয়েন্দাদের নজরদারি রয়েছে।  তিনি বলেন, আমরা তথ্য পেয়েছি রাজিব চোধুরী বাপ্পি ওরফে লন্ডন বাপ্পির ছোট ভাই পাপ্পুর নামেও মামলা রয়েছে। সম্প্রতি একটি মারামারির ঘটনায় সেও কারাগারে রয়েছে। এছাড়াও গ্রেফতার আসামিদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে একাধিক মামলাও রয়েছে।  গ্রেফতার আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানান তিনি।  কে এই বাপ্পি?মো. রাজিব চৌধুরী বাপ্পি ওরফে লন্ডন বাপ্পি (৩৫) টঙ্গীর পূর্ব আরিচপুরে কিশোর গ্যাং গ্রুপ ডেয়ারিং গ্রুপের পৃষ্ঠপোষক। বাপ্পির গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীতে। টঙ্গীতে তিনি তার নানা বাড়িতে  (লন্ডন হাউজ) বসবাস করেন। তিনি দুই বছর লন্ডনে পড়াশোনা করেছেন। ২০১৩ সালে পড়াশোনা শেষে লন্ডন থেকে বাংলাদেশে ফিরে আসেন বাপ্পি। এরপর এলাকায় আধিপত্য ও ক্ষমতা বিস্তারের জন্য টঙ্গীর পূর্ব আরিচপুরে ডেয়ারিং কোম্পানি নামে একটি কিশোর গ্যাং গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করেন। এই গ্যাং পরিচলনা করতে বাপ্পি ফেসবুক মেসেঞ্জারে একটি গ্রুপ খোলেন। মেসেঞ্জারের মাধ্যমে তিনি মূলত এই গ্রুপটি পরিচালনা করে আসছিল। গ্রুপের একটি লোগো তৈরি করেন।  কিশোর গ্যাংয়ে জড়িত হওয়ার কারণ হিসেবে বাপ্পির পারিবারিক সমস্যার কথা জানা যায়। ২০০৭ সালে বাপ্পির মায়ের মৃত্যুর পর তার বাবা পুনরায় বিয়ে করেন। এরপর থেকে বাপ্পি তার নানার বাড়িতে বসবাস শুরু করতেন।  কমান্ডার খন্দকার আল মামুন বলেন, বর্তমান সময়ে কিশোর গ্যাং তথা গ্যাং কালচার এবং উঠতি বয়সী ছেলেদের মাঝে ক্ষমতা বিস্তারকে কেন্দ্র করে এক গ্রুপের সঙ্গে অন্য গ্রুপের মারামারি করা বহুল আলোচিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। গ্যাং সদস্যরা এলাকায় নিজেদের অস্তিত্ব জাহির করকে নানা ধরনের অপরাধ সংঘটিত করছে।  তিনি বলেন, এ বিষয়ে সন্তানদের ওপর বাবা-মাসহ পরিবাবের সদস্যদের নজরদারী খুর জরুরি। সন্তান কাদের সঙ্গে মেলামেশা করছে, ফেসবুক বা ইন্টারনেটে কোন গ্রুপের সঙ্গে জড়িত সেসবের ওপর নজরদারি করা প্রয়োজন। নয়তো ছোটোখাটো বিষয় নিয়ে সাধারণ মানুষের উপর চড়াও হয়ে মারামারি-খুনোখুনি করে কিশোর বয়সেই অপরাধী হয়ে উঠতে পারে।

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

দুর্ঘটনার আশঙ্কায় জনমনে উদ্বগে বীরগঞ্জের সড়কগুলো দাপিয়ে বড়োচ্ছে কিশোর চালকরা

সন্দ্বীপে কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনা উদ্বোধন