নিজস্ব প্রতিবেদক : ‘লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি ও কমলনগর উপজেলাধীন বড়খেরী ও লুধুয়াবাজার এবং কাদের পন্ডিতের হাটের ৩১ কিলোমিটার এলাকা ভাঙন থেকে রক্ষাকল্পে মেঘনা নদীর তীর সংরক্ষণ’ শীর্ষক প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার (১ জুন) প্রকল্পটি অনুমোদন পাওয়ার পর মেঘনা তীরবর্তী লক্ষ্মীপুর জেলার কমলনগর ও রামগতির মানুষের মধ্যে আনন্দ ও উচ্ছ্বাস বিরাজ করছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে স্থানীয়রা প্রধানমন্ত্রী, একনেকে কমিটির সদস্য ও স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছেন।একনেকে এ বিলটি অনুমোদনের পর স্থানীয়রা যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছেন। আনন্দ উচ্ছ্বাস প্রকাশের পাশাপাশি তাদের কাছ থেকে একটি দাবি উঠে এসেছে, এ প্রকল্পটি যেন সেনাবাহিনীকে দিয়ে বাস্তবায়ন করা হয়। অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে যদি এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়, তাহলে স্থানীয়দের কান্না থামবে না বরং বার বার বাঁধের ধসের ফলে ভোগান্তি বাড়বে। কারণ এ ধরনের অভিজ্ঞতা স্থানীয়দের আছে।
লক্ষ্মীপুরের বিশিষ্টজনরা মনে করছেন, ৩ হাজার ৮৯ কোটি ৯৬ লাখ ৯৯ হাজার টাকা বরাদ্দের এ প্রকল্পটি লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি ও কমলনগর উপজেলার প্রায় ৭ লাখ মানুষ, ১৩ লাখ ৯৯ হাজার ২২০ কোটি টাকার বিভিন্ন অবকাঠামো রক্ষাসহ প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর এলাকা পরিবেশগত উন্নয়নের মাধ্যমে জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের প্রশ্ন। বৃহৎ জনগোষ্ঠীর স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রকল্পটি যেন সেনাবাহিনীকে দিয়ে বাস্তবায়ন করানো হয়।স্থানীয়রা জানান, মেঘনার অব্যাহত ভাঙন থেকে রামগতির আলেকজান্ডার বাজার এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রক্ষায় ২০১৪ সালে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে ১৯৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। এতে আলেকজান্ডার বাজার রক্ষায় প্রায় তিন কিলোমিটার কাজ করে সেনাবাহিনী। একই বরাদ্দের অংশ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি কমলনগরের মাতাব্বরহাট এলাকায় এক কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করে। মাতাব্বরহাটের এক কিলোমিটার বাঁধে অনিয়ম হওয়ায় এক বছরে অন্তত ১০ বার ধস নামে। আর সে কারণেই এ দুই উপজেলার মানুষ চায় কাজ সেনাবাহিনীকে দিয়েই হোক। এ ব্যাপারে কথা হয় স্থানীয় সংসদ সদস্য (এমপি) মেজর (অব.) আব্দুল মান্নানের সঙ্গে।তিনি বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবো, আশা করছি সেনাবাহিনীর মাধ্যমে কাজটি বাস্তবায়ন হবে। সেনাবাহিনী ছাড়া কাজটি টেকসই এবং দ্রুত সময়ে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না।
তিনি আরো বলেন, এ প্রকল্পটি লক্ষ্মীপুরের দুই উপজেলার মানুষের প্রাণের দাবি ছিলো তাই এ প্রকল্পটি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বাস্তবায়ন করা হবে। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া উপ-কমিটির সদস্য আবদুজ্জাহের সাজু বলেন, রামগতি ও কমলনগরবাসীর প্রাণের দাবি এবং তাদের সঙ্গে আমার ও একটা দীর্ঘদিনের দাবি সেনাবাহিনী দিয়ে নদীতীর রক্ষা বাঁধের কাজটি করা হোক। বাঁধটি সেনাবাহিনী দিয়ে করলে টেকসই ও মজবুত হবে। আমাদের এমপি সাহেব আমার সঙ্গে একমত হয়েছেন এবং আশা করি স্থানীয়রাও আমার সঙ্গে একমত হবেন, সবাই দোয়া করবেন।সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) লক্ষ্মীপুর জেলা শাখার সম্পাদক সভাপতি মাসুদুল হক ভূট্টো বলেন, সাধারণ ঠিকাদারদের দিয়ে কাজ করালে কাজের গুণগত মান ঠিক থাকে না। সে অভিজ্ঞতা লক্ষ্মীপুরের মানুষের আছে। অপরদিকে সেনাবাহিনী দিয়ে কাজ করালে কাজের মানের ব্যাপারে কোনো প্রশ্ন উঠে না। এর আগেও রামগতি আলেকজেন্ডারে ৪ কিলোমিটার বাঁধ সেনাবাহিনী নির্মাণ করেছিলো। সে কাজ প্রশংসা কুঁড়িয়েছে। তাই স্থানীয়রা চায় এ কাজটিও যেন সেনাবাহিনীকে দিয়ে করানো হয়। লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ফারুক আহমেদ বলেন, কাজ সেনাবাহিনী করুক আর অন্য কোন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান করুক পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোয়ালিটি কন্ট্রোল ট্রান্সফোর্স মান নিয়ন্ত্রণ করবে। সেনাবাহিনী করলে কাজ অনেক ওয়েল অর্গানাইজড হয় এটা ঠিক আছে। তবে কাজ কি সেনাবাহিনী করবে না কোন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান করবে, এটি নির্ধারণ করবে নীতি নির্ধারণী মহল। লক্ষ্মীপুর কমলনগর-রামগতি বাঁচাও মঞ্চের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আবদুস সাত্তার পালোয়ান বলেন, লক্ষ্মীপুরবাসীর প্রাণের দাবি প্রকল্পটি যেন সেনাবাহিনীকে দিয়ে করানো হয়। অন্য কোন ঠিকাদার দিয়ে যদি কাজটি করা হয় তাহলে এখানে লুটপাট হবে। যার সুবিধা নদী তীরবর্তী ভাঙনকবলিত মানুষেরা পাবে না, সুবিধা পাবে স্থানীয় দুর্নীতিবাজ নেতারা। এ প্রকল্পটি যদি সেনাবাহিনীকে দিয়ে বাস্তবায়ন করা না হয় তাহলে লক্ষ্মীপুরের কমলনগর ও রামগতি উপজেলা মেঘনার গর্ভে চলে যাবে।
গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা ভাইরাসে আরো ৩২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৪ হাজার ৯১৩ জন। এ ছাড়া দেশে নতুন করে আরো ১ হাজার ৫৬৭ জনের দেহে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে দেশে মোট শনাক্তের সংখ্যা ৩ লাখ ৪৭ হাজার ৩৭২ জন। ২৪ ঘণ্টায় ১৩ হাজার ১৭০ জনের নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। শনিবার দুপুরে করোনা ভাইরাসের বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এ সময়ের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ২ হাজার ৫১ জন। এ নিয়ে মোট সুস্থ হয়েছেন ২ লাখ ৫৪ হাজার ৩৮৬ জন। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ১৩ হাজার ১৭০ জনের নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৫৬৭ জনের দেহে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে ৩২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় ২ হাজার ৫১ জন সুস্থ হয়েছেন।