নানা সমস্যায় জনপ্রিয় হয়ে উঠছে না ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেন

নানা সমস্যায় জনপ্রিয় হয়ে উঠছে না ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেন
চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি : গত আম মৌসুমে ধুঁকে ধুঁকে চলেছিল ‘ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেন’। আম না পেয়ে বেশ কয়েকবার বন্ধ হতে বসেছিল ট্রেনটি।কৃষকদের কথা চিন্তা করে রেল বিভাগ প্রধানমন্ত্রীর উপহারস্বরূপ এবারও ২৭ মে থেকে চালু করে ২১৫ মেট্রিকটন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেন।  যার প্রতিটি ওয়াগনের ধারণক্ষমতা ৪৩ মেট্রিকটন হলেও বহন করা হচ্ছে ৩০ মেট্রিকটন। কিন্তু গত এক সপ্তাহের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে গড়ে প্রতিদিন চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আম যাচ্ছে মাত্র ২২ মেট্রিকটন।এবার করোনা পরিস্থিতিতে কৃষকদের উৎপাদিত বিভিন্ন পণ্য বিশেষ করে আম সহজে ও কম খরচে বহন করার জন্য সরকারের নির্দেশনায় বাংলাদেশ রেলওয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন চালু হওয়ার পর ২ জুন পর্যন্ত এক লাখ ৯ হাজার ৭৫৮ কেজি আম পরিবহন করেছে। ট্রেনটির ধারণক্ষমতা ২১৫ মেট্রিকটন হলেও সে হিসেবে প্রতিদিন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা থেকে আম যাচ্ছে গড়ে ২২ মেট্রিকটন। মূলত রহনপুর থেকে আম ব্যবসায়ীদের এবং অন্যান্য স্টেশন থেকে ব্যক্তি পর্যায়ে আম বেশি যাচ্ছে মালবাহী এই ট্রেনে। তবে স্থানীয় রেলে পণ্য পরিবহনে ব্যবসায়ীদের উদ্বুদ্ধ করতে রেল কর্তৃপক্ষ নানামুখী পদক্ষেপ নিলেও জেলায় বিশেষ লকডাউন চলায় আম ব্যবসায়ীদের হয়রানি, বুকিং সময় কম এবং জেলার বৃহত্তম আমবাজার কানসাট ও ভোলাহাট এলাকার আম সংশ্লিষ্টরা ট্রেনটির সুফল না পাওয়ায় এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ স্টেশনে বুকিং সময় কম হওয়ায় আম ব্যবসায়ীরা বুধবার বিকেলে দেড় ঘণ্টা ট্রেন আটকে রেখে প্রতিবাদও করেন।স্টেশনের আশপাশের আম ব্যবসায়ীরা বলছেন, আম বুকিং দেওয়ার পর নিরাপদে কমলাপুর স্টেশনে আমগুলো পৌঁছে যাচ্ছে কোনো ঝামেলা ছাড়াই। অল্প আম ট্রাকে না নেওয়া ও পরিবহন খরচ বেশি, কুরিয়ার সার্ভিসের পরিবহন খরচ বেশি এবং আম নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় তারা ট্রেনকেই সহজ মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছেন। অপরদিকে দূরের আম চাষিরা ট্রেনে আম পরিবহনকে হয়রানি হিসেবে দেখছেন।চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার গণকা-বিদিরপুর এলাকার তানজিলা খাতুন নামে এক অনলাইন আম ব্যবসায়ী জানান, অনলাইনে আমের চাহিদা অনুযায়ী আম দেশের বিভিন্ন স্থানে রেলের মাধ্যমে সরবরাহ করা হয়। কিন্তু জেলায় বিশেষ লকডাউনের কারণে অটোরিকশা বা ভ্যানে করে রাজশাহীর গোদাগাড়ী থেকে আম বহন করে চাঁপাইনবাবগঞ্জে নিয়ে আসার পথে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।  তিনি আরও জানান, ২৮ মে অটোরিকশায় বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ৫ মণ আম নিয়ে রেলস্টেশনে আসার সময় শহরের বেশ কয়েকটি পয়েন্টে পুলিশের জেরার মুখে সময় নষ্ট হওয়ায় ট্রেনের সময় গড়িয়ে যাওয়ায় আমগুলো সেদিন আর পাঠানো যায়নি। পরের দিন ঢাকায় আম পাঠানো হলে অর্ধেক আম নষ্ট হয়ে যায়।শিবগঞ্জের আমচাষি ইসমাঈল খান শামিম জানান, শিবগঞ্জ থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ স্টেশনে আম পরিবহন, কুলি খরচ এবং ঢাকার স্টেশন থেকে আবার গন্তব্যে আম নিয়ে যেতে যে খরচ ও ঝামেলা হয় তার চেয়ে ট্রাকে আম পরিবহন বেশি সহজ হয়।অপরদিকে ভোলাহাটের কৃষক আমিরুল ইসলাম জানান, ভোলাহাট থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জে আম নিয়ে যেতে যেতে ট্রেন ছাড়ার সময় হয়ে যায়। তাছাড়া পরিবহন ও লেবার খরচ বেড়ে যাচ্ছে। এতে করে ট্রেনে আম পরিবহনে তাদের হয়রানি বাড়ছে।এদিকে স্টেশন সূত্র জানায়, প্রত্যেক আম বুকিং দাতাকে স্টেশনে মাস্ক পড়ে আম নিয়ে স্টেশন চত্বরে প্রবেশের পর হাত ধুতে হবে। এরপর স্বাস্থ্যবিধি মেনে কুলি খরচ মিটিয়ে প্রতি কেজি আম একজন চাষি মাত্র ১ টাকা ৩১ পয়সা রেটে বুকিং দিতে পারবেন। তবে এ ক্ষেত্রে একজন বুকিং দাতাকে তার আইডি কার্ডের ফটোকপি দিতে হবে।এ ব্যাপারে চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনের সহকারী স্টেশন মাস্টার মো. ওবাইদুল্লাহ জানান, তার স্টেশনে ব্যবসায়ীদের থেকে ব্যক্তি মালিকদের কাছেই বেশি আম বুকিং দেওয়া হচ্ছে। আর রহনপুর স্টেশনে ব্যবসায়ীদের আম বেশি পরিবহন হচ্ছে। তবে শিবগঞ্জ ও ভোলাহাট এলাকার আম বুকিং হলে ট্রেনে আম পরিবহন আরও বাড়বে বলে মনে করেন তিনি।  তিনি আরও জানান, ২৭ মে থেকে ২ জুন পর্যন্ত মোট ৬৯ হাজার ৪৭৩ কেজি আম বুকিং দেওয়া হয়েছে।বুকিং সময় কম প্রসঙ্গে তিনি আরও জানান, এ সমস্যার কথা মাথায় রেখে বুধবার ট্রেন দেরিতে ছাড়া হলেও বৃহস্পতিবার থেকে প্রতিদিন চাঁপাইনবাবগঞ্জে ২টি করে ওয়াগন রেখে ট্রেনটি রহনপুর রওনা হবে। সেখানে দুপুর ২টায় আম নিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ স্টেশনে রেখে যাওয়া ওয়াগণ যুক্ত করে বিকেল ৪টার পর ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যাবে ট্রেন।  এদিকে রহনপুর স্টেশন ম্যানেজার মির্জা কামরুল হক জানান, ২ জুন ৪ হাজার ৮শ কেজিসহ গড়ে প্রতিদিন তার স্টেশন থেকে ৫ হাজার কেজি আম পরিবহন করা হয়।আর আমনুরা বাইপাশের বুকিং অফিসার নজরুল জানান, ২ জুন ৬শ কেজিসহ এ পর্যন্ত ৫ হাজার ৪৮৫ কেজি আম এ স্টেশন থেকে বুকিং দেওয়া হয়েছে।  তিনি আরও জানান, এছাড়াও জেলার নাচোল, নেজামপুর ও আমনুরা জংশনসহ তিনটি স্টেশনে প্রতিদিন গড়ে ৮শ কেজি আম বুকিং দেওয়া হয়।এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. লিয়াকত আলী শেখ জানান, বিশেষ লকডাউন থাকলেও আম পরিবহনকারী যেকোন যানবহন লকডাউনের আওতামুক্ত। সেইসঙ্গে অন্য জেলা থেকে আম ব্যবসায়ীরা আম কেনার জন্য এ জেলায় আসলেও তাদের কোনো ধরনের অসুবিধায় পড়তে হবে না।

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

দুর্ঘটনার আশঙ্কায় জনমনে উদ্বগে বীরগঞ্জের সড়কগুলো দাপিয়ে বড়োচ্ছে কিশোর চালকরা

সন্দ্বীপে কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনা উদ্বোধন