মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি : ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের কারণে গত দুই তিন দিন পদ্মা, যমুনা ও গঙ্গা নদীতে পানি কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে এখন কিছুটা স্থিতিশীল থাকলেও পানি বৃদ্ধির কারণে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটের মাঝ পদ্মায় ঢেউয়ের সৃষ্টি হচ্ছে।প্রতি বছর জুনের শেষ ভাগে নদীতে পানি বৃদ্ধি পায়, এ বছর আগেই পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ফেরি চলাচল ও ঘাটে ফেরি নোঙর করা নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায় রয়েছে কর্তৃপক্ষ।প্রতি বছর বর্ষায় সরকারিভাবে বিআইডব্লিউটিএ, বিআইডব্লিউটিসি ও পানি উন্নয়ন বোর্ড সমন্বয় করে উভয় ঘাটের পন্টুন ও নদীর পাড় রক্ষায় জিও ব্যাগ ফেলেন। তবে বর্ষায় জিও ব্যাগ ফেলায় সাময়িকভাবে কোনো মতে ফেরি লোড আনলোড হলেও স্থায়ী সমাধান হচ্ছে না বলে মন্তব্য করেছেন যানবাহনের চালক ও ফেরির মাস্টাররা। গত বছরের বন্যায় পাটুরিয়া দৌলতদিয়া নৌরুটে উভয় ঘাট ব্যাপক ভাঙনের মধ্যে পড়ে। দৌলতদিয়া অংশের ৪টি ঘাটের মধ্যে দু’টি ঘাটের পন্টুন ভাঙনের কবলে পড়ে যানবাহন পারাপার বন্ধ হয়ে যায়। বাকি দু’টির মধ্যে একটি দিয়ে ইউটিলিটি ও কে-টাইপ ফেরি সিমিত পরিসরে লোড আনলোড হয়েছে এবং রো রো ফেরির জন্য একটি পন্টুন যানবাহন পারাপারের জন্য ছিল।দেখা যায়, প্রায় তিন কিলোমিটারের নৌপথে প্রতিদিন কয়েক হাজার যানবাহন ও যাত্রীরা দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চল ও রাজধানী ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ঘাটকে ব্যবহার করে। ঋতু ভেদে নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় এ নৌরুটে চলাচলকারী যাত্রী ও যানবাহন চালকদের। পাটুরিয়া দৌলতদিয়া নৌরুটে নিয়মিত পারাপার হয়ে থাকেন গোল্ডেন লাইনের চালক রাজ্জাক মিয়া। তিনি বলেন, বর্ষার সময় পাটুরিয়া অংশে পন্টুন তেমন ভাঙনের মধ্যে পড়ে নি কিন্তু প্রতি বছর দৌলতদিয়া ফেরি ঘাটের পন্টুনগুলো নদীর পানির স্রোতে বিলিন হয়ে যায় আর ওই সময় এক বা দু’টি পন্টুন দিয়ে সীমিত পরিসরে যানবাহন পারাপার হতে পারে। সেজন্য আমাদের একটাই দাবি বর্ষার সময় সাময়িকভাবে জিও ব্যাগ না ফেলে পারাপারের জন্য স্থায়ী সমাধান। আন্তঃজেলা সাধারণ ট্রাক চালক কাউছার বলেন, যত কষ্ট আমাদের ট্রাক চালকদের। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, দিনের বেলায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যাত্রীবাহী পরিবহন পার হয় কিন্তু রাতের বেলায় যে পরিমান পণ্যবোঝাই ট্রাক জমা হয় ঘাট এলাকায়, তা দুই তিন দিন পর ফেরির টিকিটের জন্য অপেক্ষায় থাকতে হয়। যদি উভয় ঘাটের পন্টুন ও ফেরি চলাচল স্বাভাবিক থাকে তাহলে দিনের বেলায় পার হতে না পারলেও রাতে তো পার হতে পারবো। সে জন্য ঘাট ও পন্টুন রক্ষার জন্য স্থায়ী সমাধান আমাদের আশা।নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ফেরির ফিলল্যান্ড মাস্টার বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে দৌলতদিয়া অংশের প্রায় সবকটি ঘাটের পন্টুন পদ্মা নদীর স্রোতে বিলিন হয়ে যায়। ওই সময় জিও ব্যাগ ফেলে কোনো মতে ফেরির লোড আনলোড করা যায় কিন্তু এতে প্রতি বছর সরকারের কত টাকা নদীর পানির স্রোতে ভাসিয়ে দিচ্ছে তার কোনো অন্ত নেই।বিআইডব্লিউটিএ আরিচা কার্যালয়ের উপ সহকারী প্রকৌশলী শাহ আলম বলেন, দৌলতদিয়া ঘাটে ৬ কিলোমিটার স্থায়ী বাঁধ নির্মানের জন্য একটি বড় প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। এখন ডিজাইনের কাজ চলমান আছে। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে টেন্ডার হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে ফেরিঘাটের সমস্যা সমাধান হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্পোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা শাখার ডিজিএম জিল্লুর রহমান বলেন, প্রতি বছর বর্ষার সময় দৌলতদিয়া অংশে পানির স্রোতে ঘাটের কিছুটা ক্ষয়ক্ষতি হয়। তবে আমরা দুই তিনটি দপ্তর সমন্বয় করে জিও ব্যাগ ফেলে অস্থায়ী সমাধান করে থাকি। এ বছরও দৌলতদিয়া অংশে নতুন করে ৭ নম্বর পন্টুন স্থাপন করেছি। আরও দু’টি পন্টুন আছে, যা দুই এক দিনের মধ্যে আসবে। ওই দু’টি পন্টুন এলে পাটুরিয়া ঘাটের ৪ নম্বর পন্টুনটিতে নতুন পন্টুন বসানো হবে। একইভাবে দৌলতদিয়া অংশেও ৪ নম্বর পন্টুনটি নতুন করে আবার বসানো হবে।