কলকাতা: গত বছর আম্পান এ বছর ইয়াস। তছনছ করে দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গকে।যদিও ইয়াস ল্যান্ডফল করেছিল উড়িষ্যায়। কিন্তু তার ভয়ঙ্কর প্রভাব পড়েছে পশ্চিমবঙ্গে। সমুদ্রের জলোচ্ছ্বাস এবং নদীর বিভীষিকাময় জোয়ার রাজ্যটাকে এতটাই তছনছ করে দিয়েছে, যে তার ক্ষত শুকাতে সময় লাগবে আগামী কয়েক মাস। ইতোমধ্যে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় জানিয়েছেন, রাজ্যে ২০ হাজার কোটি রুপির সম্পত্তি নষ্ট হয়েছে। তবে রাজ্যের নিরিখে সবচেয়ে ক্ষতি হয়েছে পশ্চিম মেদিনিপুর এবং দুই ২৪ পরগণায়।বিজ্ঞানীদের মতে, যেভাবে বালিয়াড়ি অঞ্চল এবং সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ অঞ্চল স্বেচ্ছাচারিতার বশে ধ্বংস করা হচ্ছে। তারই খেসরাত দিতে হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গকে। নচেৎ এতটা অবস্থা খারাপ হতো না। পরিবেশবিদের মত, বিশ্ব উষ্ণায়ন এবং সাগরের পানির স্তর বৃদ্ধি এখন গোটা পৃথিবীর সমস্যা। বঙ্গোপসাগর এবং সুন্দরবনে এর প্রভাব সব থেকে বেশি। একদিকে পানির স্তর বাড়ছে, অন্যদিকে বদ্বীপ বসে যাচ্ছে। পাশাপাশি সাগরের উষ্ণতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তৈরি হচ্ছে ঘন ঘন ঘূর্ণিঝড়। এসব লক্ষ্য না রাখলে আগামী দিনে এর পরিনাম আরও ভয়ঙ্কর হবে।তবে নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। কারণ ম্যানগ্রোভ অঞ্চল শুধু সুন্দরবনের রক্ষাকবচ নয়, কলকাতাসহ গোটা পশ্চিমবাংলার প্রাকৃতিক রক্ষাকর্তা। ফলে বনসৃজন এবং সেই সঙ্গে ম্যানগ্রোভ রক্ষা না করতে পারলে আর রক্ষে নেই। তা ঘূর্ণিঝড়ের মতো দুর্যোগগুলো বারবার প্রমাণ দিচ্ছে। আর তাই বাঁধগুলির উপরে কিভাবে ম্যানগ্রোভের বংশ বৃদ্ধি করা যায়, তার পরিকল্পনা শুরু করে দিয়েছে রাজ্যের বন বিভাগের কর্তারা।রাজ্যের প্রধান বনপাল ও বন্যপ্রাণ সংরক্ষণের কর্তা বিনোদকুমার যাদব জানান, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সুন্দরবনের বাঁধ রক্ষার্থে ম্যানগ্রোভের চারা লাগানোর কথা বলেছিলেন। সে কাজ গত বছর থেকে শুরু হয়ে গেছে। শুধু বন বিভাগ নয়, এই কাজে রাজ্যের সেচ বিভাগকেও যুক্ত করা হচ্ছে।একটি সূত্র বলছে, গত বছর ২০ মে আম্পানের তাণ্ডবের পরে সুন্দরবনে ৫ কোটি ম্যানগ্রোভ চারা রোপণ করা হয়েছিল। সেই কাজের সম্পূর্ণ হিসেব এবং তার ব্যয় মুখ্যমন্ত্রীর ঘরে জমা দেওয়া হয়েছে। জানা গেছে, দক্ষিণ ২৪ পরগনায়, দুই হাজার হেক্টর জমি এবং সুন্দরবন জাতীয় উদ্যানের ৫শ হেক্টর জমিতে ম্যানগ্রোভের চারা লাগানো হয়েছিল। মোট আড়াই হাজার হেক্টর জমিতে চারা লাগোনো হয়েছে গতবার। তাতে খরচ হয়েছে, ৬ কোটি ৫২ লাখ রুপি। কোন জমিতে কী ধরনের গাছ উপযোগী তা সমীক্ষা করেই রোপণ করা হয়েছিল। মূলত বাইন, গর্জন, সুন্দরীসহ আরও কয়েক প্রজাতির গাছ লাগানো হয়েছিল। তার মধ্যে যে সব চারা গাছ মরেছে, তাদের জায়গায় নতুন চারা বসানো হবে বলে জানিয়েছেন বিনোদকুমার যাদব।পরিবেশবিদদের মতে, এসব গাছের শিকড় মাটি আঁকড়ে রাখে। ফলে যে কোনো ধরনের ঝড়ের ঝাপটা ঠেকাতে ঢালের কাজ করে। তবে বন বিভাগের কর্তাদের অভিজ্ঞতা বলছে, চারা রোপণ করলেই তার সুফল মিলবে এমনটা নয়। চারাগুলি বড় হলে তবেই ঝড় ঠেকাতে এবং বাঁধ রক্ষা করতে পারবে। তাদের মতে রোপণ করলেও সব চারা বাঁচে না। ফলে প্রতিবছরে এ ধরনের কাজ চালিয়ে যেতে হবে। তবেই আগামীতে সুফল মিলবে। ঝড়ের থেকে বাঁচবে বাংলা।