সরকারি ত্রাণ পায়নি ৭৭ শতাংশ দরিদ্র

সরকারি ত্রাণ পায়নি ৭৭ শতাংশ দরিদ্র

সমাচার রিপোর্ট : করোনাকালে সরকারের দেওয়া ত্রাণ পায়নি ৭৭ শতাংশ দরিদ্র মানুষ। মাত্র ২৩ শতাংশ দরিদ্র মানুষের হাতে এই ত্রাণ পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে। অন্যদিকে আর্থিকভাবে অপেক্ষাকৃত সচ্ছল বা ত্রাণ পাওয়ার উপযুক্ত নয় এমন অনেকে এই ত্রাণ পেয়েছেন। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) পরিচালিত এক জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। দরিদ্রদের সহায়তায় নগদ টাকা, চাল ও অন্যান্য খাদ্যসামগ্রী বিতরণ- এই তিন ধরনের ত্রাণের বণ্টন বিষয়ে জরিপটি পরিচালনা করা হয়। এ তিন সহায়তার বাইরে সরকারের অন্যান্য ত্রাণ সহযোগিতাও পায়নি ৬০ শতাংশ দরিদ্র। গতকাল বৃহস্পতিবার এক সংলাপে জরিপ প্রতিবেদনটি তুলে ধরা হয়। সংলাপটি অনলাইনে আয়োজন করা হয়। ‘করোনা মোকাবিলায় ত্রাণ কর্মসূচি :কতটা কার্যকর ছিল’ শিরোনামের এই জরিপ পরিচালনায় সহযোগিতা করেছে অক্সফাম ইন বাংলাদেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন। সংলাপ আয়োজনে সহযোগিতা দিয়েছে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ।
গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসের নমুনার ভিত্তিতে সারাদেশে কম আয়ের দুই হাজার ৬০০ পরিবারে এই জরিপ চালানো হয়। এসব পরিবার থেকে আনা তথ্য পরে ফোকাস গ্রুপ ডিসকাশনে (এফজিডি) আলোচনা করা হয়। এর ওপর ৫৩টি সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। এ তিন ধাপে জরিপের ফল চূড়ান্ত হয়। ফলে সরকারের ত্রাণ-সংক্রান্ত জাতীয় জরিপ হিসেবে এটিই সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য দাবি করেছে সিপিডি। জরিপ পরিচালনায় নেতৃত্ব দেন সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
জরিপ দলের অন্যতম সদস্য সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান প্রতিবেদনের বিস্তারিত তুলে ধরেন। জরিপে দেখা যায়, সরকার কী ত্রাণ দিচ্ছে তা জানেই না বেশিরভাগ দরিদ্র মানুষ। কারণ, এ বিষয়ে তেমন প্রচার হয়নি। তালিকা প্রণয়নেও দুর্বলতা ছিল। এ বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো গাইডলাইন নেই। কারা পাবেন, কারা পাবেন না- সে বিষয়ে জানে না অন্তত ৫০ শতাংশ দরিদ্র। কারা ত্রাণ পাচ্ছেন সে তালিকা টানিয়ে দেওয়ার কথা। বাস্তবে সেটা দেখা যায়নি। নগদ টাকা পেতে গ্রহীতাদের প্রাপ্ত অর্থের ১৭ শতাংশের মতো ব্যয় হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সাধারণ কিছু অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে। তবে বড় ধরনের কোনো দুর্নীতি হয়নি। এছাড়া এবার মোটামুটি সময়মতোই ত্রাণ পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে।
প্রতিবেদনের সুপারিশে বলা হয়, সেবা আরও বিকেন্দ্রীভূত করে দরিদ্র মানুষের হাতে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করতে হবে। প্রচার-প্রচারণা থাকতে হবে। এক্ষেত্রে ফেসবুকসহ সব ধরনের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম কাজে লাগানো যায়। বঞ্চিতদের নালিশ জানানোর ব্যবস্থা থাকতে হবে। সুবিধাভোগীদের সঠিক তালিকা করতে তথ্য ব্যবস্থাপনা হালনাগাদ করতে হবে।
চালের পরিবর্তে নগদ অর্থ দেওয়ার সুপারিশ :সংলাপে বক্তারা ত্রাণ হিসেবে চালের পরিবর্তে নগদ টাকা দেওয়ার সুপারিশ করেছেন। তারা বলেন, অনেকের চালের প্রয়োজন নেই। অনেকে চাল নিয়ে বিক্রি করে দেন। চাল পরিবহনেও বাড়তি ঝামেলা এবং ব্যয় করতে হয়।
সংলাপে প্রধান অতিথি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান বলেন, গত বছর সরকারের চাল সংগ্রহ ঠিকভাবে হয়নি। এ কারণে চালের পরিবর্তে নগদ টাকা দেওয়া হয়েছে। তবে আগের তুলনায় ত্রাণ বিতরণে স্বচ্ছতা অনেক বেড়েছে। দুর্যোগে একটি লোকও যাতে না কষ্ট না পায় সে লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার। সব জেলা প্রশাসকের হাতে অতিরিক্ত অর্থ মজুদ রাখা হয়েছে, যাতে যে কোনো দুর্যোগে দ্রুত সহায়তা পৌঁছাতে কোনো সমস্যা না হয়। সরকারের বিভিন্ন ত্রাণ তৎপরতার তথ্য তুলে ধরেন তিনি।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ বি তাজুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কঠোর নির্দেশনায় এবার ত্রাণ বিতরণে দুর্নীতি কমেছে, স্বচ্ছতা বেড়েছে। তবে ত্রাণ বিতরণে পরিসংখ্যানের দুর্বলতা থাকার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০১৪ সালের তথ্যের ভিত্তিতে ত্রাণ বিতরণ করতে হয়। এ তথ্য হালনাগাদ করা দররকার।
আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী জেলাভিত্তিক দারিদ্র্যের হার বিবেচনায় নিয়ে ত্রাণ বিতরণের পরামর্শ দেন। জনপ্রতিনিধিদের এই কার্যক্রমের যুক্ত করার সুপারিশও করেন তিনি।
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় সরকারি ও ব্যক্তি সহায়তার ক্ষেত্রে উৎসাহ কম রয়েছে। ত্রাণে বরাদ্দ আরও বাড়ানোর পরামর্শ দেন তিনি। দেবপ্রিয় বলেন, প্রকৃত সুবিধাভোগীর হাতে ত্রাণ পৌঁছাতে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও নজরদারি নিশ্চিত করতে হবে। এতে জনগণের সম্পৃক্ততা বাড়ানো এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, সংবাদমাধ্যম ও সরকারের সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।
সংলাপে অন্যদের মধ্যে অংশ নেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক এম আবু ইউসুফ, এক্সেস টু ইনফরমেশনের (এটুআই) নীতি পরামর্শক আনির চৌধুরী, নগদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর এ. মিশুক, অক্সফাম ইন বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. দীপঙ্কর দত্ত। এছাড়া ১৩টি জেলা থেকে ১৩০ জন স্থানীয় প্রতিনিধি সংলাপে অংশ নেন।

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

সলঙ্গায় ৪০ কেজি গাঁজাসহ ২জন মাদক কারবারী আটক

শিবচরে জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ উপলক্ষে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান, নৌ-র‍্যালি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত