ঘরমুখো মানুষের প্রচণ্ড ভিড়, গরম, রোদের তাপ আর অক্সিজেনের অভাবে বুধবার (১২ মে) ফেরির পাঁচ যাত্রী মারা গেছেন। একটি ফেরি থেকে চারজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সেখানে দুজন পুরুষ ও দুজন নারী। এর আগেও একই কারণে আরেকটি ফেরিতে একটি কিশোর মারা গেছে। এ ছাড়া গরমে, মানুষের ভিড়ে ও অক্সিজেনের ঘাটতি হওয়ায় অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাদের হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে।
একই অবস্থা মার্কেট ও শপিংমলে, সেখানেও স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে কেনাকাটা করতে আসা মানুষের উপচেপড়া ভিড়। কোনোভাবেই স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। ফলে ঈদের পর উচ্চমাত্রায় করোনা ভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কা করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। সরকারের পক্ষ থেকেও একই আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে এবং এ ঘটনায় সরকার অনেকটাই উদ্বিগ্ন।
গত কয়েক দিন আগে দেশে সংক্রমণ উচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিলো। এরপর টানা ‘লকডাউন’ দেওয়ায় সংক্রমণ এবং মৃত্যু হার অনেকটাই কমে এসেছে। ঈদ যাত্রায় স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত হওয়ায় ফের সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা করছে সরকার। স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে ঈদ উদযাপনে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় না যাওয়ার জন্য সরকার এবং স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বার বার আহ্বান জানিয়ে আসছেন। কিন্তু এরপরও গত কয়েক দিনে ১৫ লাখ মানুষ ঢাকা ছেড়েছেন। ঈদের আগের দিন পর্যন্ত আরও ৫ লাখের মতো মানুষ ঢাকা ছাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ারও আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ কারণে চলমান লকডাউন আরও এক দফা বাড়তে পারে বলে জানা গেছে। চলমান ‘লকডাউন’ আগামী ১৬ মে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় চলমান ‘লকডাউন’ আরও এক সপ্তাহ বাড়ানো হতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে।
এদিকে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্যানুযায়ী গত ১৯ এপ্রিল একদিনে দেশে সর্বোচ্চ ১১২ জনের মৃত্যু হয়। এর আগে ও পরে সপ্তাহ ধরে মৃত্যুর সংখ্যা ১শ’ এর উপরে এবং ১শ’ এর নিচে কাছাকাছি ছিলো। এছাড়া গত ৭ এপ্রিল দেশে একদিনে করোনায় সাত হাজার ৬২৬ জন শনাক্ত হয়। যা একদিনে শনাক্তে সর্বোচ্চ রেকর্ড।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, ঈদের সময় ৯০ লাখ থেকে এক কোটি মানুষ ঢাকার বাইরে যায়। এবার ধারণা করা হচ্ছে ১৫ লাখ মানুষ এরইমধ্যে ঢাকা ছেড়েছেন, আরও হয় তো ৫ লাখের মতো ঈদের আগ পর্যন্ত যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে সরকারের কিছু সফলতা আছে। কিন্তু যেভাবে মানুষ বাইরে গেছেন তাতে তো করোনা সংক্রমণ বাড়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এর ফলে একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এদিকে, ভারতফেরত করোনা রোগীর নমুনায় ভারতীয় ভেরিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে। এরফলে সংক্রমণ এবং প্রাণহানি আবারও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। করোনার ভারতীয় ভেরিয়েন্টটি দ্রুত ছড়ায় বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা।
করোনার ভারতীয় ধরন দেশটিতে ভয়ংকর তাণ্ডব চালাচ্ছে। করোনার থাবায় গত প্রায় এক মাস ধরে বিপর্যস্ত ভারত। সংক্রমণ ও মৃত্যুর নতুন নতুন রেকর্ড তৈরি হচ্ছে। বুধবার (১২ মে) দেওয়া দেশটির সরকারি তথ্যানুযায়ী, ২৪ ঘণ্টায় ৪ হাজার ২০৫ জন মারা গেছেন। যা এখন পর্যন্ত ভারতের সর্বোচ্চ রেকর্ড। করোনা মোকাবিলায় দেশটিকে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
প্রতিবেশী দেশের এমন পরিস্থিতির মধ্যেও স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে ঈদ উপলক্ষে মানুষের বাড়ি ফেরা এবং ঈদ পরবর্তী আবার কর্মস্থলে ফেরার পর দেশের করোনা পরিস্থিতি কেমন হবে তা দিয়ে উদ্বিগ্ন সরকার।