ঢাকা: কয়েকদিন পর ঈদুল ফিতর। তাই ঈদকে কেন্দ্র করে বাজার সরগরম হয়ে উঠলেও মসলার বাজারে এখনও উত্তাপ লাগেনি।
চলমান লকডাউনে সামাজিক অনুষ্ঠান কমে যাওয়ায় চাহিদা কমে গেছে মসলার। ফলে মসলার দাম বাড়েনি, উল্টো কিছুটা দাম কমেছে। গত এক মাসের ব্যবধানে মসলার দাম প্রকারভেদে পাইকারি বাজারে কেজিতে ২০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। কিন্তু স্থিতিশীল রয়েছে খুচরা বাজারে। আগের দামই বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের মসলা।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, করোনা মহামারি পরিস্থিতিতে বিয়ে, বৌভাত, সামাজিক অনুষ্ঠান বন্ধ হওয়ায় হোটেল-রেস্তোরাঁয় চাহিদা কমে যাওয়ার পাশাপাশি স্থানীয় পর্যায়ের পর্যাপ্ত মজুদ থাকায় মসলাপণ্যের চাহিদা কমে গেছে। ঈদের আগে প্রতিবছর চাহিদা বেড়ে যায় এবার উল্টো চিত্র, চাহিদা কমার সঙ্গে সঙ্গে দামও কমেছে পাইকারি মসলার বাজারে। কিন্তু স্থিতিশীল রয়েছে খুচরা বাজারে। এবারের ঈদে মসলাপণ্যের দাম পড়ে যাওয়ার বিষয়টি আমদানিকারকদের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি করেছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
শনিবার (৮ মে) দেশের সবচেয়ে বড় পাইকারি মসলার বাজার পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারে সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, এবছর মসলার দাম না বাড়ার আশঙ্কা নেই, উল্টো কমেছে। তাই পাইকারি বাজারে ভিড় কম। মৌলভীবাজারে কম দামে গরম মসলা কিনতে ভিড় হতো। সেখানেও এখন নেই আগের মতো গরম মসলা কেনার ভিড়। বিভিন্ন এলাকার খুচরা ব্যবসায়ীরা মসলা নিচ্ছেন। কিন্ত নেই ব্যক্তি পর্যায়ে মসলা কেনার তোড়জোড়। এখন সেসব ক্রেতা আসছেন না। তারা পাড়া-মহল্লার দোকান থেকে অল্প মসলা কিনছেন।
মৌলভীবাজারে প্রতিকেজি জিরা পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকা। মাস খানেক আগে যা ছিল ৩৫০ টাকা। এলাচ ২ হাজার টাকা থেকে ২ হাজার ৫শ টাকা কেজি, আগে যা ছিল ২২০০ থেকে ২৮০০ টাকা। আখরোট ১২০০ টাকা থেকে কমে ৭৫০ টাকা, কাজুবাদাম ৯০০ থেকে কমে ৮০০ টাকা, পেস্তাবাদাম ১২০০ টাকা থেকে কমে ১০৫০ টাকা, দারুচিনি ৩৩০ টাকা থেকে ৩৪০ টাকা কেজি। আগে বিক্রি হয়েছে ৩৭৫ টাকা। গোলমরিচ সাদা আগে বিক্রি হয়েছে ৯০০ টাকায়, এখন ৮৪০ টাকা এবং কালো গোলমরিচ বিক্রি হয়েছে ৫০০ টাকায়, এখন দাম ৪৬০ টাকা কেজি। কিসমিস ২০০ টাকা কেজি। আগে ছিল ২৩০ থেকে ২৫০ টাকা। আলুর বোখরা আগে ছিল ৪৮০ বর্তমানে ৪২০ টাকা, চিনাবাদাম ১১০ থেকে কমে ১০৫ টাকা, কাঠবাদাম এখন বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকা কেজি। আগে ছিল ৭৫০ টাকা। লবঙ্গ কেজি ৮৫০ টাকা থেকে কমে ৭০০ টাকা হয়েছে। জায়ফল ১ হাজার ৪৫০ টাকা থেকে কমে ১৩শ টাকা কেজি মিষ্টি জিরা বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ পাইকারি গরম মসলা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি এনায়েত উল্লাহ বলেন, লকডাউনের কারণে সব ধরনের সামাজিক অনুষ্ঠান, ইফতারপার্টি, বিয়ে, জন্মদিন সবকিছু বন্ধ। কে কিনবে বেচা কেনা নেই এখন মসলা? বড় কোনো আয়োজন নেই। এ সময় মসলার দাম বাড়ে সত্য, কিন্তু গত দুই বছর বাড়েনি। বরং এবছর কমেছে সব মসলার দাম।
তিনি বলেন, এবছর পর্যাপ্ত আমদানি হয়েছে। আমদানিকৃত সব মাল সময়ের আগেই চলে এসেছে। তাই পর্যাপ্ত মজুদ আছে। এছাড়া গত বছর রমজানের ঈদের জন্য যে মসলা আমদানি হয়েছিল সেগুলো কোরবানির ঈদে কিছু বিক্রি হয়েছে। আর এ বছর বিক্রি হচ্ছে। যারা আমদানি করেছিল তারাও বিক্রি করতে না পেরে ঋণখেলাপি হওয়ার পথে। গুদামে মসলার প্রচুর মজুদ। ফলে দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই। লকডাইনের কারণে ক্রেতারা আসতে পারছে না। তাই বিক্রি কম। আর কম বিক্রি হলে ব্যবসায়ীরা মারা পড়বে।
মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক হাজী মো. আবুল হাসেম বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ব্যবসায়ীদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে যাতে বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকে। আমরা সেলক্ষ্যে কাজ করছি। এখন পাইকারি বাজারে সবকিছুর দাম নিম্নমুখী।
এদিকে পাইকারি বাজারে দাম কমলেও খুচরা বাজারে এর কোনো প্রভাব পড়েনি। কারণ করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে চলমান গত এক মাসের লকডাউনে পরিবহন ব্যয় বেড়েছে কয়েকগুন। তাই খুচরা ব্যবসায়ীরা দাম কমাচ্ছেন না।
সূত্রাপর কাঁচাবাজারের বিসমিল্লাহ স্টোরের ম্যানেজার শহিদুল ইসলাম বলেন, গত এক মাসে নতুন করে কোনো মসলার দাম বাড়েনি। এক মাস আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের মসলা। বর্তমানে দারুচিনি বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা কেজিতে। এলাচ মান ও প্রকার ভেদে প্রতি কেজি ২২০০ থেকে ৩২০০ টাকা, জিরা ২৮০ থেকে ৩২০ টাকা, কাঠবাদাম কেজি ৬০০ টাকা। কাজুবাদামের কেজি ৮০০ টাকা। কিসমিস বিক্রি হচ্ছে ৩২০ টাকা কেজিতে। লবঙ্গ বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকা কেজি। জায়ফল ১৫০০ টাকা কেজি। লবঙ্গ কেজি ১০০০ টাকা।
সরকারি বাজার মনিটরিংয়ে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, মসলার দাম আগের বছরের তুলনায় ৬০ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে। ২০১৯-২০২০ সালের তুলনায় ২০২০-২১ সালে গরম মশলার দাম কমতির দিকে। প্রতি কেজিতে ৬০ ও ৫২ শতাংশ দাম কমেছে। দাম কমার শীর্ষে আছে আদা। ৪৪ শতাংশ দাম কমেছে দেশি রসুনের এবং ৩১ শতাংশ দাম কমেছে আমদানি করা পেঁয়াজের। বাজারে প্রতি কেজি দেশি আদা ১০০ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ২২০ থেকে ২৮০ টাকা। আমদানি করা আদা প্রতি কেজি ৮০ থেকে ১৫০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে, যা গত বছর ছিল ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা। দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৮০ টাকায়, যা গত বছর এই সময়ে ছিল ১১০ থেকে ১৪০ টাকা। আমদানি করা রসুন পাওয়া যাচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে। আমদানি করা পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৩০-৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত বছর ছিল ৪৫ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত। দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৩৮ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত বছর একই সময়ে ছিল ৪৫ থেকে ৫৫ টাকা।
গরম মসলা হিসেবে পরিচিত প্রতি কেজি জিরার দাম ৩২০ থেকে ৪০০ টাকা, যা গত বছর একই সময়ে ছিল ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা। প্রতি কেজি দারুচিনি ৩৬০ থেকে ৪৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। লবঙ্গ প্রতি কেজি ৮০০ থেকে ৯০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে, যা গত বছর ছিল ১ হাজার থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত। এ হিসেবে দাম কমেছে ২২ শতাংশ। প্রতি কেজি ছোট এলাচ ২৪ শতাংশ কম দামে ২ হাজার ৪০০ থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ধনে প্রতি কেজিতে সাড়ে ৭ শতাংশ মূল্য হ্রাস পেয়েছে। বর্তমানে ১১০ থেকে ১৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তেজপাতা প্রতি কেজি ১১০ থেকে ১৪০ টাকা, যা গত বছর ছিল ১২০ থেকে ১৫০ টাকা। এই হিসেবে দাম কমেছে প্রায় সাড়ে ৭ শতাংশ পর্যন্ত। মানভেদে শুকনা মরিচ প্রতি কেজি ২১০ থেকে ৩০০ টাকা, প্রতি কেজি হলুদ ১৫০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।