চলমান করোনা মহামারির সময়টায় প্রযুক্তিগত এ উন্নয়নটা অধিকমাত্রায় আঁচ করতে পেরেছে মানুষ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হলেও ঘরেই বসেই শিক্ষার্থীরা ক্লাস করতে পারছে প্রযুক্তির প্রসারের কারণেই। সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে পরীক্ষা না হলেও অনেক বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনলাইনেই পরীক্ষা নিয়েছে। সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেগুলো অনলাইনে অ্যাসাইনমেন্ট দিয়ে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করেছে। হাসিনা আক্তার নামে এক অভিভাবক জানান, তার ছেলে আশফাক পৌর শহরের একটি বেসরকারি স্কুলের ১ম শ্রেণির শিক্ষার্থী। করোনায় এক বছরেরও বেশি সময় ধরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও তার ছেলে অনলাইনে ক্লাস করেছে এবং পরীক্ষা দিয়েছে। জুম অ্যাপ এবং গুগল মিট ব্যবহার করে খুব সহজেই ক্লাসে অংশ নিচ্ছে তার ছেলে।শুধু স্কুল, কলেজ নয়-করোনার এ সময়ে দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস ও সেমিনার-সিম্পোজিয়াম হয়েছে অনলাইনে। বেসরকারি অনেক বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনে ক্লাস করিয়ে সম্পন্ন করেছে সেমিস্টারও।
ফেনী ইউনিভার্সিটির ভিসি প্রফসের ড. মো. সাইফুদ্দনি শাহ বলেন, করোনাকালীন সময়ে গুগল মিট, বিডিরেন, জুম প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে ফেনী ইউনিভার্সিটির ক্লাস, ভাইভা এবং অনলাইন প্রশ্নের মাধ্যমে পরীক্ষা নিয়ে যথাসময়ে সব সেমিস্টার সম্পন্ন করা হয়েছে। সামার ২০২১ সেমিস্টারে ভর্তি কার্যক্রম চলমান আছে। সরকারি নির্দেশনা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রশাসনিক অফিস খোলা রাখা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির জনসংযোগ কর্মকর্তা মেহেদী হাসান বলেন, প্রযুক্তির ব্যবহার না থাকলে শিক্ষাব্যবস্থা অচল হয়ে পড়তো। কিন্তু ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে শিক্ষা কার্যক্রম সক্রিয় রাখা যাচ্ছে বলে মনে করছি। তাই ডিজিটালাইজেশনের ফলে অবশ্যই শিক্ষাব্যবস্থায় পরিবর্তন এসেছে। ভার্চ্যুয়াল ক্লাস-পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। স্বভাবতই এসব বিষয়ের সঙ্গে শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবাই মানিয়েও নিচ্ছেন।
শুধু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নয় তথ্যপ্রযুক্তির ওপর ভরসা করে শিক্ষার্থীদের সুবিধা ও সেশন জট কমানোর কথা বিবেচনা করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে ভাবছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।
মিজান উদ্দিন নামে এক স্কুল শিক্ষক বলেন, ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহারের কারণে বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। প্রযুক্তির উৎর্ষের ফলে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসের মাধ্যমে এ দেশের শিক্ষার্থীরা অন্যরকম অভিজ্ঞতা অর্জন করছে। কম্পিউটার এবং প্রজেক্টরের মাধ্যমে এ বিশেষ পাঠদান ব্যবস্থার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা সচিত্র ক্লাস করতে পারছেন। শিক্ষক আগে যেটা বলে ও লিখে বুঝাতেন এখন তা বিভিন্ন চিত্রের মাধ্যমে খুব সহজে সচিত্রভাবে বুঝিয়ে দিচ্ছেন। তথ্যপ্রযুক্তির এ উন্নয়নে শুধু শিক্ষার্থীরাই নয়-উপকৃত হচ্ছেন শিক্ষকরাও। ফাহিমা আবেদীন নামে এত প্রাথমিক শিক্ষক বলেন, এখন আর আগের মত সনাতনী পদ্ধতি নেই-বিভিন্নকাজে শিক্ষকদের আর শিক্ষা অফিসের দিকে ছুটতে হয় না। অনলাইনে অনেক কাজ সম্পন্ন হয়ে যায়। তিনি আরও বলেন, প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিংও এখন অনলাইনে হচ্ছে, তিনি নিজেও গত কিছুদিন আগে অনলাইনে ভাইভা দিয়ে কোর্স সম্পন্ন করেছেন।
সর্বোপরি শিক্ষাব্যবস্থায় অভূতপূর্ব কিছু ধারণা উদ্ঘাটিত হচ্ছে, নতুন নতুন কৌশল তৈরি হচ্ছে। এসব হচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তির প্রসারের ফলে। ডিজিটাল প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ। শিক্ষার্থীদের তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার ও এ সংক্রান্ত জ্ঞান অর্জনের জন্য শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে কম্পিউটার শিক্ষাকে আবশ্যিক করা হয়েছে, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যবইগুলো এখন অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে এবং দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সংযোগ সরবরাহ করা হচ্ছে।