ভারতীয় ঋণে হবে শেখ হাসিনা সোলার পার্ক

ভারতীয় ঋণে হবে শেখ হাসিনা সোলার পার্ক
ঢাকা: জামালপুরে যমুনা নদীর পাড়ে দেশের সবচেয়ে বড় ১০০ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। এতে যে সোলার পার্ক নির্মাণ করা হবে তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে হবে।এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে এক হাজার ১১২ কোটি টাকা ঋণ দেবে ভারত।‘শেখ হাসিনা সোলার পার্ক, জামালপুরের মাদারগঞ্জ ১০০ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ’ প্রকল্পের অধীনে ওই বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে।  ৩২৫ দশমিক ৬৫ একর জমির ওপর ২০ বছর মেয়াদী সোলার প্ল্যান্ট নির্মিত হবে। এখনো পর্যন্ত এটা দেশের সব চেয়ে বড় সোলার প্ল্যান্ট বলে দাবি করেছে রুরাল পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (আরপিসিএল)।আরপিসিএল সূত্র জানায়, বাংলাদেশ সরকার দেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনের পরিকল্পনা করেছে। এ লক্ষ্যে আরপিসিএল জামালপুর জেলার মাদারগঞ্জ উপজেলার জোড়খালী ইউনিয়নের কাইজরচর মৌজায় ১০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার সৌর বিদ্যুৎ  কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। এটি ভারতীয় নমনীয় ঋণের আওতায় বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পের মোট ব্যয় ১ হাজার ৪৯৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে ভারতীয় ঋণ ১ হাজার ১১২ কোটি ৫০ লাখ টাকা। বাকি অর্থ সরকারি উৎস থেকে মেটানো হবে। প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) সভায় অনুমোদনের পর ডিসেম্বর ২০২৩  মেয়াদে বাস্তবায়নের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।আরপিসিএল সূত্র জানায়, নানা কারণে অবশেষে এই প্রকল্পে বড় অংকের ভারতীয় ঋণ আসছে। ভারতীয় ঋণের আওতায় বাগেরহাট জেলার মোল্লাহাটে ১০০ মেগাওয়াট সোলার পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপনের লক্ষ্যে আরপিসিএল ইতোমধ্যেই ২০১৮ সালে একনেক সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন করেছিল। কিন্তু প্রকল্প এলাকায় জলাশয় থাকায় তা ভরাট করা হলে পরিবেশ ও বাস্তুগত ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে জলাশয় ভরাট না করে ফিশারিজসহ অনান্য কৃষিজাত পণ্য উৎপাদনের সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়। একটি বিস্তারিত স্ট্যাভির ভিত্তিতে সোলার প্যানেল পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপন প্রকল্প নতুনভাবে ডিজাইন করার জন্য সিদ্ধান্ত হয়।একনেক সভার নির্দেশনা অনুসারে প্রকল্প এলাকার জলাশয়ে ফিশারিজসহ অন্যান্য কৃষিজাত পণ্য উৎপাদনের সুবিধা রাখার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সোলার পাওয়ার প্লান্ট স্থাপনের সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়। কিন্তু আর্থিক ও কারিগরি দিক থেকে এ দুটি পদ্ধতিতে মোল্লারহাট প্লান্ট স্থাপনের উপযোগিতায় নেই। এর ফলে ২০১৪ সালে বিদ্যুৎ বিভাগে অনুষ্ঠিত প্রকল্প যাচাই কমিটির সভায় বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি মোল্লারহাটের পরিবর্তে জামালপুরের মাদারগঞ্জে নির্মাণের সুপারিশ করা হয়।আরপিসিএল জানায়, যমুনার পাড়ে ‘শেখ হাসিনা সোলার পার্ক স্থাপনের জন্য সরকারি অনুমোদন রয়েছে। সোলার পার্কে আরপিসিএল- এর প্রস্তাবিত ১০০ মেগাওয়াট গ্রিড টাইপ সোলার বিদ্যুৎ কেন্দ্র ছাড়াও আরও একটি ১০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।  আরপিসিএল এই প্রকল্পের জন্য মাদারগঞ্জ উপজেলার জোড়খালী ইউনিয়নের কাইজারচর মৌজায় যমুনা নদীর নিকটবর্তী এলাকায় সরকারি খাস জমি নির্বাচন করা হয়েছে। ভূমি মন্ত্রণালয় হতে ২০২০ সালে ৩২৫ দশমিক ৬৫ একর জমির দীর্ঘমেয়াদী বন্দোবস্ত করা হয়েছে। যমুনা নদী প্রকল্প এলাকা থেকে ১ দশমিক ৫ কিমি দূরে অবস্থিত বিধায় উক্ত এলাকার ভূমি তুলনামূলক স্থিতিশীল। এছাড়া সম্ভাব্যতা সমীক্ষায় উক্ত এলাকায় বন্যা ও নদী ভাঙনের ঝুঁকি কম রয়েছে। এ কারণে প্রকল্পের জন্য নদীর পাড়ে কোনো বাঁধ নির্মাণের প্রয়োজন হবে না। সৌর প্যানেলসমূহের সুরক্ষার জন্য প্রকল্প এলাকার চারপাশে ৬ দশমিক ৫ কিমি বাঁধ নির্মাণ করা হবে। এছাড়া সম্ভাব্যতা সমীক্ষার পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী প্রকল্প এলাকা সমুদ্রপৃষ্ঠ হতে ১২ মিটার উঁচু হলেও বন্যা থেকে রক্ষার জন্য ভূমি উন্নয়ন করে অতিরিক্ত ০২ মিটার উচ্চতায় (সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৪ মিটার) লেভেলিং করা হবে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) জানায়, প্রকল্পটির জন্য ভারতীয় নমনীয় ঋণের অর্থ সংস্থান রয়েছে। তবে প্রকল্পটির অনুকূলে ঋণের পরিমাণ চূড়ান্ত করার জন্য প্রকল্পের পুনর্গঠিত ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) দ্রুত ইআরডিতে পাঠানোর জন্য বিদ্যুৎ বিভাগকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। ভারতীয় নমনীয় ঋণের শর্ত অনুসারে প্রকল্প সহায়তার আওতায় সংগ্রহতব্য মালামাল ও সেবা ৭৫ শতাংশ ভারত থেকে সংগ্রহ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।প্রকল্প প্রসঙ্গে আরপিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আবদুস সবুর বলেন, যমুনা নদীর পাড়ে দেশের সবচেয়ে বড় সোলার কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। এই খাতে ঋণ দেবে ভারত। ২০ বছর মেয়াদী প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হলে দেশের বিদ্যুতের চাহিদা অনেকাংশে পূরণ হবে। যমুনার পাড়ে খাস জমিতে এটা হচ্ছে। এখানকার ১৮০টি পরিবারকে পুনর্বাসনও করা হবে। দেশে জমি স্বল্পতা থাকলেও সোলার প্ল্যান্ট স্থাপন প্রসঙ্গে এমডি বলেন, এই জমি তেমন উর্বর নয়। তারপরও প্রকল্প এলাকায় সবজিসহ হাঁস মুরগি পালনের ব্যবস্থা করা হবে।

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণের ৮ মাস না পেরোতেই ভাঙন

সিন্ডিকেটের কারনে আলুর দামের উর্ধ্বগতি