চট্টগ্রাম প্রতিনিধি : দেশের সমৃদ্ধির স্বর্ণদ্বার খ্যাত চট্টগ্রাম বন্দরের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ রোববার (২৫ এপ্রিল)। মহামারি করোনার কারণে এবার অনাড়ম্বরভাবে উদযাপিত হচ্ছে ১৩৪তম বন্দর দিবস।সূত্র জানায়, ১৮৮৭ সালে পোর্ট কমিশনার্স অ্যাক্ট প্রণয়ন করে ব্রিটিশ সরকার। ১৮৮৮ সালের ২৫ এপ্রিল তা কার্যকর হয়। তখন থেকে চট্টগ্রাম বন্দর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে। তাই প্রতি বছর মেজবান, আলোচনা, শোভাযাত্রাসহ বর্ণিল আয়োজনে ২৫ এপ্রিল বন্দর দিবস উদযাপন করা হয়। এবার শুধু পতাকা উত্তোলন করা হয়েছে।বন্দর ব্যবহারকারীরা বলছেন, ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান বিবেচনায়ও চট্টগ্রাম বন্দরের গুরুত্ব আজ বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের প্রায় ৯২ শতাংশ, কনটেইনারে পণ্য পরিবহনে ৯৮ শতাংশ এ বন্দরের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়।ইংরেজ শাসনের প্রথম দিকে ইংরেজ ও দেশীয় ব্যবসায়ীরা বার্ষিক এক টাকা সেলামির বিনিময়ে নিজ ব্যয়ে কর্ণফুলী নদীতে কাঠের জেটি নির্মাণ করেন। পরে ১৮৬০ সালে প্রথম দুটি অস্থায়ী জেটি নির্মিত হয়। ১৮৭৭ সালে চট্টগ্রাম পোর্ট কমিশনার গঠিত হয়। ১৮৮৮ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে দুটি মুরিং জেটি নির্মিত হয়। ১৮৮৮ সালে ২৫ এপ্রিল চট্টগ্রাম পোর্ট কমিশনার কার্যকর হয়। ১৮৯৯-১৯১০ সালের মধ্যে চট্টগ্রাম পোর্ট কমিশনার ও আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে যুক্তভাবে চারটি স্থায়ী জেটি নির্মাণ করে। ১৯১০ সালে চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে রেলওয়ের সংযোগ হয়।১৯২৬ সালে চট্টগ্রাম বন্দরকে মেজর পোর্ট ঘোষণা করা হয়। পাকিস্তান আমলে ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে চট্টগ্রাম পোর্ট কমিশনারকে চট্টগ্রাম পোর্ট ট্রাস্টে পরিণত করা হয়। বাংলাদেশ আমলে ১৯৭৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে চট্টগ্রাম পোর্ট ট্রাস্টকে চট্টগ্রাম পোর্ট অথরিটিতে পরিণত করা হয়। ২০২০ সালে বিশ্বব্যাপী কোভিড পরিস্থিতিতেও চট্টগ্রাম বন্দর ২৮ লাখের বেশি কন্টেইনার হ্যান্ডেল করেছে। ২০০৯ সালে প্রথম বারের মতো চট্টগ্রাম বন্দর ১০০টি কন্টেইনার পোর্টের তালিকায় ৯৮তম অবস্থান নিয়ে নিজের স্বীকৃতি অর্জন করে। মাত্র ১১ বছরে ৪০ ধাপ এগিয়ে ২০২০ সালে চট্টগ্রাম বন্দর ৫৮তম অবস্থানে উন্নীত হয়।চট্টগ্রাম বন্দরের এ অর্জন বর্তমান সরকারের চলমান অর্থনৈতিক উন্নয়নেরই প্রতিফলন বলে মনে করেন চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম।জাতীয় অর্থনীতিতে চট্টগ্রাম বন্দরের গুরুত্ব অপরিসীম এবং প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত রূপকল্প ২০২১ এবং রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নে চট্টগ্রাম বন্দর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষে চবকের গৃহীত বিভিন্ন স্বল্প-মধ্যম ও দীর্ঘ মেয়াদী প্রকল্প বাস্তবায়নে বন্দর কর্তৃপক্ষ বদ্ধপরিকর। তাছাড়া একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বন্দরের আধুনিকায়ন, যন্ত্রপাতি সংযোজন এবং সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বে-টার্মিনাল, পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল, মাতারবাড়ী বন্দর নির্মান ও নিউমুরিং ওভার ফ্লো ইয়ার্ড নির্মাণসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প চলমান আছে। ইতিমধ্যে পতেঙ্গার লালদিয়ার চর এলাকায় বন্দরের গুরুত্বপূর্ণ ৫২ একর ভূমি উদ্বার করা হয়েছে। ওই এলাকায় বন্দর সুবিধাদি বৃদ্ধির বিভিন্ন পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হচ্ছে।২০২০ সালের মার্চ মাসে চট্টগ্রাম বন্দরে আগত জাহাজের সংখ্যা ছিল ৩৬৬টি, কন্টেইনার হ্যান্ডলিং ২ লাখ ৪৯ হাজার ৬৬৯ টিইইউস, কার্গো হ্যান্ডলিং ১০২ লাখ ৬৪ হাজার ৪০২ মেট্রিক টন। ২০২১ সালের মার্চ মাসে তা যথাক্রমে জাহাজের সংখ্যা ছিল ৩৭৬টি, কন্টেইনার হ্যান্ডলিং ২ লাখ ৬৯ হাজার ৪৪৬ টিইইউস, কার্গো হ্যান্ডলিং ১১০ লাখ ৪২ হাজার ৮১৮ মেট্রিক টন। কন্টেইনার ও কার্গো হ্যান্ডলিং এ প্রবৃদ্ধি প্রায় ৭.৭ শতাংশ এবং জাহাজ হ্যান্ডলিং ২.৭ শতাংশ।কোভিড-১৯ এর কারণে উন্নত বিশ্বের অনেক বন্দরেরই কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ হলেও চট্টগ্রাম বন্দর ২৪/৭ চালু ছিল। চট্টগ্রাম বন্দর কোভিডের প্রথম ঢেউয়ের সময়কালে প্রায় ডেলিভারি শূন্য অবস্থা হতে অত্যন্ত অল্প সময়ে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছিল। গত বছরের অভিজ্ঞতা কোভিড-১৯ এর দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলা এবং বন্দরের অপারেশন স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করছে।বর্তমানে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম বন্দর দেশের সাপ্লাই চেইন নির্বিঘ্নে রাখার স্বার্থে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে ২৪ ঘণ্টা ৭ দিন অপারেশন ও ডেলিভারি চালু রেখেছে।গত এক বছরে বন্দরের সাফল্য অনেক। এর মধ্যে রয়েছে বন্দরের বহির্নোঙরে শূন্য পাইরেসি (দস্যুতা), লয়েড লিস্টে ছয় ধাপ এগিয়ে ৬৪ হতে ৫৮তে উন্নীত হওয়া, পরীক্ষমূলকভাবে ভারতের কলকাতা বন্দর হতে চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যে পণ্য ট্রানজিট (পণ্য পরিবহন) চালু। এতে বর্হিবিশ্বে দেশের ও চট্টগ্রাম বন্দরের ভাবমূর্তি উজ্বল হয়েছে।বন্দর দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (চবক) চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান বন্দরের সব কর্মকর্তা-কর্মচারী, বার্থ অপারেটর, টার্মিনাল অপারেটর, শিপ হ্যান্ডেলিং অপারেটর, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট, ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার, বিকডা, শিপিং এজেন্ট, শ্রমিক, বন্দর ব্যবহারকারী ও স্টেক হোল্ডারদের বন্দরের কার্যক্রম পরিচালনায় সার্বিক সহযোগিতার জন্য অভিনন্দন জানিয়েছেন।