স্বস্তি ফিরছে ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গা শিবিরে

স্বস্তি ফিরছে ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গা শিবিরে
চলছে মানবিক সেবা কার্যক্রমবাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সিনিয়র কমিউনিকেশন অফিসার সাবরিনা ইদ্রিস  জানান, অগ্নিকাণ্ডের পর থেকে ক্ষতিগ্রস্ত শিবিরগুলোতে প্রতিদিন রেডক্রিসেন্টের প্রায় একহাজার স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছেন। তারা ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গাদের ঘর তৈরিসহ নানাভাবে মানবিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছেন। অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ৮ এবং ৯ নম্বর রোহিঙ্গা শিবিরে সরকারিভাবে বরাদ্দ পাওয়া ৮০০ তাঁবু ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। প্রায় ১১ হাজার ত্রিপল, ১১ হাজার মশারি এবং আড়াইশো কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। ঘটনার পর থেকে প্রতিদিন ক্ষতিগ্রস্ত ১ হাজার ৫০০ পরিবারের মধ্যে পাউরুটি, বিস্কুট, বাদাম, মুড়ি, গুড় ও পানি বিতরণ করার কাজ চলমান।সংস্থাটির প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রতিদিন গড়ে ৩৫ থেকে ৪০ জন অগ্নিদগ্ধ এবং আহত রোহিঙ্গাকে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে সাবরিনা বলেন, শুধু আহত রোগীর চিকিৎসা নয়, ভয়াবহ এ ঘটনার পর থেকে অনেক রোহিঙ্গা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন। তাদের সাইকো স্যোশাল সাপোর্টও দেওয়া হচ্ছে।প্রান্তিক ওব্যাট নামের একটি বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত ডা. জুনায়েদ  বলেন, ঘটনার পর দিন থেকে আমরা দুইজন চিকিৎসক, দুইজন নার্স, দুইজন মেডিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্টসহ প্রায় বিশ জনের একটি টিম ক্যাম্পে প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছি।‘অগ্নিকাণ্ডে আহত রোগীর পাশাপাশি তীব্র গরম, আর পানি সমস্যার কারণে বেশকিছু ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীও পাওয়া যাচ্ছে, কিছু বয়স্ক রোগীও পাচ্ছি। আমরা যাদের সেবা দিতে পারছি না, আমাদের অ্যাম্বুলেন্স আছে, তাদের বাইরে পাঠানোর ব্যবস্থা করছি’, যোগ করেন ডা. জুনায়েদ।

ঘুরে দাঁড়াচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গা শিবির

সোমবার (২৯ মার্চ) দুপুরে উখিয়ার বালুখালীর ক্ষতিগ্রস্ত আট ও নয় নম্বর রোহিঙ্গা শিবিরে গিয়ে দেখা যায়, অগ্নিকাণ্ডের পর পর শিবিরের যে ভয়াবহতা ছিল, তা অনেকটা কমে এসেছে।  রোহিঙ্গারা ঘর তৈরি এবং গোছানোর কাছে ব্যস্ত। ঘটনার পর পর পানি এবং খাবারের যে সংকট তৈরি হয়েছিল, মানবিক সহায়তা পেয়ে তা অনেকটা কাটানো গেছে।

নয় নম্বর রোহিঙ্গা শিবিরের নবী হোসেন বলেন, সেদিন আগুন কোনদিক দিয়ে এসেছে, তাও ভালো করে খেয়াল করতে পারিনি। ঘরে পানি খাওয়ার জন্য একটি গ্লাসও ছিল না। সবকিছুই পুড়ে গেছে।

‘ঘরের মানুষ কে কোথায় ছিল তা জানতাম না। এখন এনজিওরা কাপড় দিয়ে একটি ঘর (তাঁবু) বানিয়ে দিয়েছে। সেই কাপড়ের নিচে আশ্রয় নিয়েছি। ’নয় নম্বর রোহিঙ্গা শিবিরের বৃদ্ধ নুরুল ইসলাম (৭০) বলেন, আল্লাহর রহমত, কোনো রকমে বাঁচতে পেরেছি। কাঁটাতারের বেড়া ভেঙে কোনো রকমে পার হয়ে প্রাণ বাঁচিয়েছি।‘মালামাল যা ছিল সবকিছুই পুড়ে গেছে। পুড়ে যাওয়ার পর এখন আমাদের আগের চেয়ে বেশি খেদমত করা হচ্ছে’, যোগ করেন ক্ষতিগ্রস্ত এই বৃদ্ধ।‘আমাদের আল্লাহ ভাল রেখেছে। এর আগেও আগুন লেগে সব পুড়ে গিয়েছিল। বাংলাদেশ সরকার আমাদের বেশ সাহায্য করেছে। প্রথমে তাঁবু দিয়েছিল, সেগুলোও পুড়ে গেছে। আবার ঘর তৈরি করে দিয়েছে, তুর্কির সহযোগিতায়’, বলেন ছব্বির আহম্মদ।কক্সবাজার অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার শামসু দ্দৌজা বলেন, রোহিঙ্গা শিবিরের ইতিহাসে এটিই সবচে বড় এবং ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা। আগুনে পুড়ে কয়েকটি ক্যাম্প বিরানভূমিতে পরিণত হয়েছিল। বিশেষ করে খাবার ও পানির সংকট তীব্র হয়ে দেখা দিয়েছিল। কিন্তু দেশি-বিদেশি বিভিন্ন দাতা সংস্থা এ দুর্যোগ মোকাবিলায় দ্রুত এগিয়ে এসেছে। তাই মাত্র কয়েকদিনের মধ্যে রোহিঙ্গারা সংকট কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ পেয়েছে।মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর হাতে নির্যাতনের শিকার হয়ে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের আগে-পরে প্রায় সাড়ে আট লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন। এছাড়া নতুন পুরনো মিলে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা কক্সবাজারে উখিয়া-টেকনাফের ৩৪টি শিবিরে এবং নোয়াখালীর ভাসানচরে বসবাস করছে।

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

দুর্ঘটনার আশঙ্কায় জনমনে উদ্বগে বীরগঞ্জের সড়কগুলো দাপিয়ে বড়োচ্ছে কিশোর চালকরা

সন্দ্বীপে কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনা উদ্বোধন