বাড়ি ফিরল জোড়া মাথার যমজ শিশু, সুস্থতা কামনা প্রধানমন্ত্রীর

বাড়ি ফিরল জোড়া মাথার যমজ শিশু, সুস্থতা কামনা প্রধানমন্ত্রীর

নিজস্ব প্রতিবেদক : ‘ভালো আছি’ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও রাবেয়ার প্রশ্ন, ‘তুমি কেমন আছো?’ অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে আলাদা হওয়া শিশু রাবেয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে এমনই সাবলীলভাবে কুশল বিনিময় করে। প্রধানমন্ত্রী শিশু রাবেয়ার কাছে জানতে চায়, তুমি কেমন আছো? উত্তরে রাবেয়া বলে, ‘ভালো।’ এরপরই রাবেয়া প্রধানমন্ত্রীর কাছেও জানতে চায়, ‘তুমি কেমন আছো।’ এ সময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাই হেসে ফেলেন। অনুষ্ঠানে দেশবাসীর কাছে রাবেয়া ও রোকেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী দোয়া চেয়েছেন। গতকাল রোববার দুপুরে রাবেয়া ও রোকেয়ার শুভ গৃহ প্রত্যাবর্তন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে এবং রাবেয়া ও রোকেয়া সিএমএইচ থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অংশ নেয়। এ সময় রাবেয়াকে বেশ সুস্থ মনে হয়েছে। তবে রোকেয়া বিশেষ চেয়ারে বসেছিল। রাবেয়া অনুষ্ঠান জুড়েই দুষ্টামিতে মেতে ছিল। তাকে রীতিমতো দুজনকে সামলাতে দেখা গেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে বলেন, আজকের দিনটি সত্যিই আনন্দের দিন। রাবেয়া ও রোকেয়ার কথা প্রথমে আমাকে আমার ছোট বোন শেখ রেহেনা জানিয়েছিল। সে পত্রিকায় দেখে আমাকে ছোট্ট একটা ম্যাসেজ দিয়েছিল। ম্যাসেজে লিখেছিল, ‘দেখো তাদের জন্য কিছু করা যায় কিনা।’ আমি তখন ডা. সামন্ত লালের সঙ্গে যোগাযোগ করি। এরপর শিশু দুটিকে ঢাকায় আনা হয়। এই শুরু। এরপর শিশু দুটিকে অস্ত্রোপচার করে আলাদা করা হয়েছে। তারা আজ বাড়ি যাবে। বাংলাদেশের ঘটনাবহুল এই মার্চ মাসে তারা বাড়ি যাচ্ছে। এটা আনন্দের। তিনি বলেন, এই চিকিৎসা শুরু হওয়ার পর এ নিয়ে প্রত্যেকের ভেতরেই আগ্রহ ছিল। হাঙ্গেরির একদল চিকিৎসা বেগম ফজিলাতুন্নেসা হাসপাতাল দেখতে এসেছিল। সেখানে তারা প্রশিক্ষণ দিয়েছিল। তাদেরও বিষয়টি জানালো হলো। এরপর আমি হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রীকে ম্যাসেজ দেই, সাক্ষাতেও তার সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলি। তিনিও সহযোগিতার কথা বললেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরপর কোথায় আলাদা করা হবে সেটা নিয়ে একটু সিদ্ধান্তহীনতা ছিল। পরে সিএমএইচে হলো। সিএমইচকে সেভাবে প্রস্তুত করা হয়েছে। অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে সবাই কাজ করেছেন। অপারেশনে সব বিশেষজ্ঞকে একত্র করা হয়েছে। তারা সফল হয়েছেন। শিশু দুটির ৪৮টি অপারেশন হয়েছে। এটি কম কথা নয়। সিএমএইচে শিশু দুটির দীর্ঘদিন চিকিৎসা দেওয়া এবং পরিচর্যা করায় সকল চিকিৎসক ও কর্মীদের প্রধানমন্ত্রী ধন্যবাদ জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুজিব জন্মশতবার্ষিকী পালন করছি, সেই বছর এরকম সফল অস্ত্রোপচার করা আমাদের জন্য বড় অর্জন। রাবেয়া রোকেয়ার জন্য সবাই দোয়া করবেন। তারা যেন সুস্থ থাকে এবং বাবা মায়ের বুকে আনন্দ নিয়ে আসতে পারেন সেজন্য দেশবাসী দোয়া করবেন। এ সময় সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ বলেন, ‘এই শিশু দুটির চিকিৎসায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী যুক্ত হওয়ায় আমরা গর্বিত। গত ২২ জুলাই সিএমএইচে তারা এ ভর্তি হয়। এরপর তাদের অপারেশন হয়। অপারেশনে হাঙ্গেরির চিকিৎসক, সিএমএইচ, বার্ন ইউনিটের চিকিৎসকরা অংশ নেন।’ রাবেয়া ও রোকেয়া আজীবন বিনামূল্যে সিএমএইচ থেকে চিকিৎসা নিতে পারবেন বলেও তিনি ঘোষণা দেন। অনুষ্ঠানে ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী হয়ে আমার কাছে শিশু দুটি যখন আসে, আমি ভাবতে পারেনি আমরা তাদের আলাদা করতে পারবো কিনা। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী বললেন, তোমরা শুরু করো, আমি আছি তোমাদের সঙ্গে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের চিকিৎসকরা সুযোগ পেলে অসাধ্যকে সাধন করতে পারেন।’ রাবেয়া ও রোকেয়ার মা তাছলিমা বেগম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘আমরা যখন এসেছিলাম, আমরা ভেবেছিলাম খালি হাতে যাবো। কিন্তু আমরা খালি হাতে যাচ্ছি না। আমরা এবং আমাদের পরিবার কখনও আপনার এই অবদানের কথা ভুলবো না।’ তিনি রাবেয়া ও রোকেয়ার চিকিৎসকদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ১ আগস্ট থেকে ৩ আগস্ট পর্যন্ত প্রায় ৩৩ ঘণ্টা বিপদমুক্ত অপারেশন সফলতার সঙ্গে সম্পন্ন করতে সক্ষম হন চিকিৎসকরা। গত ২৭ অক্টোবর হাঙ্গেরি থেকে আগত ৪ জন চিকিৎসকের উপস্থিতিতে দেশের সামরিক ও অসামরিক চিকিৎসকদের সমন্বয়ে শিশু রাবেয়ার অপারেশন কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে তারা ঢাকার সিএমএইচে চিকিৎসাধীন ছিল। ২০১৬ সালের ১৬ জুলাই পাবনা জেলার অন্তর্গত চাটমোহর থানার গ্রামের শিক্ষক দম্পতি রফিকুল ইসলাম ও তাছলিমা বেগমের ঘরে জন্মগ্রহণ করে জোড়া মাথার যমজ বাচ্চা। এরূপ জোড়া মাথার বাচ্চা আলাদাকরণ কার্যক্রমে সফলতা অর্জনের উদাহরণ অত্যন্ত কম। জোড়া মাথার যমজ শিশুর জন্য সামাজিকভাবে হেয় হতে হয়েছে বাবা-মাকে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় প্রথম এবং বিশ্বের ১৭তম ঘটনা এটি, যা বাংলাদেশের চিকিৎসা বিজ্ঞানের জন্য একটি মাইলফলক।

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

বাকেরগঞ্জে বিদ্যুৎ স্পর্শ হয়ে একই পরিবারের ৩ জনের মৃত্যু

মাদারীপুরে সুশাসন প্রতিষ্ঠার নিমিত্ত অংশীজনের (Stakeholders) অংশগ্রহণে মতবিনিময় সভা