নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশের শিশুদের জন্য ‘সুন্দর-শান্তিময়’ আবাসস্থল নির্মাণে সবাইকে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে শিশু-কিশোরদের একটি অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব এই আহ্বান জানান। তিনি বলেন, স্বাধীনতার এই ৫০ বছরে আমরা শিশুদের জন্য কি সত্যিকার অর্থে একটা ভালোবাসার দেশ, একটা প্রেমের দেশ, একটা স্বপ্নের দেশ নির্মাণ করতে পেরেছি? তখন নিজের কাছে একটা ঘৃণা আসে, ধিক্কার আসে যে না আমরা সেটা করতে পারিনি। আমরা আমাদের শিশুদের জন্য সেই আবাসস্থল তৈরি করতে পারিনি যেখানে তারা নিরাপদে গড়ে উঠবে মানুষের মতো। সেখানে সত্যিকার অর্থেই ভালোবাসা, শান্তিময় একটা জগত তৈরি করা সম্ভব হবে। তিনি বলেন, ‘সবার কাছে আমার আহ্বান থাকবে যে, আসুন আমরা সবাই মিলে উদ্যোগ নিই, চেষ্টা করি যে, আমরা আমাদের শিশুদের জন্য সত্যিকার অর্থেই একটা শান্তিময় নিরাপদ পৃথিবী গড়ে তুলি, একটা জগত গড়ে তুলি। আসুন আমরা সবাই মিলে এই বাংলাদেশটাকে সত্যিকার অর্থেই হাসি-গান আর ফুলের একটা দেশ বানিয়ে তুলি। এটাই হোক আমাদের লক্ষ্য। মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের অনেক বয়স হয়েছে। আমরা কিছু পরে হয়ত পৃথিবী ছেড়ে চলে যাব। এই সময়ে কোভিডের মধ্যে আমাদের অনেক গুণী মানুষ চলেও গেছেন। আমরা দেখে যেতে চাই সত্যিকার অর্থেই বাংলাদেশ শিশুদের জন্যে সুন্দর, ন্যায়ভিত্তিক, সত্যভিত্তিক জগত আমরা তৈরি করতে পেরেছি। বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, বার বার করে আমার মনে হয় যে, শিশুদের জন্য আবাসস্থল না করতে পারায় দায় আমাদের। আমরা যারা এদেশ স্বাধীন করেছিলাম, লড়াই করে যুদ্ধ করে, আমরা যারা কথা দিয়েছিলাম যে, এই দেশ একটা গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করব, এই সমাজকে, এই রাষ্ট্রকে আমরা সহনশীল, উদার একটা রাষ্ট্র গঠন করবো কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য পুরোপুরিভাবে সেটা আমরা করতে পারিনি। আমরা নিজেদের মধ্যে দলাদলি করেছি, কোন্দল করেছি, বিভক্ত হয়েছি। একাত্তরের স্মৃতিচারণ করে মির্জা ফখরুল বলেন, এই বছর আমাদের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূরণের বছর, এই মাসটা স্বাধীনতার মাস। এই মাসে বাংলাদেশের মানুষেরা আমরা নিজেদেরকে মুক্ত করবার জন্য পাকিস্তান শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমেছিলাম। শিশুদের উন্নয়ন ও বিকাশে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের নানা পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে বাংলাদেশ টেলিভিশনে ‘নতুনকুঁড়ি’ অনুষ্ঠান চালুর কথাও তুলে ধরেন ফখরুল। তিনি বলেন, অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল নতুনকুড়ি অনুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে অনেক অনেক শিল্পী নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে। আমি জানি, অনেকে রাজনৈতিক অঙ্গনে গিয়ে মন্ত্রীও হয়েছেন। এটা যখন বন্ধ হয়ে যায় তারপরেই জিয়া শিশু অ্যাকাডেমি ও শাপলাকুঁড়ি প্রতিযোগিতা শুরু হয়। কাকরাইলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশনের মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি মিলনায়তনে বাংলাদেশ জিয়া শিশু অ্যাকাডেমির উদ্যোগে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ১১তম জাতীয় শিশু শিল্পী প্রতিযোগিতা ‘শাপলা কুঁড়ি-২০১৯’ এর পুরস্কার বিতরণী উপলক্ষে এই অনুষ্ঠান হয়। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি মির্জা ফখরুল নিজ হাতে শিশুদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন। এই প্রতিযোগিতায় সারাদেশে ২২ হাজার ক্ষুদে শিল্পীরা বাছাই পর্বে অংশ নিয়ে চূড়ান্ত পর্বে ৪৭৬ জন উত্তীর্ণ হয়। অনুষ্ঠানে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে শিক্ষায় অধ্যক্ষ সেলিনা আখতার, স্বাস্থ্য সেবায় অধ্যাপক হাসিনা আফরোজ, সঙ্গীতে এএসএম শফি মণ্ডল, শিল্পায়নে আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ, প্রবাসীকল্যাণে খান মনিরুল মনি, জনপ্রতিনিধি মনিরুল আলম সেন্টু ও আদর্শ মা মৌসুমি সাহাকে ‘কমল পদক-২০২০’ প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে ক্ষুদে শিল্পীদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। জিয়া শিশু অ্যাকাডেমির নির্বাহী মহাপরিচালক এম হুমায়ুন কবীরের সভাপতিত্বে এবং মাশুক সিদ্দিকী ও নওশিন রথির সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অ্যাকাডেমির পৃষ্ঠপোষক এলবার্ট পি কস্টা, কণ্ঠশিল্পী খুরশীদ আলম, জিনাত রেহানা, সামিনা আখতার সম্পা ও সুলতানা জামান জ্যোস্না বক্তব্য দেন।