জাতিসংঘে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত

জাতিসংঘে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত
ঢাকা: জাতিসংঘ সদর দপ্তরে যথাযোগ্য মর্যাদায় আন্তর্জাতিক আবহে উদযাপিত হয়েছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। বাংলাদেশ, ব্রাজিল, কানাডা, মিশর, জর্ডান, লিথুনিয়া ও নিউজিল্যান্ড এবং জাতিসংঘ সচিবালয় ও ইউনেস্কোর সহ-আয়োজনে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করা হয়।কোভিড-১৯ এর বিধি-নিষেধ জনিত কারণে ইভেন্টটি ভার্চ্যুয়ালি অনুষ্ঠিত হয়, যা জাতিসংঘ ওয়েভ টেলিভিশন সরাসরি সম্প্রচার করে।
মঙ্গলবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) জাতিসংঘের বাংলাদেশ স্থায়ী অফিস থেকে এ তথ্য জানানো হয়।জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতি ভলকান বজকির অনুষ্ঠানটিতে অংশ নেন ও বক্তব্য রাখেন। সহ-আয়োজক দেশসমূহের স্থায়ী প্রতিনিধিরা ছাড়াও অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন জাতিসংঘের বহুভাষিক সমন্বয়কারী, জেনারেল অ্যাসেম্বলি ও কনফারেন্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল এবং জাতিসংঘের বৈশ্বিক যোগাযোগ বিভাগের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল।এছাড়া ইউনেস্কো মহাপরিচালকের ভিডিও বার্তা এবং নিউইয়র্ক সিটি মেয়রের বার্তা উপস্থাপন করা হয় ভার্চ্যুয়াল ইভেন্টটিতে। স্প্যানিশ ভাষাভাষী বন্ধু-দেশগুলোর পক্ষে এ সভায় বক্তব্য রাখেন জাতিসংঘে নিযুক্ত পর্তুগালের স্থায়ী প্রতিনিধি।অনুষ্ঠানটিতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা। স্বাগত বক্তব্যের শুরুতেই তিনি বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি প্রাণ উৎসর্গকারী সকল ভাষা শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেন।বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি বলেন, ভাষা শহীদদের এই আত্মত্যাগের ফলেই ‘বাংলা’ রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা লাভ করেছে।রাষ্ট্রদূত ফাতিমা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, জাতির পিতা ১৯৫২ ভাষা আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন আর এই ভাষা আন্দোলনের পথ ধরেই ১৯৭১ সালে আমরা অর্জন করেছি মহান স্বাধীনতা।যে সকল প্রবাসী বাংলাদেশীরা বাংলা ভাষাকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা করার জন্য প্রথম উদ্যোগ নিয়েছিলেন তাদের ধন্যবাদ জানান বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি। প্রবাসী বাংলাদেশিদের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে সেই সময়ের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইউনোস্কোর সাথে সরকারিভাবে যোগাযোগ স্থাপন এবং বিষয়টি এগিয়ে নিতে যে বিচক্ষণ ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলেন তা গভীর কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করেন তিনি।পৃথিবীর বিলুপ্তপ্রায় ভাষা সমূহের সংরক্ষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজধানী ঢাকায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেছেন বলে উল্লেখ করেন রাষ্ট্রদূত ফাতিমা। বাংলা ভাষাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘে যে প্রস্তাবনা রেখেছেন তা পুনরুল্লেখ করেন তিনি।সাধারণ পরিষদের সভাপতি ভলকান বজকির জাতিসংঘে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপনে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনকে ধন্যবাদ জানান। সাধারণ পরিষদের সভাপতিসহ অন্যান্য বক্তারা জাতিসংঘ কর্তৃক আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি আদায়ে অনন্য ভূমিকার কথা তুলে ধরেন। এছাড়া মাতৃভাষা ও বিশ্বব্যাপী বহুভাষিকতা এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যে নেতৃত্বশীল ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে তার ভূয়সী প্রশংসা করেন বক্তারা।বক্তারা বহুভাষিকতার গুরুত্ব বিশেষ করে কোভিড-১৯ এর প্রেক্ষাপটে বহুভাষিকতার তাৎপর্য ও প্রাসঙ্গিকতা তুলে ধরেন। ভাষা ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের সংরক্ষণ এবং শিক্ষা ও যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে তা ব্যবহার এখন যে কোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি জরুরি হয়ে উঠেছে বলে উল্লেখ করেন তারা।বহুভাষিক উপাদানের সমন্বয়ে অনুষ্ঠানটিতে বর্ণাঢ্য এক সাংস্কৃতিক পর্ব পরিবেশিত হয়। ভাষা ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যকে উজ্জ্বীবিত রাখার লক্ষ্যে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের বহুভাষিক উপাদানের সমন্বয়ে তিনটি ভিন্নমাত্রার সঙ্গীত পরিবেশন করে ইউএন চেম্বার মিউজিক সোসাইটি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার বিলুপ্তপ্রায় ভাষা ‘খোসা-এর একটি অপেরা সঙ্গীত, ফ্রেঞ্চ ভাষার একটি যন্ত্রসঙ্গীত এবং জাপানি শিল্পী পরিবেশিত একটি রবীন্দ্র সঙ্গীত।অনুষ্ঠানটিতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের থিমসং ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ এর ভিন্ন মাত্রার পরিবেশনা সবারই নজর কাড়ে। বাংলাদেশের এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব উইমেনের শিক্ষার্থীরা বহুভাষার সমন্বয়ে গানটি পরিবেশন করেন। জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক স্কুলের শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় ৩৮টি ভাষায় ক্ষুদে ভিডিও বার্তা অনুষ্ঠানটিতে আলাদা মাত্রা এনে দেয়।ভার্চ্যুয়াল এই অনুষ্ঠানে জাতিসংঘ সদস্য দেশসমূহের উচ্চ পর্যায়ের কূটনীতিক, জাতিসংঘের কর্মকর্তা, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

সারা দেশে ‘হিট স্ট্রোকে’ ৮ জনের মৃত্যু

কারাগারেও মাদকের আখড়া