হালে পানি পাচ্ছে না দ্বিতীয় পদ্মা সেতু

হালে পানি পাচ্ছে না দ্বিতীয় পদ্মা সেতু

রনি বালো : অনেক ঢাক-ঢোল পিটিয়ে সেতু বিভাগ বলেছিল ২০১৩ সালের শুরুতে দ্বিতীয় পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের কাজ শুরু করার কথা। আদৌ কি এ প্রকল্প হবে, না হবে না এ নিয়েও কোন সারাশব্দ নেই।
এদিকে এ সেতুর অর্থায়ন এবং নির্মাণের জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বানের আট বছর পরেও কাঙ্খিত সাড়া পাওয়া যায়নি। অগ্রগতিও নেই এ প্রকল্পের এবং কবে নাগাদ দরপত্রের প্রক্রিয়া শেষ করা হবে সে সম্পর্কে সেতু বিভাগ কিছুই বলতে পারেনি। ফলে এ প্রকল্পের ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
৬ দশমিক ১০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য রেলপথসহ মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ও রাজবাড়ী জেলার দৌলতদিয়া প্রয়েন্টে ২য় পদ্মা সেতু বাস্তবায়নে পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন স্থগিত করার পর উন্নয়ন সহযোগীদের অর্থ ছাড়াই দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণের প্রস্তুতি চূড়ান্ত করে সেতু বিভাগ।
২০১১ সালের ২৭ অক্টোবর অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি অনুমোদন দেয়। ২০১৩ সালের শুরুতে এ প্রকল্পের কাজ শরু হবার কথা থাকলেও সে লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না বলে মনে করছেন অভিজ্ঞ মহল। অনুসন্ধান ও সংশ্লিস্ট সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) ভিত্তিতে দ্বিতীয় পদ্মা বহুমুখী সেতুর অর্থায়ন এবং নির্মাণের জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহবান করা হয় গত ২০১১ সালের ৪ নভেম্বর (শুক্রবার)। যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের ( বর্তমানে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়) সেতু বিভাগের অধীনে এ দরপত্র আহবান করা হয়।
দরপত্র বিষয়ে বিস্তারিত জানতে বাংলাদেশ ব্রিজ অথরিটির (বিবিএ) ওয়েবসাইট িি.িননধ.মড়া.নফ ভিজিট করতে বলা হয় এবং আবেদনের মূল কপির সঙ্গে দুইটি ফটোকপি বিবিএ-র নির্বাহী পরিচালকের ঠিকানায় ২০১২ সালের ১০ জানুয়ারি বেলা ১২টার মধ্যে জমা দিতে বলা হয়। কিন্তু নয় বছর ১ মাস ৯দিনেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
সেতুটি নির্মাণ প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় ১৩ হাজার ১২১ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। দ্বিতীয় পদ্মা সেতু বাস্তবায়িত হলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে পূর্বাঞ্চলের সাথে মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, মাগুরা, রাজবাড়ী, ফরিদপুর ও নড়াইলের একাংশ, গোপালগঞ্জ, যশোর এবং মাদারীপুর জেলাসহ ১৩টি জেলার প্রায় ৫ কোটি মানুষের যাতায়াত ব্যবস্থাসহ তাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের সহায়ক হতো বলে সেতু বিভাগের অভিমত ছিল।
দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলবাসীর যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নে সরকার মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া-রাজবাড়ির গোয়োলন্দ অবস্থানে ২য় পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহন করে। এছাড়া গত ও বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারেও পাটুরিয়া-গোয়ালন্দ অবস্থানে ২য় পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের বিষয়টি উল্লেখ ছিল।
পদ্মা নদীর উপর সেতু নির্মাণের জন্য জাপান-ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)’র প্রথম সমীক্ষা করে প্রাথমিক পর্যায়ে পাটুরিয়া-গোয়ালন্দ অবস্থানে দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য সুবিধাজনক স্থান হিসেবে চিহ্নিত করে।
প্রাথমিক উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (পিডিপিপি) ও উন্নয়ন প্রকল্প ছক (ডিপিপি) গত ২০০৯ সালের ২৬ আগস্ট মাসে পরিকল্পনা কমিশন নীতিগতভাবে অনুমোদন করে। প্রকল্পটি নীতিগত অনুমোদনের পর বিশ্বব্যাংক, চীনসহ অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাসমূহকে অর্থায়নের বিষয়ে অনুরোধ জানানো সত্বেও এখন পর্যন্ত কোন ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়নি।
পাটুরিয়া-গোয়ালন্দ অবস্থানে দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণে দাতাদের অর্থ সহায়তা ছাড়াই সরকার ডিজাইন বিল্ট পদ্ধতিতে এ সেতু নির্মাণ করা হবে বলে জানিয়েছে সেতু বিভাগ। যেখানে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান সেতুতে নিজেই অর্থায়ন করবে এবং দীর্ঘমেয়াদে টোলের টাকায় নির্মাণ খরচ তুলে আনবে।
পাটুরিয়া-গোয়ালন্দ পয়েন্টে দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হলে দেশের পশ্চিমাঞ্চলের মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, মাগুড়া, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, নড়াইল, যশোরের সঙ্গে ঢাকাসহ পূর্বাঞ্চলের দূরত্ব কমে যাবে। বাস্তবায়নাধীন মাওয়া-জাজিরা পয়েন্টের পদ্মা সেতু দিয়ে তাদের চলাচল করতে হবে না। ফলে সময় ও অর্থের সাশ্রয় হবে এবং এ এলাকার অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বহুগুণ বেড়ে যাবে।
সেতু বিভাগের সচিব মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন এর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তবে তার দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে বর্তমানে দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণে পিডিপিপি অনুমোদিত হয়েছে। বৈদেশিক অর্থায়নের প্রচেস্টাও গ্রহণ করা হয়েছে বলে সেতু বিভাগ সূত্র জানায়।
তবে এ বিষয়ে সূত্র জানায়, প্রথম সেতু চালুর পর দ্বিতীয় সেতুর কাজ শুরুর একটি পরিকল্পনা ছিলো। তবে সে বিষয়ে এখন সেতু বিভাগের কোনো পরিকল্পনা নেই। এর আগে ২০২১ সালের মে-জুন নাগাদ দ্বিতীয় সেতুর বিস্তারিত সমীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিলো। যুক্তরাজ্য, কোরিয়া ও স্পেনের তিনটি প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে এ সমীক্ষার কাজ করার কথা ছিলো।
এত পরিকল্পনার কোনোটিই গত নয় বছরে আলোর মুখ দেখেনি। দীর্ঘ এ সময়ে সেতু নির্মাণের জন্য অর্থায়নে আগ্রহী কোনো দেশ বা সংস্থা পাওয়া যায়নি।

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণের ৮ মাস না পেরোতেই ভাঙন

সিন্ডিকেটের কারনে আলুর দামের উর্ধ্বগতি