নিজস্ব প্রতিবেদক: বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে প্রতিশ্রুত ৬৩২ কোটি টাকা যোগাতে ব্যর্থ হয়ে এখন তা মওকুফ চায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। বকেয়া এই ‘ম্যাচিং ফান্ড’ বাবদ ৬৩২ কোটি ১৪ লাখ ৪৩ হাজার টাকা মওকুফ চেয়ে সম্প্রতি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে চসিক।বিভিন্ন প্রকল্পে নিজস্ব তহবিল থেকে চসিক এই টাকা দিতে চেয়েছিল। কিন্তু নানা কারণে দিতে পারেনি। এখন এই টাকা সরকারকে বহন করতে হবে।সোমবার (০৮ ফেব্রুয়ারি) পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় থেকে এমন তথ্য জানা গেছে।চসিকের প্রশাসক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম সুজন টাকা মওকুফ চেয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান বরাবর চিঠি দিয়েছেন। ২৫ জানুয়ারি চসিক মন্ত্রণালয় বরাবর চিঠি পাঠায়। অন্যদিকে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় চসিকের চিঠি পেয়েছে রোববার (০৭ ফেব্রুয়ারি)। চিঠিতে পরিকল্পনা মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে সুজন বলেন, আপনার সদয় আন্তরিক মনোনিবেশ প্রত্যাশা করছি। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন একটি নাগরিক সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান। একজন নাগরিকের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সব ধরনের নাগরিক সেবা নিশ্চিত করা সিটি করপোরেশনের মূল দায়িত্ব। দুষণ মুক্ত, যানজটমুক্ত, পরিচ্ছন্ন একটি আধুনিক উন্নত নগর গঠন ও নাগরিক সেবা নিশ্চিত করার জন্য চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। এ সকল প্রতিজ্ঞা পূরণে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ইতোমধ্যে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে যা বর্তমানে বাস্তবায়নের পথে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নিজস্ব রাজস্ব এবং বিভিন্ন প্রকল্পের বিপরীতে সরকার থেকে প্রাপ্ত বরাদ্দ দিয়ে উন্নত নাগরিক সেবা প্রদান নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না।মহাসড়ক, সড়ক, নর্দমা, রাস্তা, মেরামত/সংস্কার ও পরিচ্ছন্ন রাখা, মশক নিধন এবং সর্বত্র আলোকায়ন নিশ্চিত করা অত্যন্ত ব্যয়বহুল কর্মযজ্ঞ। এ বিশাল কর্মযজ্ঞ সম্পাদনের জন্য প্রাপ্ত অর্থ খুবই অপ্রতুল। আর্থিক দৈন্যতার কারণে নাগরিক সেবার মান নাগরিকদের প্রত্যাশা অনুযায়ী বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। অত্র করপোরেশনের নিজস্ব রাজস্ব আয়ের স্বল্পতার কারণে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় থেকে প্রাপ্ত বরাদ্দের বিপরীতে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ ম্যাচিং ফান্ড নিশ্চিত করা খুবই কঠিন। এছাড়া এক সময় নগর শুল্ক থেকে প্রাপ্ত আয় ছিল অন্যতম প্রধান রাজস্ব। কিন্তু আশির দশকে সরকার সেটি বন্ধ করে দিয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর পরিচালিত আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব আয় প্রসারের লক্ষ্যে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকায় আমদানি-রপ্তানি কাজে নিয়োজিত যানবাহন চলাচলের সুবিধার্থে সড়ক মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সিটি করপোরেশন প্রচুর অর্থ ব্যয় করে থাকে। বর্তমানে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকেল্পের ম্যাচিং ফান্ড বাবদ বকেয়া ৬৩২ কোটি ১৪ লাখ ৪৩ হাজার টাকাসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আনুতোষিক বাবদ প্রায় ৮৩০ কোটি টাকার বিশাল অর্থ ঘাটতির বোঝা নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এমতাবস্থায় বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের ম্যাচিং ফান্ড বাবদ বকেয়া ৬৩২ কোটি ১৪ লাখ ৪৩ হাজার টাকা মওকুফের ব্যবস্থা করা হলে নগরবাসীকে কাঙ্ক্ষিত সেবা প্রদান করা এবং সরকারের প্রতিশ্রুত উন্নয়ন কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখা সম্ভব হবে। এই অর্থ মওকুফের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আপনার একান্ত ব্যক্তিগত হস্তক্ষেপ ও আন্তরিক সুবিবেচনা প্রত্যাশা করছি।চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মফিদুল আলম বলেন, উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেওয়ার সময় ২০ থেকে ৩০ শতাংশ ব্যয় গ্রহণ করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু করপোরেশনের নিজস্ব রাজস্ব আয়ের স্বল্পতার কারণে তা সম্ভব হয়নি। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় থেকে প্রাপ্ত বরাদ্দের বিপরীতে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ ম্যাচিং ফান্ড নিশ্চিত করা খুবই কঠিন। তাই আমরা এটা মওকুফের আবেদন করেছি।