বিমার আওতা বাড়লেও গ্রাহক বাড়েনি

বিমার আওতা বাড়লেও গ্রাহক বাড়েনি
ঢাকা: দেশে বিমা কাভারেজ (আওতা) উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেলেও গ্রাহকের সংখ্যা না বেড়ে এক জায়গায় স্থির হয়ে আছে।বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইআরডিএ) তথ্য মতে, ২০১৯ সালে সার্বিকভাবে দেশে জন প্রতি বিমা কাভারেজ ছিল ১০ দশমিক ৩ ডলার বা ৮৭৫ টাকা ৫০ পয়সা (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা হিসাবে); যা এক বছর আগের (২০১৮ সাল) তুলনায় ২ ডলার বেড়েছে।আইডিআরএর তথ্য মতে, বিপরীত হয়েছে বিমা গ্রহীতার সংখ্যা। সামগ্রিকভাবে ২০১৯ সালে মোট জাতীয় উৎপাদনের (জিডিপি) তুলনায় বিমা গ্রহীতার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ০ দশমিক ৫৬ শতাংশে, যা ২০১৮ সালের তুলনায় ০ দশমিক ০১ শতাংশ কমেছে।বিমা গ্রহীতার সংখ্যা জিডিপিতে বিমা প্রিমিয়ামের শতাংশ হিসাবে গণনা করা হয় এবং বিমা কাভারেজ হিসাব করা হয়ে থাকে প্রতি ব্যক্তি হিসাবে প্রিমিয়ামের অনুপাতে।নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ আইআরডিএ স্থানীয় বিমাকারী এবং অন্যান্য সামষ্টিক অর্থনৈতিক সূচক বিবেচনা করে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে উভয় মূল সূচক পরিমাপ করেছে।সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিমা গ্রহীতার সংখ্যা ও কাভারেজ বৃদ্ধি দেশের বিমা খাতের উন্নয়নকে প্রতিফলিত করে।২০১৯ সালে নন-লাইফ বিমা খাতের প্রিমিয়াম বৃদ্ধি পেয়ে বিমার আওতাকে উত্সাহিত করেছে।বিমা গ্রহীতার সংখ্যা আগের বছরের মতো প্রায় একই রকম থাকলেও জিডিপির উচ্চ প্রবৃদ্ধি বিমার আরও প্রবৃদ্ধি করেছে।প্রতিবেশী দেশের অর্থনীতির তুলনায় বাংলাদেশের উভয় সূচকই অনেক কম। ভারতের মোট জাতীয় উৎপাদনের তুলনায় বিমা গ্রহীতার সংখ্যা ৩ দশমিক ৭ শতাংশ এবং বিমার আওতা ৭৮ ডলার।আইডিআরএর কর্মকর্তাদের নানা রকম উদ্যোগের ফলে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিমা কাভারেজ বৃদ্ধি প্রতিফলিত করে বিমা গ্রহীতার গড় আকার বৃদ্ধি পেয়েছে।তারা অবশ্য বলেছেন, দেশে ‘ব্যাংক ইন্সুরেন্স’ চালু করা গেলে বিমার কাভারেজ এবং গ্রহীতা উভয় বাড়ানো যেতে পারে।বিমা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জীবন বিমা কোম্পানিগুলো ক্ষুদ্র বিমা পলিসির পরিবর্তে একক বিমার দিকে ঝুঁকছেন, যার ফলে মোট প্রিমিয়াম বেড়েছে।কয়েকটি বিমা কোম্পানির জ্যেষ্ঠ নির্বাহীরা জানিয়েছেন, সরকারি উদ্যোগে অনেক মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এসব প্রকল্প থেকে আয় বিমার কাভারেজ বৃদ্ধিতে সহায়তা করেছে।নন-লাইফ বিমা কোম্পানি রিলায়েন্স ইন্সুরেন্স কোম্পানির ব্যবস্থা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. খালেদ মামুন বলেন, সরকারের গৃহীত বড় প্রকল্পগুলোর কারণে সামগ্রিক আওতা বেড়েছে।তিনি আরও বলেন, আমার মতে, দেশে প্রচুর পরিমাণে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে, যা সামগ্রিক প্রিমিয়াম আয় বৃদ্ধিতে সহায়তা করেছে।খালেদ মামুন আরও বলেন, মহামারি কোভিড-১৯ এর কারণে ২০২০ সালে বিমার আওতা এবং গ্রাহক উভয়ই কমে গেছে।২০২০ সালের ২৬ মার্চ থেকে ৩০ মে পর্যন্ত মহামারির কারণে সাধারণ ছুটির কথা উল্লেখ করে খালেদ মামুন বলেন, আমি নিশ্চিত না। তবে লাইফ এবং নন-লাইফ বিমা ব্যবসায় চলমান মহামারির প্রভাব পড়েছে।গার্ডিয়ান লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এমএম মনিরুল আলম তপন বলেন, সব ধরনের সংস্থা এখন সাধারণ বিমা সুবিধা নিয়েছেন। যার ফলে কোম্পানিগুলোর প্রিমিয়াম আয় বেড়েছে।তিনি আরও বলেন, অনেক গ্রাহক ১০ থেকে ২০ মিলিয়ন টাকার বড় পলিসি নিয়েছেন।মেঘনা লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নারায়ণ চন্দ্র রুদ্র বলেন, গত কয়েক বছরে নিয়ন্ত্রক সংস্থা কিছু উদ্যোগ সহজ করেছে। যার ফলে আমাদের প্রিমিয়াম আয়ের সুবিধা পাচ্ছি। বিদেশে পুনরায় বিমাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে উৎসাহ দেওয়া হয়। আমরা এখন পুনঃবিমাকারীর পূর্ব অনুমোদন ছাড়াই ৭ মিলিয়ন টাকা পর্যন্ত একক বিমা নিতে পারি।দেশে বর্তমানে ৪৫টি নন-লাইফ এবং ৩৩টি লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানি রয়েছে। লাইফ ইন্সুরেন্সগুলোর বার্ষিক প্রিমিয়াম আয়ের পরিমাণ প্রায় ৯৬ বিলিয়ন টাকা এবং নন-লাইফ কোম্পানিগুলোর প্রিমিয়াম আয় প্রায় ৪৭ বিলিয়ন টাকা।

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

দুর্ঘটনার আশঙ্কায় জনমনে উদ্বগে বীরগঞ্জের সড়কগুলো দাপিয়ে বড়োচ্ছে কিশোর চালকরা

সন্দ্বীপে কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনা উদ্বোধন