চট্টগ্রাম থেকে ফিরে: চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লা এলাকার মোমিন রোডে অবস্থিত দস্তগীর হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট। আলো ফোটার আগে ফজরের সময় থেকেই ভোজনরসিকদের আনাগোনা শুরু হয় হোটেলটিতে।এরপর ধীরে ধীরে এ জমায়েত পরিণত হয় ভিড়ে। যা লেগে থাকে মধ্যরাতে হোটেল বন্ধের সময় পর্যন্ত।হোটেলটিতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভোর ৬টায়ও বেশ ভিড়। এখানে আসা অতিথিরা বলছেন, মূলত পায়া এবং নলি দিয়ে সকালের নাস্তা সারতেই ভোজনরসিকদের এতো ভিড়। এখানকার অন্যতম আকর্ষণ এটিই।
শুধুই হাইপ নাকি খাবারেও স্বাদ আছে? খাবার চেখে দেখা মাত্রই এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে। তন্দুর রুটি আর পায়া বা নলি যারা খাবেন তাদের হাত বেশ চেটেপুটেই খেতে হবে।
এখানকার খাবার এতটাই জনপ্রিয় যে, কানাডিয়ান ফুড ব্লগার ট্রেভর জেমস এর ‘দ্য ফুড রেঞ্জার’ নামক ফুড ব্লগিং প্ল্যাটফর্মেও দস্তগীর হোটেল নিয়ে ফিচার প্রকাশিত হয়েছে।
জানা যায়, পাকিস্তান আমল থেকেই চালু ছিল দস্তগীর হোটেল। তখন এর বাবুর্চি ছিলেন একজন অ-বাঙালি। কালের পরিক্রমায় বাঙালিদের ব্যবস্থাপনায় এখন হোটেলটি চলছে।
হোটেলটির ম্যানেজার নুরে আলম বলেন, ৬০ থেকে ৬৫ বছর আগে হোটেলটি চালু হয়। তখন এক বিহারী এর বাবুর্চি ছিলেন। এখন এর মালিকের নাম আলাউদ্দিন। আর বাবুর্চির নাম ফারুক। শহরের সবাই আমাদের খাবার পছন্দ করেন।
নুরে আলম আরও বলেন, সকাল সাড়ে চারটার দিকে আমাদের হোটেল চালু হয়। শুক্রবার চারটায় চালু হয়। চলে একদম রাত ১২টা পর্যন্ত। সকালে বেশি বিক্রি হয় পায়া, নলি, চনার ডাল। সকাল আটটা সাড়ে আটটার মধ্যে পায়া নলি শেষ হয়ে যায়। পায়া এবং নলি দুইটাই বাটি ১৫০ টাকা। সকালের নাস্তার পরে দিনের অন্যান্য সময় ভারী খাবারের আইটেম থাকে। সন্ধ্যায় সন্ধ্যার নাস্তার আইটেম থাকে।তবে হোটেলটির অন্যতম আকর্ষণ সকালের পায়া-নলির প্রতিই বেশি টান ভোজনরসিকদের। সকালের আলো ফোটার আগেই নগরীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অতিথিরা চলে আসেন এখানে। সকাল ৬টার দিকেও হোটেলটির বাইরে পার্ক করে রাখা মোটরবাইকের সারি দেখা যায়।
আগ্রাবাদ এলাকার ব্যবসায়ী তারেক জামিল মাঝে মাঝেই সস্ত্রীক হোটেলটিতে আসেন সকালের নাস্তার জন্য। তিনি বলেন, ফজরের নামাজ পড়েই দুজনে চলে আসি এখানে মাঝে মাঝে। নেহারির পায়া আর নলি দিয়ে নাস্তা করি। একটু দেরি করলেই কখনও কখনও আর খাবার পাওয়া যায় না। এই সকালেও খুব ভিড় থাকে। তবে এখানকার খাবার সুস্বাদু এবং এখানকার কর্মীরাও বেশ আন্তরিক।
তৌহিদ হোসেন পাভেল নামের এক বাইকার বলেন, ঢাকা থেকে বাইক চালিয়ে কক্সবাজার যাচ্ছি। ঢাকায় এই হোটেলটির অনেক নাম শুনেছি। ইউটিউব, ফেসবুকে এর ভিডিও ও রিভিউ দেখেছি। তাই ঢাকা থেকেই প্ল্যান ছিল ভোরে এখানে নাস্তা করে যাব। প্রায় ৩০০ কিলোমিটার বাইক চালিয়ে এখানে নাস্তা করতে আসা বিফল হলো বলে মনে হচ্ছে না। খাবার বেশ সুস্বাদু। নলির রেসিপি যেমন হওয়া উচিত তেমনই এখানকারটা।