থানাগুলোকে রিমোট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের আওতায় আনার উদ্যোগ

থানাগুলোকে রিমোট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের আওতায় আনার উদ্যোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক : পুলিশ সদর দফতর সারাদেশের সাড়ে ৬শ’ থানা ‘রিমোট মনিটরিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের’ আওতায় আনার উদ্যোগ নিয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় ‘অপারেশন কন্ট্রোল এণ্ড মনিটরিং সেন্টার’ বসানো হবে। আর ওই সেন্টার দেশের প্রতিটি থানার ডিউটি অফিসারের কক্ষ, হাজতখানা, সেন্ট্রিবক্স নিয়ন্ত্রণ করবে। পুলিশ বিভাগে এটাই হচ্ছে প্রথম ডিজিটাল পর্যবেক্ষণ পদ্ধতি। নতুন প্রযুক্তিতে পুলিশ প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে থানা পুলিশ চালু হলে ঘুষ, দুর্নীতি, দুর্ব্যবহার, অনিয়ম, অন্যায়, অব্যবস্থাপনা, দায়িত্বে অবহেলা। পরীক্ষামূলক হিসেবে ঢাকা রেঞ্জের ১৩ জেলার ৯৬ থানাকে এই প্রকল্পের আওতায় এনে কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। পুলিশ সদর দফতর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, নতুন প্রযুক্তিতে পুলিশ কর্মকর্তাদের যখনই কোন থানার কার্যক্রমে অসঙ্গতি চোখে পড়ছে, তখনই তার স্ক্রিন শট নিয়ে নেয়া হচ্ছে। হিকভিশন ব্র্যান্ডের ইজেটভিআইজেট ক্যামেরার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্য লাইভে কথা বলে। অপারেশন্স কন্ট্রোল এণ্ড মনিটরিং সেন্টার পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে সেবা প্রার্থীও কথা বলছে। অপারেশন্স কন্ট্রোল এণ্ড মনিটরিং সেন্টারে কর্মরত কর্মকর্তারা কথা বলার পাশাপাশি থানার লাইভ ভিডিও দেখতে পেলেও থানার পুলিশ সদস্যরা কোন ভিডিও ফুটেজ দেখতে পায় না। কোন ধরনের অসামঞ্জস্য দেখে যখন ঢাকা রেঞ্জের অফিসে স্থাপিত অপারেশন্স কন্ট্রোল এণ্ড মনিটরিং সেন্টার থেকে কথা বলা হচ্ছে, শুধুমাত্র তখনই সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তা, সেবা প্রার্থীসহ উপস্থিতরা অনেক ক্ষেত্রেই চমকে উঠছে। প্রাথমিকভাবে অনেকেই বুঝতে পারছে না কোথা থেকে আওয়াজ আসছে। কোন কোন পুলিশ সদস্য এমনও মনে করছে তার পাশে থাকা ওয়্যারলেস সেট থেকেই বুঝি কথা বলা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, একজন ইন্সপেক্টর, একজন এসআই এবং দুজন কনস্টেবল সার্বক্ষণিকভাবে রিমোট মনিটরিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের আওতায় আনা অপারেশন্স কন্ট্রোল এণ্ড মনিটরিং সেন্টারে দায়িত্ব পালন করে। কোন অসঙ্গতি দেখা গেলে সঙ্গে সঙ্গে তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়। অপারেশন্স কন্ট্রোল এণ্ড মনিটরিং সেন্টার পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলার পর ঘটনার গুরুত্ব অনুযায়ী বিষয়টি সংশ্লিষ্ট থানার কর্মকর্তা ইনচার্জ (ওসি), জেলার পুুলিশ সুপারকে (এসপি) জানানো হয়। তারপর ঘটনার গুরুত্ব অনুযায়ী পুলিশ সুপার বা কর্মকর্তা ইনচার্জ সঙ্গে সঙ্গেই যথাযথ কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধ, জাতীয় স্মৃতিসৌধ, চারটি ফেরিঘাট এবং মহাসড়কের রোড জংশন, বিভিন্ন জাতীয় দিবস এবং ধর্মীয় উৎসবসহ বিভিন্ন কর্মসূচি অপারেশন্স কন্ট্রোল এণ্ড মনিটরিং সেন্টার আওতায় আনা হবে। এই পরিকল্পনা ঢাকা রেঞ্জের ১৩ জেলার ৯৬ থানায় চালু হয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, রিমোট মনিটরিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের আওতায় আনা অপারেশন্স কন্ট্রোল এণ্ড মনিটরিং সেন্টার প্রকল্পটি পরীক্ষামূলক। প্রাথমিক পর্যায়ে পুলিশ সদস্যদের ত্রুটি-বিচ্যুতি ধরা পড়লেও কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। তবে পর্যায়ক্রমে পুলিশ প্রশাসন কঠোর হবে। বর্তমানে থানার ডিউটি অফিসারের বিরুদ্ধে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রায়ই নানা ধরনের অভিযোগ আসে। কোন কোন সময় অভিযোগ আসে- আটক বা গ্রেফতারের পর হাজতখানায় আসামিদের নির্যাতন করা হয়।
এদিকে কোন থানার ওসি, সার্কেল এসপি বা জেলার এসপি যদি এ মনিটরিং কার্যক্রমে যোগ দিতে চায় তাহলে অবশ্যই তাকে ডিআইজি কার্যালয়ের অনুমতি নিতে হবে। পরে পুলিশ সদর দফতরে এ ধরনের পরিকল্পনা স্থাপন করা হলে অবশ্যই পুলিশের সদর দফতর থেকে অনুমতি নিতে হবে। পাশাপাশি সেবাপ্রত্যাশীদের জন্য ডিউটি অফিসারের কক্ষে চকোলেট, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ফোন নম্বর লেখা কার্ড এবং জিডির ফরম আছে কিনা তা নতুন সিস্টেমে ভালভাবে মনিটরিং করা হচ্ছে। সেবাপ্রার্থীরা কত সময় থানায় বসে আছে, সেবাপ্রার্থীদের প্রতি ডিউটি অফিসারের সাড়া কেমন, যথাযথ ড্রেসরুল অনুযায়ী অফিসার-ফোর্স-সেন্ট্রি ইউনিফর্মে আছেন কিনা, ডিউটি অফিসারের কক্ষ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন আছে কিনা ইত্যাদি বিষয় কন্ট্রোল রুম থেকে মনিটরিং করা হচ্ছে। মনিটরিং সেন্টার থেকে প্রতিদিন ভোরে এবং রাত ১০টার পর হাজতিদের বিষয়ে তথ্য নেয়া হয়।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হাবিবুর রহমান জানান, বর্তমান পুলিশ মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) ভিশন অনুযায়ী পুলিশই হবে জনগণের প্রথম ভরসার স্থল। তার পাঁচটি মূলনীতির মধ্যে তিনটি হলো দুর্নীতিমুক্ত পুলিশি সেবা, নিপীড়ন ও হয়রানিমুক্ত পুলিশি সেবা এবং পুলিশের বৃহত্তর কল্যাণ, শৃঙ্খলা ও জবাবদিহিতা বাস্তবায়ন।

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

সারা দেশে ‘হিট স্ট্রোকে’ ৮ জনের মৃত্যু

কারাগারেও মাদকের আখড়া