সুদেব কুমার সাহা : অর্থের অভাবে ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের কাজ এখনো শুরু করা সম্ভব হয়নি। বিগত ২০১৭ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি অনুমোদন পায়। প্রকল্পটির বাস্তবায়নের মেয়াদকাল আর মাত্র দেড় বছর বাকি। কিন্তু প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকার ওই প্রকল্পের কাজ এখনো সেতু বিভাগ শুরুই করতে পারেনি। জি-টু-জি পদ্ধতিতে চীনের এক্সিম ব্যাংক ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে অর্থায়ন করছে। কিন্তু একনেকে অনুমোদনের প্রায় সাড়ে ৩ বছর পার হলেও এখনো বাংলাদেশ সরকার ব্যাংকটির সঙ্গে ঋণচুক্তিই সম্পন্ন করতে পারেনি। এক্সপ্রেসওয়েটি বাস্তবায়নের মেয়াদ ছিল ২০১৭ সালের জুলাই থেকে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত। তাতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১৬ হাজার ৯০১ কোটি টাকা। তার মধ্যে ১০ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা চীনের এক্সিম ব্যাংক ও ৫ হাজার ৯৫১ কোটি টাকা বাংলাদেশ সরকার জোগান দেয়ার কথা। ২০১৭ সালের নভেম্বরে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিএমসিকে নিয়োগ করে সেতু বিভাগ। সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকায় সিএমসি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি বানিয়ে দেয়ার কথা ছিল। সেতু বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ এখনো শুরু না হওয়ায় নির্ধারিত মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। কারণ ওই কাজ বাস্তবায়ন করতে অন্তত ৪ বছর সময় প্রয়োজন। যদি চলতি বছরেও কাজ শুরু হয়, তাহলে তা শেষ করতে ২০২৪ সাল পর্যন্ত লেগে যাবে। অর্থাৎ ২ বছর বেশি সময় লাগবে। আর কোনো প্রকল্পের বাস্তবায়নকাল দেরি হলে তা প্রকল্পের ব্যয়ও বাড়িয়ে দেয়। কারণ উন্নয়ন করার জন্য ঠিকাদারদের সঙ্গে যে চুক্তি করা হয়, তাতে ‘প্রাইস অ্যাডজাস্টমেন্ট’ নামে একটা বিষয় থাকে। সাধারণত কাজের জন্য চুক্তিবদ্ধ হওয়ার ১৮ মাস পর থেকে প্রাইস অ্যাডজাস্টমেন্ট শুরু হয়। মূলত মূল্যস্ফীতির কারণে পণ্য, সেবা ও জনবল বাবদ যে খরচ বাড়ে তা প্রাইস অ্যাডজাস্টমেন্টের মাধ্যমে সমন্বয় করা হয়। সেক্ষেত্রে প্রকল্প বাস্তবায়নে যতো দেরি হবে, মূল্য সমন্বয়ের কারণে ততোই বাড়বে বাস্তবায়ন ব্যয়। ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটিও এমন সমস্যায় পড়তে যাচ্ছে।
সূত্র জানায়, মূল ডিপিপি অনুযায়ী ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ ব্যয় ১৬ হাজার ৯০১ কোটি টাকা। তাতে কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় পড়বে ৭০৪ কোটি টাকা। এখন সময় বৃদ্ধির জন্য হলেও ডিপিপি সংশোধন করতে হবে। তবে প্রকল্পের কাজ শুরু করার ৪ বছরের মধ্যেই প্রকল্পটি শেষ করার চেষ্টা করা হবে। আশা করা হচ্ছে আগামী ফেব্রুয়ারিতে প্রকল্পের কাজ শুরু করা সম্ভব হবে। তখন প্রথম দুই-তিন মাস মোবিলাইজেশনের কাজ করতে হবে। তারপর শুরু হবে মূল কাজ। তবে বেশকিছু কাজ ইতিমধ্যেই করে রাখা হয়েছে। বিশেষ করে জমি অধিগ্রহণ কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে। তাছাড়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নকশা তৈরির কাজও প্রায় শেষ। ভৌত কাজ শুরু করার আগে যেসব প্রাথমিক কাজ করতে হয়, সেগুলোও প্রায় সবই শেষ করা হয়েছে। ওসব কাজ ঠিকাদার নিজেদের টাকাতেই করেছে। যখন ঋণ চুক্তি হবে, তারপরই ওই টাকা ঠিকাদারকে পরিশোধ করা হবে।
সূত্র আরো জানায়, ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে সাভার ইপিজেড থেকে আশুলিয়া-বাইপাইল-আব্দুল্লাহপুর হয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত নির্মাণ করা হবে। বিমানবন্দর মোড় পার হয়ে চলমান ঢাকা-এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে যুক্ত হবে উড়ালসড়কটি। মূলত সাভার, আশুলিয়া, নবীনগর ও ইপিজেড সংলগ্ন শিল্প এলাকার যানজট নিরসন এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার দ্রুত উন্নয়ন করবে ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ২০টি এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ৫-৬টি জেলার মানুষ সহজে এবং দ্রুততার সঙ্গে ঢাকায় প্রবেশ করতে পারবে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সরাসরি সংযুক্ত হয়ে রফতানি পণ্য পরিবহনেও রাখবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। ডিপিপিতে বলা হয়েছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ফাইন্যান্সিয়াল আইআরআর এবং ইকোনমিক আইআরআরের পরিমাণ হবে যথাক্রমে ১৩ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ ও ১৩ দশমিক ১ শতাংশ। ফাইন্যান্সিয়াল অ্যান্ড ইকোনমিক বেনিফিট কস্ট রেশিওর পরিমাণ দাঁড়াবে যথাক্রমে ১ দশমিক শূন্য ৬ এবং ১ দশমিক ১৩। জিডিপিতে শূন্য দশমিক ২১৭ শতাংশ প্রভাব ফেলবে এই উড়ালসড়ক।
এদিকে কাগজে-কলমে ঢাকায় বর্তমানে দুটি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্প চলমান। তার একটি ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, অন্যটি ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। বিগত ২০১৫ সালে শুরু হওয়া প্রথম প্রকল্পটির কাজ ইতিমধ্যে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ দৃশ্যমান হয়েছে।
অন্যদিকে ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে প্রকল্পটির প্রকল্প পরিচালক শাহাবুদ্দিন খান জানান, চীন সরকারের ঋণে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে। সম্প্রতি চীন সরকার এ ঋণ অনুমোদন দিয়েছে। শিগগিরই বাংলাদেশ সরকারের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সঙ্গে এক্সিম ব্যাংক ঋণ চুক্তি স্বাক্ষর করবে। যেহেতু ঋণ অনুমোদন হয়ে গেছে, এখন ঠিকাদার শুধু ঋণ চুক্তির অপেক্ষা করছে। তারপরই ঠিকাদার মোবিলাইজেশন কাজ শুরু করবে। মূলত প্রকল্পের জন্য ঋণ অনুমোদন দেরি হওয়ায় এখনো কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি।