নিজস্ব প্রতিবেদক : স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল মান্নান বলেছেন, এ মুহূর্তে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে করোনা টিকা দেয়া হবে না। এ মুহূর্তে শুধুমাত্র সরকারি হাসপাতালেই এ টিকা দেয়া হবে। প্রচলিত ইপিআই কর্মসূচিতে সরকারি হাসপাতালের বাইরেও কেন্দ্র করা হয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ নতুন ধরনের টিকা হওয়ায় শুধুমাত্র হাসপাতালের ভেতরেই টিকা দেয়া হবে। গতকাল বুধবার প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভা শেষে গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল মান্নান। সচিব বলেন, টিকা দেয়ার পর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হচ্ছে কিনা তা বিশেষজ্ঞদের তত্ত্বাবধানে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে। কোনো ধরনের সমস্যা হলে যেন দ্রুত হাসপাতালে সেবা প্রদান করা যায়, সেদিকে সার্বক্ষণিক নজরদারি থাকবে। মানুষের জীবন কোনোভাবেই যেন বিপন্ন না হয় তা সর্বাগ্রে বিবেচনায় রাখা হবে। তিনি জানান, প্রতিটি ভ্যাকসিন টিমে দুজন করে ভ্যাকসিনেটর ছাড়াও নার্স, সাকমো ও এফডব্লিউভি থাকবেন। এ টিমগুলো সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত রাখবে। প্রথম মাসে ৬০লাখ, দ্বিতীয় মাসে ৫০ লাখ ও তৃতীয় মাসে আরও ৬০ লাখ ভ্যাকসিন (দ্বিতীয় ডোজ) দেয়া হবে। স্বাস্থ্যসচিব বলেন, যারা ভ্যাকসিন দেবে তাদেরকে অনেক ধরে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। ট্রেনিং অব দ্য ট্রেইনার্স (টিওটি) পদ্ধতিতে আগামী ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলবে। টিকা প্রদানে আমাদের দেশের কর্মীরা অনেক অভিজ্ঞ ও সারা দুনিয়াতে প্রশংসিত। তিনি আরও বলেন, সারাদেশে কোল্ড চেইন সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সরকারের কেনা টিকা জেলা পর্যায়ে পৌঁছে দেবে বেক্সিমকো। প্রচলিত সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি (ইপিআই) কার্যক্রমে যে চেইনের মাধ্যমে উপজেলা পর্যন্ত টিকা পৌঁছানো হয় এ ক্ষেত্রে সেভাবে পৌঁছানো হবে। ভ্যাকসিন প্রদানকারী সবাইকে টেলিমেডিসিন সেবা দেয়া হবে বলেও তিনি জানান। এদিকে বাংলাদেশকে উপহার হিসেবে ভারত সরকারের পাঠানো অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ২০ লাখ ডোজ করোনার টিকা আজ বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টায় ঢাকায় পৌঁছবে। এগুলো পরিবহনের দায়িত্ব পেয়েছে ভারতীয় বিমান সংস্থা এয়ার ইন্ডিয়া। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে এ ভ্যাকসিন গ্রহণ করবেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। এ সময় ভারতীয় হাইকমিশনারসহ অন্যান্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। সচিব জানান, ভ্যাকসিনগুলো সংরক্ষণ করা হবে তেজগাঁও ইপিআই স্টোরে। ইতোমধ্যেই স্টোর পরিদর্শন করে সার্বিক প্রস্তুতি সন্তোষজনক বলে দেখা গেছে। এছাড়া, ভারত থেকে বাংলাদেশ সরকারের কেনা ৫০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন দেশে আসবে ২৫ জানুয়ারি। তিনি আরও জানান, ভারত সরকারের শুভেচ্ছা উপহারের ২০ লাখ ও বাংলাদেশ সরকারের কেনা ৫০ লাখ ডোজ মিলিয়ে মোট ৭০ লাখ টিকার মধ্যে প্রথম মাসে ৬০ লাখ ডোজ টিকা দেয়া হবে। দ্বিতীয় মাসে ৫০ লাখ এবং তৃতীয় মাসে আবার ৬০ লাখ নাগরিককে টিকা দেয়া হবে। প্রথম মাসের ৬০ লাখের দ্বিতীয় ডোজ সংরক্ষিত থাকবে এবং প্রথম মাসে টিকা পাওয়া ব্যক্তিরা ফের তৃতীয় মাসে পাবেন। অন্যদিকে রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনা ভ্যাকসিন (টিকাদান) কর্মসূচির উদ্বোধন হবে। প্রথম দিনে সুশীল সমাজের প্রতিনিধি অর্থাৎ বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার ২০ থেকে ২৫ জন নাগরিককে টিকা দেয়া হবে। তাদের মধ্যে ডাক্তার, নার্সসহ ফ্রন্ট লাইনে যারা কাজ করছেন তারা তো থাকবেনই, এ ছাড়া শিক্ষক, মুক্তিযোদ্ধা, সেনাবাহিনী, পুলিশ, সিভিল প্রশাসন ও গণমাধ্যম কর্মীদের প্রতিনিধি থাকবেন। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তৃতা দেবেন। স্বাস্থ্যসচিব জানান, আপাতত কুর্মিটোলায় উদ্বোধন করার প্রাথমিক পরিকল্পনা থাকলেও চূড়ান্তভাবে যেকোনো হাসপাতালে তা হতে পারে। প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি প্রদান সাপেক্ষে চূড়ান্ত দিনক্ষণ ও স্থান নির্ধারিত হবে। সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের মাধ্যমে করোনার টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধনের পরবর্তী দিনে ড্রাই রান অর্থাৎ পরীক্ষামূলক হিসেবে চারটি হাসপাতাল ভ্যাকসিন দেয়ার জন্য নির্বাচিত করা হয়েছে। এগুলো হলো- ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, মুগদা জেনারেল হাসপাতাল এবং বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল। এ চারটি হাসপাতালে ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে পরীক্ষামূলকভাবে টিকা দেয়ার টার্গেট হাতে নেয়া হয়েছে। এরপর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রটোকল অনুসারে ভ্যাকসিনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া আছে কিনা তা এক সপ্তাহ পর্যবেক্ষণ করে দেখা হবে। এরইমধ্যে বেক্সিমেকো ফার্মাসিউটিক্যালসের মাধ্যমে চুক্তি অনুযায়ী জেলাগুলোতে পৌঁছে দেয়া হবে। স্বাস্থ্যসচিব আরও জানান, সম্ভাব্য আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে উপজেলা ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভ্যাকসিন দেয়া হবে। পরবর্তীতে সারাদেশে কার্যক্রম পরিচালিত হবে। ভ্যাকসিন প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচি সম্পন্ন হয়েছে। টিকা সংরক্ষণের জন্য উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত কোল্ড স্টোরেজ প্রস্তুত রাখা হয়েছে।