রাজধানীর খাল উদ্ধারে কঠোর অবস্থানে সরকার

রাজধানীর খাল উদ্ধারে কঠোর অবস্থানে সরকার

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীর খাল উদ্ধারে কঠোর অবস্থানে রয়েছে সরকার। ইতিমধ্যেই শীর্ষ পর্যায় থেকে খাল উদ্ধারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঢাকা দুই সিটি কর্পোরেশনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সে মতে চলছে অভিযান।
চলমান অভিযানে মিরপুরের ইব্রাহিমপুর খালপাড়ে ৩ তলা ভবন ভেঙে দিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। একইভাবে সমানতালে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনও (ডিএসসিসি) উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। উচ্ছেদ অভিযানে প্রতিদিনই দুই সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে কঠোরভাবে অবৈধ স্থাপনা দখলমুক্ত করা হচ্ছে। টার্গেট আগামী বর্ষা মৌসুমের আগেই এসব অবৈধ দখল উচ্ছেদ করা। গত ১ জানুয়ারি ২৬টি খালের দায়িত্ব দুই সিটি করপোরেশনের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করে ঢাকা ওয়াসা। এরপরপর থেকেই খাল উদ্ধারে সক্রিয় ভুমিকা পালন করছে দুই সিটি কর্পোরেশন। এতে দখলদাররা কোণঠাসা হয়ে পড়ছে। খাল দখল করে প্রভাবশালীরা নানা স্থাপনা নির্মাণ করে নিম্ম ও মধ্যবিত্তদের কাছে ভাড়া দিয়েছে। স্থাপনা উচ্ছেদ করায় তারা বিপাকে পড়েছেন বসবাসকারীরা।
মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, খালের দায়িত্ব হাতে পাওয়ার পরই খালের অবৈধ দখল উচ্ছেদে আমরা কাজ শুরু করেছি। যত প্রভাবশালী হোক না কেন, খাল দখলদার কেউ ছাড় পাবে না। খাল পাড়ের সব বহুতল ভবন ভেঙে দেওয়া হবে। মানচিত্র অনুযায়ী খালের জায়গায় যেসব অবৈধ স্থাপনা আছে, তা একতলা হোক বা ১০ তলা হোক, ভেঙে ফেলা হবে। এই উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত থাকবে।
ডিএসসিসি মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ঢাকাবাসীকে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি কার্যক্রম হাতে নিচ্ছি। স্বল্পমেয়াদের কার্যক্রমগুলো আমরা নিজ অর্থায়নেই আরম্ভ করে দিচ্ছি। প্রথম কাজটি হল খালগুলো দখলমুক্ত করা। বর্ষা মৌসুমের আগেই দক্ষিণ সিটির খাল দখলমুক্ত ক তে চায়। খালের বর্জ্যও অপসারণ করব। এর মাধ্যমে জলপ্রবাহ পুনরুদ্ধার হলে জলাবদ্ধতা হবে না বলে আমরা আশাবাদী।
জানা গেছে, গত ৩২ বছর রাজধানীর খালের দায়িত্ব পালন করে ঢাকা ওয়াসা। সংস্থাটি যথাযথ দায়িত্ব পালন করতে পারছে না এমন অভিযোগ ওঠে বিভিন্ন মহলে। ডিএসসিসি এখন পাঁচটি খাল উদ্ধারে একযোগে কাজ করছে। আর ইব্রাহিমপুর ও রামচন্দ্রপুরসহ কয়েকটি খালে উচ্ছেদ অভিযান চালাচ্ছে ডিএনসিসি। এরমধ্যে রামচন্দ্রপুর খালের বর্জ্য অপসারণেও কাজ চলছে। খালগুলো দখল করে রাখা সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ চলমান রেখেছে দুই সিটি। এরমধ্যে ডিএনসিসি ইব্রাহিমপুর খালের দুই পাড়ে থাকা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করছে। এখনও চলছে উচ্ছেদ কার্যক্রম। ইতিম্যে ইব্রাহিমপুর বাজার খাল পাড়ের কালভার্টের দুই পাশে অবৈধভাবে নির্মিত একটি তিনতলা ভবনসহ কয়েকটি টিনশেড দোকান উচ্ছেদ করেছে ডিএনসিসি। আরো যেসব অবৈধ স্থাপনা রয়েছে তা উচ্ছেদ করা হচ্ছে। এদিকে, খালের দুই পাড়ের অবৈধ স্থাপনার বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে স্থানীয়দের মধ্যে। তারা জানান, খালের মূল নকশা হাতে নিয়ে সিটি করপোরেশন কাজ শুরু করলে খালের প্রস্থ আরও অনেক বাড়বে।
রামচন্দ্রপুর খাল ঘুরে দেখা গেছে, ৫ নম্বর সড়কের পশ্চিম পাশে খালের প্রস্থ রয়েছে মাত্র ১০ থেকে ১৫ ফুট। বাকি অংশে গড়ে উঠেছে বহুতল ভবন। খালের জায়গায় রয়েছে বস্তির অংশ, গোয়ালঘর, গোরস্তান এবং মসজিদ। ৩ নম্বর সড়কের কালভার্টের পাশে মাটি ফেলে খাল ভরাট করা হয়েছে। সেখানে বসানো হয়েছে টং দোকান। ১ নম্বর সড়কে খালের অংশে মাটি দিয়ে ভরাট করে ক্যারাম খেলার আসর বসানো হয়েছে। ৬ ও ৭ নম্বর সড়কে খালের উপরে রয়েছে বেশ কয়েকটি বহুতল ভবন ও বস্তি। খাল দখল করে গড়ে ওঠা একটি অংশ এখনো সিটি করপোরেশনের অধিভুক্ত নয়। এমনকি খালের উপর মাটি এবং ময়লা ফেলে নির্মাণ করা হয়েছে ওয়াকওয়ে। খালের তিন কাঠার বেশি জায়গা দখল করে সেখানে রিকশার গ্যারেজ ও তিনটি পাকা দোকান গড়ে তোলা হয়েছে। রামচন্দ্রপুরের একটি অংশ বেড়িবাঁধ সড়কের পশ্চিম পাশে। সেখানেও অনেক জায়গা দখল করা হয়েছে। খাল দখল করে মাটি ফেলে ভরাট করা হয়েছে বিশালাকার জায়গা। খালের উপর নির্মাণ করা হয়েছে পাকা, আধাপাকা এবং টিনের বসতবাড়ি। কাটাসুর খালের অবস্থা প্রায় একই। খালের কাটাসুর অংশে দুই পাড়ে গড়ে তোলা হয়েছে বিপুল পরিমাণ অবৈধ স্থাপনা। মালিকানা জমির সামনে খাল থাকায় স্থাপনা মালিকরা খালের অনেকটা দখল করে ভবন নির্মাণ করেছেন। চাঁদ উদ্যান এলাকায় খাল দখল করে ভবন মালিকরা তৈরি করেছেন পাকা ও আধাপাকা স্থাপনা। যা অন্যত্র ভাড়াও দেয়া হয়েছে। খালের এ অংশে প্রায় দুই কিলোমিটারে পানিপ্রবাহ দেখা যাচ্ছে না। এখন পর্যায়ক্রমে এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে খাল দখলমুক্ত করতে কঠোর অবস্থানে রয়েছে দুই সিটি। ডিএসসিসির সশ্লিষ্ট বিভাগ জানায়, জিরানী, মান্ডা ও শ্যামপুরে আমাদের কার্যক্রম চলমান আছে। কালুনগর খালের পাশে একটা ছোট খাল ছিল। সেটির বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে। ধানমন্ডি লেককে একটি খাল হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। সেটির বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে। এছাড়া আরও একটি প্রকল্প নেয়া হচ্ছে। সেটি হচ্ছে আদি বুড়িগঙ্গা চ্যানেল। ডিএনডি রোড সাইট খালের উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে। খালটি ২০২৩ সালে হস্তান্তর করবে। কুতুবখালি খাল অনেক ছোট ছোট খালের সমন্বয়ে গঠিত। সেখানে সেনাবাহিনী উন্নয়ন কাজ চালাচ্ছে। বাকি চারটা খালে জুনের পর কার্যক্রম শুরু করবে।
ডিএসসিসির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমডোর মো. বদরুল আমিন বলেন, ঢাকাবাসীকে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি দিতে মেয়র মহোদয়ের নির্দেশনায় শ্যামপুর, জিরানী ও মান্ডা খাল এবং পান্থপথ ও সেগুনবাগিচা বক্স কালভার্ট থেকে বর্জ্য অপসারণ ও উত্তোলন কাজ করছি। শিগগিরই এসব খাল ও কালভার্ট থেকে বর্জ্য অপসারণ করে পানি চলাচল স্বাভাবিক করা হবে। এতে বৃষ্টি হলে আর জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হবে না। ডিএসসিরি আওতাধীন সব খাল দখলমুক্ত করা হবে বলেও তিনি জানান।
ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা বলেন, খাল দখলমুক্ত করতে আমরা কঠোর অবস্থানে রয়েছি। আশাকরি দ্রুত সময়ের মধ্যে খালগুলো দখলমুক্ত করে পানি চলাচলের জন্য স্বাভাবিক করা যাবে। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে ইব্রাহিমপুর খালের দখল উদ্ধারে ব্যাপকভাবে কাজ চলছে। পর্যায়ক্রমে সবগুলো খালই আমরা উদ্ধার করব।

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিরা অন্যায় হস্তক্ষেপ করবেন না: সমাজকল্যাণমন্ত্রী নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিরা অন্যায় হস্তক্ষেপ করবেন না: সমাজকল্যাণমন্ত্রী

দেশের রিজার্ভ কমে এক দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন