সাধন চন্দ্র মণ্ডল : দেশে প্রতিদিনই আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে ই-বর্জ্য। গত ১০ বছরে প্রযুক্তির ব্যবহার ৩০ থেকে ৪০ গুণ বেড়েছে। আর প্রযুক্তিপণ্য ব্যবহারের পর ডাস্টবিনে ফেলে দেয়া হচ্ছে। তাতে সেগুলো মাটির সঙ্গে মিশে যাচ্ছে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি বছর দেশে প্রায় ৪ লাখ টন ই-বর্জ্য উৎপাদিত হচ্ছে। আগামী ২০২৩ সালে এই ই-বর্জ্যরে পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ১২ লাখ টন। এখনই এর ব্যবস্থাপনা করা না গেলে সামনের দিনে বড় ধরনের ঝুঁকি সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। তবে দুই-একটি ছোট প্রতিষ্ঠান কিছু ই-বর্জ্য রিসাইক্লিংয়ের ব্যবস্থা করেছে। তবে বড় পরিসরে তেমন উদ্যোগ নেয়া না গেলে ভবিষ্যতে সঙ্কট আরো তীব্র হবে।
ই-বর্জ্য নিয়ে শুধু বাংলাদেশ নয়, এশিয়ার সবগুলো দেশই সংকটে রয়েছে। প্রতিদিনই বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি ও পরিবেশদূষণ। এই বিপদ থেকে বাঁচার উপায় হলো ই-বর্জ্যের নিরাপদ ব্যবস্থাপনা ও পুনর্ব্যবহার। এশিয়ার ই-বর্জ্য নিয়ে ইউনাইটেড ন্যাশনস ইউনিভার্সিটি গত বছর এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এই প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০১০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে এশিয়ায় ই-বর্জ্যের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ৬৩ শতাংশ। ১২টি দেশের ওপর গবেষণা চালিয়ে তারা দেখেছে, এই পাঁচ বছরে ই-বর্জ্যের পরিমাণ ছিল ১ কোটি ২৩ লাখ টন। এদের মধ্যে চীনের অবস্থা ভয়াবহ। এ সময় তাদের দ্বিগুণের বেশি বেড়ে ই-বর্জ্যের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬৬ লাখ ৮১ হাজার টন। যা পুরো এশিয়ার জন্য উদ্বেগের বলে বলা হচ্ছে। বিটিআরসি এবং টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ই-বর্জ্য একটা বড় ধরনের সমস্যা হয়ে উঠছে। যা সমাধানের লক্ষ্যে এখন থেকেই ব্যবস্থা নেয়া জরুরি। ই-বর্জ্যের কারণে ঘটছে জলবায়ুর পরিবর্তন। আর তা বিশ্বব্যাপীই ঘটছে। ই-বর্জ্য নিয়ন্ত্রণের জন্য বেশ কয়েকটি পদ্ধতি প্রচলিত রয়েছে। প্রথমত, যন্ত্র ব্যবহারের সঠিক পদ্ধতি শেখা। তাতে মোবাইল, ল্যাপটপ ও ট্যাব বেশি দিন ধরে ব্যবহার করা যায়। তাছাড়া পুরোনো সামগ্রীর ব্যবহার বাড়ানোর ওপরে গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। একই যন্ত্র একাধিক কাজ করবে, এমন মাল্টিপারপাস ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রের ব্যবহার বাড়ানোর দিকে নজর দিতে। একই চার্জারে সব সংস্থার সব মডেলের মোবাইল চার্জ করা যায়, এমন চার্জারের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে হবে। তাছাড়া ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত মানুষদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ, ইউনিফর্মের ব্যবহার, নিয়মিত শারীরিক পরীক্ষার ব্যবস্থা করলে কিছুটা সুফল মিল বে।
সূত্র আরো জানায়, বর্তমানে দেশে দুটি প্রতিষ্ঠান সীমিত পরিসরে ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজ করছে। তার একটি এনএইচ এন্টারপ্রাইজ। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হায়দার জানান, টেলিকম অপারেটর থেকে বছরে প্রায় ১ হাজার টন ই-বর্জ্য তৈরি হচ্ছে। আমরা সীমিত পরিসরে ভাঙাড়ি ব্যবসায়ীদের দিয়ে পুরোনো হ্যান্ডসেট কিনে সেগুলোর ব্যবস্থাপনা করছি। এর জন্য রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা ও বড় আয়োজন দরকার।
এদিকে এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার জানান, মোবাইল হ্যান্ডসেট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো যদি তাদের উৎপাদিত পুরোনো হ্যান্ডসেট ফেরত নেয়, তাহলে বিটিআরসি সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে। ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় দ্রুত পরিকল্পনা না নিলে আগামীতে এগুলো জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশের জন্য ভয়ংকর ঝুঁকি তৈরি করবে।
অন্যদিকে অতিসম্প্রতি বিটিআরসি চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠকের পর মোবাইল হ্যান্ডসেট উৎপাদনকারী ও আমদানিকারকদের সংগঠনের সভাপতি রুহুল আলম আল মাহবুব মানিক জানান, ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বিক্রেতা ও উৎপাদনকারীর সমন্বয়ে উদ্যোগ নিলে তা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। শুধু উৎপাদক নয়, এ বিষয়ে সবাইকেই এগিয়ে আসতে হবে।
এ প্রসঙ্গে টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে সম্ভাবনাময় উল্লেখ করে জানান, এর জন্য বিজনেস প্ল্যান বা ব্যবসায়িক পরিকল্পনা প্রয়োজন, যাতে সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা করা যায়। তাহলে এটা আর ঝুঁকিপূর্ণ থাকবে না। দিনে দিনে ই-বর্জ্য কমানো যাবে না। বরং ইলেকট্রনিক্স ও ডিজিটাল পণ্যের ব্যবহার আরো বাড়বে। পুরনো প্রযুক্তি বাদ দিয়ে নতুন প্রযুক্তিতে যেতে হবে। পাশাপাশি ব্যবস্থাপনাও করতে হবে।