নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা বলেছেন, নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) পদ্ধতিতে কারচুপির কোনো সুযোগ নেই। এজন্য ভোটারদের ইভিএমের ওপর আস্থা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। গতকাল বুধবার দুপুরে ঢাকার সাভার পৌরসভা সাধারণ নির্বাচন ২০২১ উপলক্ষে আয়োজিত আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত সমন্বয় সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন সিইসি। তিনি বলেন, আমরা সভায় আলোচনা করে জেনেছি, নির্বাচনের পরিবেশ অত্যন্ত ভালো আছে। কোথাও কোনো সংঘর্ষের আশঙ্কা নেই। এখানে প্রার্থীদের মধ্যে সহযোগিতা আছে। তাদের আচরণে এবং ব্যবহারে নির্বাচন পরিচালনাকারীরাও সন্তুষ্ট। ইভিএম পদ্ধতিতে নির্বাচনকে সুষ্ঠু করার জন্য যা যা করা প্রয়োজন তাই করা হবে বলে আশ্বস্ত করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। তিনি বলেন, আগামী ১৬ জানুয়ারি সাভারসহ সারাদেশের ৬১টি পৌরসভার নির্বাচন নিরপেক্ষ এবং সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হবে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কে এম নূরুল হুদা বলেন, ইতোমধ্যে ইভিএম পদ্ধতিতে নির্বাচনের প্রতি ভোটারদের আগ্রহ বেড়েছে। গত ৩০ তারিখের নির্বাচনে ৮৫ ভাগ ভোটার উপস্থিত হয়ে ভোট প্রদান করেছেন, যার কৃতিত্ব ভোটারদের। ইভিএম পদ্ধতিতে এখন পর্যন্ত যেসব পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে সেখানে আমলে নেয়ার মতো কোনো অভিযোগ নেই। নির্বাচনের সময় বহিরাগতদের চলাচলে নিষেধাজ্ঞাসহ অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার বন্ধ রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেয়া হবে জানিয়ে সিইসি বলেন, আমরা নির্বাচনের কালচার পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখছি এবং তা বাস্তবায়নের জন্য ইভিএমকে ব্যবহার করা হচ্ছে। ইভিএম যদি কেউ তুলে নিয়ে যায় সেখানে একটি ভোটও দিতে পারবে না। কারণ এখানে ফলস ভোট দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। যার ভোট একমাত্র তিনিই দিতে পারবেন। তাই ইভিএম কেউ নিয়ে গেলেও কোনো কাজ হবে না কিংবা এর ওপর শক্তি প্রয়োগ করেও কিছু করা যাবে না। এই বিষয়টি যখন ভোটারদের মাথায় ঢুকে যাবে তখন আর কোনো বহিরাগত ভোটকেন্দ্রে আসবে না এবং কোনো সমস্যাও হবে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা যেন সর্বোচ্চ সতর্ক স্থানে থাকে এবং কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতির যেন সৃষ্টি না হয়, সেজন্য তাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলেও জানান প্রধান নির্বাচন কমিশনার। ইভিএম পদ্ধতিতে কারচুপির কোনো সুযোগ নেই দাবি করে তিনি আরও বলেন, ইভিএমতো আরও দুই বছর আগে উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। আপনারা দেখেন, এটা কীভাবে পরিচালিত হয়। এখানে কারচুপির কোনো সুযোগ নেই। নির্বাচন পরিচালনাকারীদের বিরুদ্ধে সারা বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান আছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশেই যারা নির্বাচনে হেরে যায় তারা সহজেই পরাজয় মেনে নিতে চায় না। আপনারা ইভিএমের ওপর আস্থা রাখুন। আলোচনায় জানা গেছে, নির্বাচনের পরিবেশ অত্যন্ত ভালো, কোনো রকমের ঝুঁকি নেই। কোনো হুমকি নেই। তারপরও নির্বাচনকে সুষ্ঠু করার জন্য যদি অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রয়োজন হয়, সেক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন সব ধরনের সহযোগিতা প্রদান করবে। নির্বাচনে কেউ যদি ফৌজদারি অপরাধ করে থাকেন তার বিরুদ্ধে মামলা হবে। তদন্ত হবে এবং বিচারের মুখোমুখি করা হবে। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ওপর বিএনপিকে আস্থা রাখার আহ্বান জানিয়ে নূরুল হুদা বলেন, বিএনপিকে সব সময় যে কোনো নির্বাচনে আস্থায় আনার চেষ্টা করা হয়। আপনারা আমাদের ওপর আস্থা রাখুন। দেশে পৌরসভা নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের যে কোনো দেশে সাধারণ নির্বাচনে যে দল হেরে যায়, তারা কারচুপির অভিযোগ তোলে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা বলেন, বিশ্বব্যাপী নির্বাচন পরিচালনার ব্যাপারে কারচুপির অভিযোগ থাকেই। নির্বাচনে হেরে গিয়ে আমেরিকাতেও কারচুপির অভিযোগ তোলা হয়েছে। নির্বাচনে হেরে গেলে বলা হয়, কারচুপি হয়েছে। এটা এদেশের কালচার। আওয়ামী লীগ হেরে গেলেও তারা কারচুপির অভিযোগ তুলতো। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে কোনো নির্বাচনে অনিয়ম হচ্ছে না। পৌরসভা নির্বাচনের আগে সাভারে কোনো বহিরাগত মানুষ থাকতে পারবে না। এমনকি কোনো ব্যক্তি অস্ত্র নিয়ে কোথাও থাকতে পারবে না। নির্বাচনে কেউ অশান্তি সৃষ্টি করতে চাইলে, তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের পক্ষে মানুষের আস্থা রয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, এজন্য সব ভোটার ভোট কেন্দ্রে গিয়ে সুষ্ঠুভাবে ভোট দিতে পারছে। জেলা প্রশাসক মো. শহীদুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার মো. খলিলুর রহমান, সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর, রিটার্নিং কর্মকর্তা ও নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাবৃন্দ, ঢাকা রেঞ্জ ডিআইজি হাবিবুর রহমান, পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন সরদারসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।