নাটোরের হালতিবিলে বিচরণ করছে সারি সারি সাদা বক

নাটোরের হালতিবিলে বিচরণ করছে সারি সারি সাদা বক

নলডাঙ্গা (নাটোর) প্রতিনিধি : ঘড়ির কাটায় তখন সকাল ১১টা। নাটোরের হালতিবিলের মাঝখানে কংক্রিটের তৈরী (সড়ক) আকাঁ-বাঁকা পাকা পথ ধরে চলতেই দু’পাশে চোখে পড়ে কোথাও জলরাশি আবার কোথাও কাদামাটি। আর আকাশটি কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়ে মনে হচ্ছে কালো মেঘ যেন আচ্ছাদন করে রেখেছে। তখনও সূর্যের আলো তেমন একটা মেলেনি। কংক্রিটের পাকা সড়ক থেকে কিছু দুরে কাদা মাটি মাড়িয়ে এগুলেই দেখা মিলে জলে মাছ, আর সাদা বক পাখির অবাধ বিচরন। যেন মাছ আর বক পাখির মিলিত অভয়াশ্রম। আর সাথে রয়েছে পানকৌরিও। সেখানে খাবারের সন্ধানে মিলিত হয়েছে শুভ্রতার প্রতীক হাজার হাজার ‘বক’ পাখি। আর এর ভিতর থেকেই উড়ে এসে দৃষ্টিসীমা ঘিরে ফেলছে একঝাঁক সাদা ‘বক’। আবার কখনও চোখের নিমিষে ডানা মেলে উড়ে যাচ্ছে দৃষ্টির সীমানা পেরিয়ে। আর কালো মেঘ আর সাদা ‘বক’ মিলেমিশে এক আশ্চর্য শুভ্রতা যেন ছড়িয়ে দিচ্ছে চারপাশে। গতকাল রোববার সরেজমিনে এমন দৃশ্য চোখে পড়ে। কাছে এগিয়ে ছবি তুলতে গিয়ে দেখা যায়, হালকা মেঘের তলা দিয়ে উড়ে যাচ্ছে ঝাঁকে ঝাঁকে এসব বক পাখি। তখন নয়নাভিরাম দৃশ্যের অবতারণা হচ্ছে। এই বিলের মাঝে টেংগরগাড়ি, শোলাকুড়া, মদনটিকা, খড়িয়াটসহ বেশ কয়েকটি স্থানে খাবারের জন্য বিচরণ করছে এসব সারি সারি বক পাখি। স্থানীয়দের মতে, গত দু’ বছর আগেও হালতিবিলে এমনটি দেখা মেলেনি। বক পাখি দেখতে এখন শহর থেকে লোকজন ছুটছেন হালতিবিলে। অনেকে পাখি শিকারে মেতে উঠছেন। তবে স্থানীয়দের প্রতিরোধে তা পন্ড হচ্ছে। খোলাবাড়িয়া গ্রামের প্রবীণ শিক্ষক আলা উদ্দিন জানান, এক সময় হালতিবিল জুড়ে ছিল আমন ধান, মাছ আর নানা প্রজাতির পাখ-পাখালিতে ভরপুর। পাখি আর মাছ দিয়েই অতিথি আপ্যায়ন এবং কোর্ট-কাচারিতে মামলার তদবির চলতো। এখন এগুলো শুধুই স্মৃতি। হালতি গ্রামের আব্দুল বারিক জানান, এক সময় ঝাঁকে ঝাঁকে হালতিয়া পাখি আসতো এই বিলে। কথিত আছে পাখির নামেই নাকি এই বিলের নামকরণ করা হয়েছে। কানা বক নিয়ে বিখ্যাত গানও রচিত হয়েছে লোকসংস্কৃতিতে। আফসার আলী জানান, বিলের আমন ধান, মাছ নেই। তাই পাখির বিচরনও তেমনটা নেই। এখন শুকনো মৌসুমে বোরো ধান আর বর্ষায় ধুধু পানি ছাড়া আর কিছুই থাকেনা। স্থানীয়রা জানান, ফাঁদ পেতে বক শিকার, কীটনাশক প্রয়োগ, কৃষির আধুনিক যান্ত্রীক শব্দ দুষণ, বর্ষায় যন্ত্রেচালিত নৌকা চলাচল, আবাসস্থল বিলুপ্ত হওয়া এবং সর্বত্রই মানুষের উপস্থিতির কারনে পাখির বিচরণ কমে গেছে। প্রকৃতি রক্ষায় ফিরিয়ে আনতে হবে পাখিকুলকে।
নাটোর জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ গোলাম মোস্তফা জানান, বকের বৈজ্ঞানিক নাম (ঘুপঃরপড়ৎধী হুপঃরপড়ৎধী), (ইংরেজি : ঐবৎড়হ) বক মূলত ওয়াক, রাতচরা, বাজকা বা চক্রবাক আরডেইডি (অৎফবরফধব) গোত্র বা পরিবারের অর্ন্তগত মাঝারি আকৃতির অত্যন্ত সুলভ এক প্রজাতির পাখি। বাংলাদেশে প্রায় ১৮ প্রজাতির বক রয়েছে। এরমধ্যে বক ৯টি, বগা ৫টি এবং বগলা ৪টি। বকের মধ্যে রয়েছে ধুপনি বক, দৈত্য বক, চীনা কানি বক, দেশি কানি বক, কালামাথা নিশি বক, মালয়ী নিশি বক, ধলপেট বক, লালচে এবং খুদে সবুজ বক। এরা প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষাসহ ভূমিকা রাখছে প্রকৃতির সৌন্দর্যে ও অর্থনীতিতেও। মাছ ছাড়াও এসব পাখি শামুক, ঝিনুক, কাঁকড়া ও জলজ পোকামাকড় খেয়ে ফসলের উপকার করে। ওদের খাদ্যাভাব থাকা সত্ত্বেও রয়েছে নিরাপত্তার অভাব।
নলডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে অবৈধ পাখি শিকারের জন্য ২ বছরের সাজার বিধান রয়েছে। যারা আইন অমান্য করে পাখি শিকার করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে তার উপজেলায় পাখি শিকারের প্রবনতা অনেকটা কম।

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

বাংলাদেশি কর্মীদের বেতন না দিয়ে শাস্তির মুখে মালয়েশিয়ান কোম্পানি

বিশ্বকাপ খেলতে যুক্তরাষ্ট্রের পথে বাংলাদেশ দল