অর্থনৈতিক উন্নয়নে নিজেকে মেলে ধরতে চান ব্যারিস্টার ওলোরা আফরিন

অর্থনৈতিক উন্নয়নে নিজেকে মেলে ধরতে চান ব্যারিস্টার ওলোরা আফরিন

আমিনুল ইসলাম মল্লিক : অত্যন্ত মেধাবী, কঠোর পরিশ্রমী আর বিনয়ী মনোভাব নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছেন ব্যারিস্টার ওলোরা আফরিন। দুরদৃষ্টি সম্পন্ন এই ব্যারিস্টার নেতৃত্ব দিচ্ছেন কপিরাইট আইন সমিতির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে। বাংলাদেশ থেকে আইনে স্ন্তাক-স্নাতোকোত্তর ডিগ্রির পাশাপাশি লন্ডনের সিটি ইউনির্ভাসিটি থেকে অর্জন করেছেন বার এট ল ডিগ্রি। মেধাবী ওলোরা দেশে ফিরে কাজ করছেন কপিরাইট আইন নিয়ে। তারমতে যেকোনো কাজের শুরুটা জরুরি। শক্ত গাথুনির মাধ্যমে কোনো কাজের শুরু করলে সেটি টেকসই প্রফেসনে পরিনত হয়। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদানের পাশাপাশি নিজেকে মেলে ধরতে চান দক্ষ ও যোগ্য সংগঠক হিসেবে। পরামর্শ দেন হবু ব্যারিস্টারদের প্রতিও। এসব বিষয়ে তার সাক্ষাতকারটি নিয়েছেন দৈনিক সমাচারের সিনিয়র রিপোর্টার আমিনুল ইসলাম।
দৈনিক সমাচার : দেশ ছেড়ে বিলেতে গিয়ে ব্যারিস্টারি পড়তে কোন কোন সমস্যার সম্মুখিন হয়েছেন?
ওলোরা আফরিন: আমি এলএল.বি অনার্স সম্পন্ন করে বিলেতে যাই বার এট ল’ ডিগ্রি অর্জন করতে। ২০১২ সালের কথা এটি। বাইরে পড়তে গিয়েছিলাম। অনেক একসাইডেট ছিলাম। নতুন একটা দেশে যাব। নতুনভাবে চলাফেরাসহ সবকিছু। তো আমরা প্রায় ৫০ জনের মতো বাঙালী সেখানে ছিলাম। বাঙলীরা সেসময় ব্যারিস্টারি পড়ার জন্য ওখানেই (লন্ডনে) যেত। এখন কি অবস্থা জানিনা। সেসময় আমার কাছে সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্চিং ছিলো যে খাওয়া দাওয়া, রান্না করার পাশাপাশি পড়ালেখা। আবার নিজেরা নিজেদের কাপর চোপর ধোয়া। এবং সবকিছু একইসঙ্গে মেনটেইন করা। সবচেয়ে কম সময়ে তারাতারি ডেলিভারী দেওয়া। এটা ছিলো আমার কাছে সবচেয়ে চ্যালেজ্ঞিং। বিকজ প্রচুর ট্রেইনিং, প্রচুর পড়ালেখা গ্যাপ খুব কম পেতাম আমরা। সব সময়ই পড়াশোনায় পরে থাকতো হতো কিন্তু মন তো পরে থাকতো অন্যদিকে। মন চাইতো একটু ঘুরে আসি, শহরটা একটু দেখে আসি। একটু সিনেমা দেখে আসি। বন্ধুরা মিলে কোথায়ও একটু আড্ডা দেই। এগুলো কিন্তু সব সময় মনে হতো। হ্যা পড়ালেখার ফাঁকে ফাঁকে সেগুলো করতে পেরেছি। কিন্তু বারের যে ইন্ট্রানসি ট্রেইনিংটা আসলে খুব কম সময়ের মধ্যে তারাতারি ডেলিভারি দিয়েছি।
দৈনিক সমাচার: আপনি কোন দেশ থেকে বার এট ল’ডিগ্রি নিয়ে এসছেন? পড়ালেখার সময় সে দেশের পরিবেশ আপনার কাছে কেমন লেগেছে?
ওলোরা আফরিন: আমি সিটি ইউনিভার্সিটি লন্ডনে পড়তে গিয়েছিলাম। আমাদের প্রতি সেপ্টেম্বরে সেশন শুরু হয় এবং নয় মাসের সেশন থাকে। ওখানে খাপ খাওয়ানোটা শুরুতে কঠিন ছিল। আসলে বলতে গেলে ঠান্ডা একটা ইস্যু হ্যাঁ অনেকে কিন্তু ঠান্ডায় কমফরটেবল। আমি কিন্তু ঠান্ডা একদম এনজয় করিনা। আমি সামার খুব এনজয় করি সব সময়। বাট এরপরেও দেখা গিয়েছে আমরা সবাই খুব ইউনাইটেড ছিলাম। যে কয়জন ছিলাম সুবিধা-অসুবিধা কোনটা পাচ্ছি কোনটা পাচ্ছি না, কি লাগবে, না লাগবে এগুলো বিষয়ে আমরা একসাথে এজ এ টিম হিসেবে কাজ করেছি। একই ব্যাচের একই বয়সের আমরা অনেকেই গিয়েছিলাম। যার কারণে আগেও পরিচয় ছিল। পরেও পরিচয় হয়েছে ওখানে। এবং ওখানে একসাথে থেকে পড়তে পড়তে সময়টা কিভাবে যেন কেটে গেল বুঝতে পারলাম না।
দৈনিক সমাচার: ব্যারিস্টারী ডিগ্রি নিতে কত সময় লেগেছিল?
ওলোরা আফরিন: সময় লেগেছিল নয় মাস। আমি দেশ থেকে অনার্স কমপ্লিট করে গিয়েছি। ঢাকা ইউনিভার্সিটি থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করেছি বার এট ল ডিগ্রি অর্জনের পর।
দৈনিক সমাচার: যারা ব্যারিস্টার হতে চান তাদের জন্য আপনি কি ধরনের পরামর্শ দিবেন?
ওলোরা আফরিন: আমার পরামর্শ হলো বাস্তবতা এবং থিউরিটিক্যালি বিষয় দুটি কিন্তু পুরোপুরি ভিন্ন । কোর্টে প্রাকটিস বা জুনিয়রশীপ যেখানে আপনি কাজ করেন না কেন, এখানে কতটুতু আমরা পেতাম বা আমাদেরকে দেওয়া হতো তাই না?  তো আসলে কোর্ট ভিত্তিক যদি কেউ হতে চায় তখন আসলে এখানে লাইসেন্সটা ম্যান্ডাটরি (বাধ্যতামূলক)। আবার অনেকেই আছেন যারা কোর্টে যাবেন না। যেমন আমি কোর্টে যেতে আগ্রহী নই। আমার ইন্টারেস্ট নেই। কেউ যদি বলে আমি এখানে কাজ করবো। করপোরেট কাজ করবো। তখন তারা বার এট ল’ ডিগ্রি করে এসেও এখানে চাকুরী করতে পারে। বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সনদ ছাড়া এখানে শুনানীর জন্য তিনটি অপশন আছে। তাহলো কপিরাইট অফিস, কাস্টসম ও ট্রাইব্যুনাল নিয়ে। এগুলো করতে বার কাউন্সিলের কোনো পারমিশন লাগে না। বারের এনরোলমেন্ট লাগে না। সো আমার মনে হয় এই জায়গাগুলো মাথায় রেখে তারা (ব্যারিস্টার)  বিলেত থেকে ডিগ্রি অর্জন করে ভালোভাবে কাজ করতে পারবে। কিভাবে কেমন করে তারা এসব কাজে সেটেল্ট  (প্রতিষ্ঠিত) হতে চায় সেভাবে নির্ধারণ করে নিতে হবে। কারণ একেকটা মানুষের ব্যাক্তিগত জীবনে একেকটা সমস্যা থাকে। সো সবাইকে নিজ নিজ সমস্যাগুলো কিভাবে সমাধান করবে সেটি তাকে মাথায় রাখতে হবে। কোন টাইম ফ্রেমে কোর্সটা কমপ্লিট করবে এটা সিদ্ধান্ত নিবে।
দৈনিক সমাচার: বার এট ল’বড় একটি ডিগ্রি, তারপরও বাংলাদেশে এসে বার কাউন্সিলের অধীনে পরীক্ষা দিয়ে সনদ নিয়ে ওকালিত করতে হয়। এ বিষয়টি কিভাবে দেখছেন?
ওলোরা আফরিন: বার এট ল’ অবশ্যই বড় একটা ডিগ্রি আমরা যখন প্রথম লন্ডনে বার করলাম। তখন আমরা কেন্দ্রীয়ভাবে পরীক্ষা দিলাম। সাতটা বারে একইরকম প্রশ্ন, একই সময়ে পরীক্ষা। ২০১২ সাল থেকে কিন্তু আমাদের বাংলাদেশ বার কাউন্সিলে এমসিকিউ পরীক্ষা শুরু হয়েছে, যেটা আগে ছিলনা। এই যে আগে শুধু বছরে দুইটা পরীক্ষা হতো বাংলাদেশ বারে ছ’মাস পর পর। এখন দেখা যাচ্ছে তিন বছর পর পর পরীক্ষা হয়। রেজাল্ট নিয়ে ভাইবা দিতে চার বছর চলে যাচ্ছে। সো একটি পরিবার চলবে কিভাবে? আপনি ছেলে বলেন বা মেয়ে বলেন যার উপরে পরিবারটি নির্ভর করে। সেই অবস্থায় কি করবেন। এইটা তো অনেক বড় একটা ফ্যাক্টর। যারা ব্যারিস্টার হয়ে আসার পরে কোর্ট প্র্যাকটিস করতে চায় তাদেরও কিন্তু চার বছর অপেক্ষা করতে হবে। একটা মানুষের জীবনে কিন্তু চার বছর অনেক সময়। যদিও হাইকোর্ট অ্যাপিলেট ডিভিশনের একট অর্ডার আছে যে প্রতি বছরই বারের তালিকাভুক্তির জন্য একটা করে পরীক্ষা নিতেই হবে। কিন্তু এরপরেও পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে না। আমি মনে করি বাংলাদেশ বার কাউন্সিল তারাতারি ট্রেইনিং অ্যরেঞ্জ করুক সবার জন্য (ফর অ্যাভরিওয়ান)। যারা এনরোলমেন্ট হবেন তারাসহ সবার জন্য এটা বেনিফিট এবং সেশন জটটা কমানো। বছরে অন্তত একটা করে পরীক্ষা নিলেও আমার মনে হয় সুবিধা হয়। পরীক্ষা কঠিন হোক কোনো অসুবিধা নেই। কিন্তু ট্রেইনিং এবং নিয়মিত পরীক্ষা নেওয়া উচিত। সেশন জটটা না রেখে ওয়েলকাম করলে ভালো। আমার মনে হয় যারা ভালো পড়াশোনা করবে তারা বারের এনরোল হতে পারবে অসুবিধা নেই। কিন্তু পরীক্ষা যেন রেগুলার হতে হবে। এই যে দেখেন আইন শিক্ষানবিশরা ধর্মঘট করছে। আন্দোলন করছে। অনশন করছে। এগুলো তো খুবই দু:খজনক, তাই না? আমাদের দেশের জন্য। প্রতিবছর ৩০ হাজার ৪০ হাজার করে পরীক্ষা দিচ্ছে। মনে হয় এই জিনিসগুলোর প্রতি যথাযথ কর্তৃপক্ষ নজর দিবেন। এগুলো নিয়ে সলিউশন করা দরকার।
দৈনিক সমাচার: ব্যারিস্টারী ডিগ্রি নিয়ে এসে বাংলাদেশে যে প্রফেসনে আছেন সেটি কেমন লাগছে আপনার কাছে?
ওলোরা আফরিন: এই পেশাটা আসলে খুবই চ্যালেঞ্জিং। যে পেশাতেই যাই না কেন চ্যালেঞ্জিং। আমার কাছে গতানুগতিক কাজ কখনোই ভালো লাগে না। আমি সব সময়ই নতুন কিছু খুঁজি। তখনই আমি ইন্টারেকচুয়াল প্রপারটি ল’ নিয়ে কাজ করার সুযোগ পেলাম। এখানে কাজ করার অনেক সুযোগ রয়েছে। এখানে প্রচুর ডেভলপমেন্ট কাজ করার সুযোগ আছে। যদিও আল্লাহর হমতে আমার বাবা, ভাই আমার স্বামী ও শশুর আইনজীবী। তারা যেহেতু কোর্টে আছেন। আমি কোর্ট ভিত্তিক প্রাকটিস করতে অনাগ্রহী। তবে হ্যাঁ ইনফিউচার কোনোদিন যদি প্রযোজন মনে করি আমিও বার কাউন্সিলের সনদ নিব। কোর্টে যাব। এই সময়ের মধ্যে যেহেতু তারা এই চেম্বারটা রানিং করতে পারছে এজন্য আমি গবেষণা করার সুযোগ পাচ্ছি। আমি অন্য সাইটে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছি। ডেভলপমেন্ট সাইটটা, কোন সাইটটা যেটা বাংলাদেশের ইকোনমিকাল দিক দিয়ে ভুমিকা রাখবে। যেটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভুমকিা রাখবে সেটি নিয়ে কাজ করতে আমি খুবই এনজয় করি। যেটি বল্লাম কপিরাইট অফিস, ট্রেডমার্ক অফিস, কাস্টম ট্রাইব্যুনাল, ক্লায়েন্ট পাওয়ার অফ রিপ্রেজেন্টাশান। যেটি বার কাউন্সিলের সনদ ছাড়া শুনানি করা যায়। কোনো জিনিসের শুরুটা খুব জরুরী । শুরুটাা যদি ঠিক মতো ধরিয়ে দেওয়া যায়, তখন কিন্তু পুরো প্রেক্ষাপটটাই পরিবর্তন হয়ে যায়। এই জায়গায় মেধাসত্ত্ব ল-ইয়ার বলেন বা এক্সপার্ট বলেন বাংলাদেশে কিন্তু এদের সংখ্যা খুবই কম।

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

দুর্ঘটনার আশঙ্কায় জনমনে উদ্বগে বীরগঞ্জের সড়কগুলো দাপিয়ে বড়োচ্ছে কিশোর চালকরা

সন্দ্বীপে কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনা উদ্বোধন