নিজস্ব প্রতিবেদক : করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যেই বছরের শেষপ্রান্তে এসে পৌরসভা নির্বাচনের প্রথম ধাপের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে কাল সোমবার। দেশের ২৪ পৌরসভায় সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে একটানা ভোটগ্রহণ চলবে। স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচন ঘিরে এমনিতে যে উত্তাপ থাকে, এবার মহামারীর বাস্তবতায় ততটা নেই। তবে বরাবরের মতই ভোটের প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে মূলত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রতীক নৌকা আর বিএনপির প্রতীক ধানের শীষের প্রার্থীদের মধ্যে। প্রার্থীরা ইতোমধ্যে আনুষ্ঠানিক প্রচার শেষ করেছেন। বিজিবি, র্যাব, পুলিশ ও আনসারসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে নির্বাহী ও বিচারিক হাকিমরাও মাঠে রয়েছেন। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি, জাতীয় পার্টি, ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ ও জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির প্রার্থীরা মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন এসব পৌর এলাকায়। পাশাপাশি লড়ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীও। ভোটের আগের পরিবেশ এমনিতে শান্তিপূর্ণ থাকলেও কাউন্সিলর প্রার্থীদের ভোটের প্রচার নিয়ে দুয়েকটি এলাকায় হামলা-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে ইতোমধ্যে। নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, ভোটের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি গুছিয়ে নেওয়া হয়েছে। নির্বাচনী এলাকায় পরিবেশ ও পরিস্থিতি ভালো। আইন শৃঙ্খলাবাহিনী মাঠে রয়েছে। কোনো ধরনের অভিযোগের প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি। ইভিএমে ভোটের সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ইসি কর্মকর্তারা জানান, ১০ হাজারের কম ভোটারের পৌরসভার জন্য এক প্লাটুন বিজিবি সদস্য, ১০ হাজারের বেশি ভোটারের পৌরসভার জন্য দুই প্লাটুন এবং ৫০ হাজারের বেশি ভোটারের জন্য তিন প্লাটুন বিজিবি সদস্য মোতায়েন থাকছেন। বিজিবিতে প্রতি প্লাটুনে গড়ে ৩০ জন করে থাকেন। এ নির্বাচনে সাধারণ ভোটকেন্দ্রে ১১ জন ও গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ১৩ জন করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হবে। প্রতিটি পৌরসভায় পুলিশ, আনসারের স্ট্রাইকিং ও মোবাইল ফোর্স এবং র্যাবের টিম থাকছে। ২৪ পৌরসভায় মেয়র পদে প্রার্থী রয়েছেন ৯০ জন। সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ২৭৭ জন এবং ৮৪৮ জন প্রতিদ্বন্দ্বী রয়েছেন। সোমবার প্রথম ধাপে যেসব পৌরসভায় ভোট সেগুলো হলো- পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ, দিনাজপুরের ফুলবাড়ী, রংপুরের বদরগঞ্জ, কুড়িগ্রাম, রাজশাহীর পুঠিয়া ও কাটাখালী, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর, পাবনার চাটমোহর, কুষ্টিয়ার খোকসা, চুয়াডাঙ্গা, খুলনার চালনা, বরগুনার বেতাগী, পটুয়াখালীর কুয়াকাটা, বরিশালের উজিরপুর ও বাকেরগঞ্জ, ময়মনসিংহের গফরগাঁও, নেত্রকোণার মদন, মানিকগঞ্জ, ঢাকার ধামরাই, সুনাগঞ্জের দিরাই, মৌলভীবাজারের বড়লেখা, হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ এবং চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড। প্রস্তুতির অংশ হিসেবে প্রথম ধাপের ২৪টি পৌরসভায় মেয়র, সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ইভিএমের ‘মক ভোটিং’ হয়েছে। করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে এবার চার ধাপে পৌর নির্বাচন করছে কমিশন। তার মধ্যে তিন ধাপে ১৫০টি পৌরসভার তফসিলও হয়েছে। সোমবার প্রথম ধাপের ২৫টি পৌরসভায় ভোট হওয়ার কথা থাকলেও গাজীপুরের শ্রীপুরের একজন মেয়র প্রার্থীর মৃত্যু হলে ভোট পিছিয়ে দ্বিতীয় ধাপে নেওয়া হয়। ১৬ জানুয়ারি দ্বিতীয় ধাপের ৬১ পৌরসভায় ভোট হবে। এর মধ্যে ২৯টি পৌরসভায় ইভিএম এবং ৩২ পৌরসভায় ব্যালটে ভোটগ্রহণ হবে। আর তৃতীয় ধাপে ৬৪টি পৌরসভায় ৩০ জানুয়ারি ভোটের তারিখ রেখে সর্বশেষ তফসিল দেওয়া হয়েছে। বাকি যেসব পৌরসভা ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন উপযোগী হচ্ছে, সেসব এলাকায় চতুর্থ ধাপের ভোট হবে। দেশে মোট পৌরসভা রয়েছে ৩২৯টি। আইন অনুযায়ী, মেয়াদ শেষের আগের ৯০ দিনের মধ্যে স্থানীয় সরকারের এ প্রতিষ্ঠানে ভোট করতে হয়। স্থানীয় সরকার আইন সংশোধনের পর ২০১৫ সালে প্রথম দলীয় প্রতীকে ভোট হয় পৌরসভায়। সেবার ২০টি দল ভোটে অংশ নেয়।