বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হবে ভ্রাম্যমাণ আদালত

বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হবে ভ্রাম্যমাণ আদালত

নিজস্ব প্রতিবেদক : উর্ধ্বমুখী রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে বায়ুদূষণ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থার গবেষণা তথ্যানুযায়ী বায়ুদূষণের কারণে বাংলাদেশে বছরে এক লাখ ২২ হাজার ৪০০ মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। তার মধ্যে শিশুমৃত্যুর হার সর্ব্বোচ। এমন পরিস্থিতিতে দূষণ নিয়ন্ত্রণে নতুন প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে বিশ্বব্যাংক ওই প্রকল্পের জন্য ৮০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (প্রায় ৬ হাজার ৭৭৫ কোটি টাকা) বরাদ্দের ঘোষণা দিয়েছে। আর প্রকল্প বাস্তবায়নের পাশাপাশি উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনারও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। পরিবেশ বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বায়ুদূষণ এখন বিশ্বজুড়ে মানুষের মৃত্যুর ক্ষেত্রে চতুর্থ প্রধান কারণ। তাতে শিশুদের অ্যাজমা বাড়ছে। অসুস্থ বাচ্চার জন্ম হচ্ছে। বায়ুদূষণে দেশে জিডিপির ৫ শতাংশ ক্ষতি হচ্ছে। রাজধানীসহ সারা দেশে শীত মৌসুমে উর্ধ্বমুখী থাকে বায়ুদূষণ। বিশেষ করে শীত মৌসুমের ৫ মাস ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, মানিকগঞ্জসহ প্রধান বড় শহরগুলোতে দূষিত বায়ু অব্যাহত থাকে। ওই দূষণের বিরুদ্ধ ব্যবস্থা গ্রহণের তাগিদ দিয়েছে পরিবেশ বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। আর মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বায়ুদূষণ রোধে নতুন প্রকল্প গ্রহণের কথা সংসদীয় কমিটিকে জানানো হয়েছে। সংসদীয় কমিটির সুপারিশ ও বিশ্বব্যাংকের পরামর্শ অনুযায়ী পরিবেশ অধিদপ্তর প্রকল্প প্রস্তাবের পরিকল্পনা, কার্যক্রমের তালিকা, প্রাতিষ্ঠানিক অবকাঠামো, দূষণ নিয়ন্ত্রণে আইনের প্রয়োগ, জনবলবৃদ্ধি ও দক্ষতা উন্নয়নের জন্য কী কী করণীয় হবে তা নির্ধারণ করে ‘বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্টাল সাসটেইনেবল ট্রান্সফরমেশন (বেস্ট)’ শীর্ষক একটি প্রকল্প প্রণয়ন করা হয়েছে। ওই প্রকল্পের মাধ্যমে পরিবেশ দূষণ কমানোর কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের বিষয়ে জোর দেয়া হচ্ছে। আশা করা যায় চলতি অর্থবছরেই প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। তাছাড়া বায়ুদূষণ রোধে পরিবেশ অধিদপ্তরকে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার নির্দেশও দিয়েছেন হাইকোর্ট। নভেম্বর, ডিসেম্বর, জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে বাংলাদেশের মানুষ সবচেয়ে ক্ষতিকর বাতাসে বাস করে। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ওই সময়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে।
সূত্র জানায়, রায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশে নির্মলবায়ূ ও টেকসই পরিবেশ (কেইস) প্রকল্পে অর্থায়ন করেছে। ওই প্রকল্পে বরাদ্দ ছিল ৮০২ কোটি টাকা। কেইস প্রকল্পে মূলত প্রাতিষ্ঠানিক অবকাঠামো ও কারিগরি জ্ঞান বৃদ্ধির বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর, ঢাকা সিটি করপোরেশন, ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) সহায়তা করা হয়। ওই প্রকল্পটির ধারাবাহিকতা রক্ষায় বেস্ট প্রকল্পের জন্য ৬ হাজার ৭৭৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। আর প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে রাজধানী ঢাকা ও উপ শহরগুলোর দূষণ নিয়ন্ত্রণে আনা হবে।
এদিকে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রন প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম-সম্পাদক মিহির বিশ্বাস জানান, রাজধানীতে বায়ুদূষণ উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। বায়ুদূষণের কারণে মানুষের শরীরে ও মনে নানা রোগবালাই এবং রোগশোকের জন্ম দিচ্ছে। দূষণ রোধে ইতিপূর্বে বিভিন্ন প্রকল্প নেয়া হলেও তার সুফল পাওয়া যায়নি। বরং প্রকল্প বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সংসদীয় কমিটির বৈঠকেও তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আগামীতে প্রকল্প বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা জরুরি।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রকল্প পরিচালক ড. এস এম মনজুরুল হান্নান খান জানান, কেইস প্রকল্পের মাধ্যমে বায়ুদূষণরোধে সারা দেশে ১৬টি স্থায়ী সার্বক্ষণিক বায়ুমান নির্ধারণী কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে এবং ১৫টি মোবাইল বায়ুমান নির্ধারণী কেন্দ্রসহ ৩১টি বায়ুমান নির্ধারণী কেন্দ্র করা হয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের জন্য ১৪ তলাবিশিষ্ট একটি আধুনিক ভবন, আন্তর্জাতিকমানের একটি অডিটরিয়াম ও একটি আধুনিক ল্যাবরেটরি তৈরি করা হয়েছে। কেইস প্রকল্পের মাধ্যমে বায়ুদূষণের ক্ষেত্রগুলোকে চিহ্নিত করে তা বন্ধ ও নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। আশা করা যায় বেস্ট প্রকল্পের মাধ্যমে ওই প্রকল্পের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা সম্ভব হবে।

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

ঈদগাঁও–ঈদগড় সড়কে গুম ও ডাকাতি দমনে প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি

শিবচরে মাদক রোধে ইউএনও’র কাছে স্মারকলিপি দিল উপজেলা বিএনপি