চট্টগ্রাম: শীতের সকাল। কুয়াশা ভেদ করে সবেমাত্র সূর্য উঁকি দিচ্ছে।এরইমধ্যে ক্রিং ক্রিং শব্দে আনোয়ারার কর্ণফুলী নদীর পাড় মুখরিত। পুরুষ-নারী, যুবক থেকে মধ্যবয়সীরা সাইকেল চালিয়ে আনোয়ারার শেষ প্রান্ত থেকে আর কেউ পটিয়াসহ দূর-দূরান্ত থেকে আসছেন। কর্ণফুলী নদীর পাশ ঘেঁষে থাকা ঘাটে একপাশে সযত্নে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখছেন সাইকেলগুলো। সাইকেল রেখেই যে যার মতো বিভিন্ন কারখানায় চলে যাচ্ছেন। সারিবদ্ধ হাজারো সাইকেল এভাবে রেখেই দিনের পুরো সময়টা নিজেদের কর্মস্থলে থাকেন তারা। কাজ শেষে কেউ সন্ধ্যায় আর কেউ রাত ১০টায় এসে যেভাবে রেখেছেন, ঠিক সেইভাবে সাইকেল চালিয়ে নিজ নিজ বাসা-বাড়িতে চলে যান। এসব সাইকেল কেউ ধরেও না, চুরির ঘটনাও ঘটেনি কোনোদিন। এমনকি লাল ও সবুজ রংয়ের দুটি সাইকেল পড়ে আছে চারবছর ধরে। যে শিকল দিয়ে সাইকেল দুটি বাঁধা, তা মরিচে ধরে তালাও খুলে গেছে। তবুও কেউ ধরেনি, চোরও নিয়ে যায়নি।শ্রমিকদের কষ্টের জমানো টাকার সাইকেল বলে চোরও মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে হয়তো চুরি করেনি-এমনটাই বললেন সিএনজি অটোরিকশা চালক নুর হাসান।তিনি বলেন, প্রতিদিন হাজার হাজার শ্রমিক আনোয়ারার ও চট্টগ্রাম শহরে বিভিন্ন কারখানায় কাজ করেন। এদের মধ্যে বেশিরভাগ শ্রমিক সাইকেল চালিয়ে কর্মস্থলে যান। এখানে অনেক নারীও আছে, যারা সাইকেল চালান। সূর্য ওঠার আগেই তারা কর্ণফুলী ঘাটে সাইকেল শিকল দিয়ে বেঁধে রেখে গন্তব্যে যান। কাজ শেষে এই সাইকেল নিয়ে আবার ঘরে ফিরেন।তিনি বলেন, সাইকেলগুলো সারাদিন এভাবেই সারিবদ্ধভাবে বাঁধা থাকে। কেউ ধরে না, চুরির ঘটনাও ঘটেনি। এখানে দুটি সাইকেল আছে, যাদের মালিক আসছে না প্রায় চার বছর। তবুও কেউ সাইকেল দুটি ধরেনি।নদীর পাড়ের চায়ের দোকানদার আবুল কালাম বলেন, শ্রমিকদের কষ্টের জীবন। সেই কষ্টের টাকা থেকে সাইকেলগুলো কেনা। এটা সবাই বুঝে। এজন্য সাইকেলগুলো যেমনভাবে তারা রাখেন, ঠিক সেইভাবে আবার নিয়ে যান। আর আমরাও মাঝে-মধ্যে তাদের সহযোগিতা করি।