বিপুল পরিমাণ বকেয়া গ্যাস বিল নিয়ে বিপাকে তিতাস

বিপুল পরিমাণ বকেয়া গ্যাস বিল নিয়ে বিপাকে তিতাস

নিজস্ব প্রতিবেদক : তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির বকেয়া বিলের পরিমাণ প্রতি বছরই বাড়ছে। আর করোনা মহামারীর প্রভাবে তা আরো বেড়েছে। গত অর্থবছরে তিতাসের নতুন করে ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকার বেশি বিল বকেয়া পড়েছে। যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা বেশি। আর বকেয়া বিল আদায়ে তিতাস নানা উদ্যোগ নিলেও খুব একটা সুফল মিলছে না। বকেয়া পরিশোধে গ্রাহকদের কাছে বারবার চিঠি দিয়েও কোনো লাভ হচ্ছে না। তার ওপর করোনা মহামারীর কারণে গ্যাসের বিল পরিশোধে সময়সীমা বাড়ানোয় অনেক গ্রাহকই বিল দেয়নি। বর্তমানে জমে যাওয়া ওসব বিল আদায়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে। জ্বালানি বিভাগ এবং তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, গত অর্থবছরে তিতাস ১৬ হাজার ৯৫০ কোটি ৪১ লাখ টাকার গ্যাস বিক্রি করেছে। বিপরীতে আদায় করেছে ১৫ হাজার ১৮২ কোটি ৩২ লাখ টাকা। ওই হিসেবে এক অর্থবছরেই গ্রাহকদের কাছে সংস্থাটির বিল বকেয়া পড়েছে ১ হাজার ৭৬৮ কোটি টাকা। তার আগের অর্থবছরে (২০১৮-১৯) তিতাসের গ্যাস বিক্রি হয়েছিল ১৩ হাজার ৬২২ কোটি টাকা। বিপরীতে বিল বকেয়া পড়েছিল ৫৪৮ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। ওই হিসেবে গত অর্থবছরের বকেয়ার পরিমাণ বেড়েছে ১ হাজার ২১৯ কোটি ২২ লাখ টাকা। আর গত অর্থবছরের বকেয়া বিলসহ বর্তমানে কোম্পানিটির মোট বকেয়া বিলের পরিমাণ প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকায় গিয়ে ঠেকেছে।
সূত্র জানায়, শিল্প খাতে তিতাসের সবচেয়ে বেশি গ্যাস বিক্রি হয়। প্রতি বছর শিল্প খাতে সংস্থাটি প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার গ্যাস বিক্রি করে। গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৫ হাজার ৩১৩ জন গ্রাহকের কাছে তিতাস ৩ হাজার ৮১৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকার গ্যাস বিক্রি করেছে। বিপরীতে আদায় হয়েছে ৩ হাজার ৪৫৪ কোটি ৭১ লাখ টাকা। এ খাতে অর্থবছরে বকেয়া বিলের পরিমাণ ৩৫৯ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। তবে আবাসিক খাতে সংস্থাটির সবচেয়ে বেশি গ্রাহক রয়েছে। ২৮ লাখ আবাসিক গ্যাস গ্রাহকের কাছে গত বছর বকেয়া বিল ছিল ২৬৫ কোটি ১৮ লাখ টাকা। এ বছর তা দ্বিগুণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ৫০৮ কোটি ১১ লাখ টাকায়। তার বাইরে সংস্থাটির ২০১৯-২০ অর্থবছরে সরকারি বিদ্যুৎ কোম্পানির কাছে ৪৪ কোটি টাকা, বেসরকারি বিদ্যুৎ কোম্পানির কাছে ২৭০ কোটি টাকা, ক্যাপটিভ পাওয়ারে ৪৯০ কোটি টাকা, সিএনজিতে ৬৬ কোটি টাকা ও বাণিজ্যিকে ২৪ কোটি টাকার মতো বকেয়া বিল পড়ে আছে।
সূত্র আরো জানায়, তিতাসের বকেয়া গ্যাস বিলের অর্থ আদায়ের লক্ষ্যে ১ হাজার ২০৩টি মামলা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে আদালতে আরো ১৬৮টি মামলা করেছে তিতাস। গত অর্থবছরে ওসব মামলার মধ্যে ১৪৮টি মামলা নিষ্পত্তি করা হয়েছে। যার মাধ্যমে গ্রাহকদের কাছ থেকে ৯৮ কোটি ৮৩ লাখ টাকা আদায় করেছে তিতাস।
এদিকে বিগত অর্থ বছরের তুলনায় ২০১৯-২০ অর্থবছরে বকেয়া বিল বেশি হওয়ার কারণ প্রসঙ্গে তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী আলী ইকবাল মো. নুরুল্লাাহ জানান, বকেয়া বিল বাড়ার কারণ মূলত করোনা মহামারী। করোনাকালীন গ্যাস বিল পরিশোধে গ্রাহকদের যে সুযোগ দেয়া হয়েছিল ওই সুযোগ নিয়ে অনেকেই বিল পরিশোধ করেননি। অনেকে কয়েক মাসের বিল বকেয়া রেখেছেন। এখন একসঙ্গে এতো বিল পরিশোধ করতেও ব্যর্থ হচ্ছেন গ্রাহকদের বড় একটি অংশ। ফলে বকেয়া বিলের পরিমাণ বেড়েই চলেছে। তাছাড়া সরকারি ও বেসরকারি কারখানাগুলোতে আগের তুলনায় গ্যাস নেয়ার পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় তাদের বিলের পরিমাণও বেড়ে গেছে। তাদের কাছেও মোটা অংকের টাকা পড়ে রয়েছে। ওসব বিল আদায়ে চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
অন্যদিকে তিতাসের বিপুল পরিমাণ বকেয়া বিল আদায় প্রসঙ্গে জ্বালানি বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আনিসুর রহমান জানান, বকেয়া বিলের বড় একটি অংশ শিল্পশ্রেণীর গ্রাহকের কাছে পড়ে আছে। ওসব বিল পরিশোধে তিতাস চিঠি দিয়ে তাগাদা দিচ্ছে। তাছাড়া যাদের বকেয়া বিল বাকি রয়েছে তারা নতুন কোনো সংযোগ চাইলে দেয়া হচ্ছে না। বকেয়া বিল পরিশোধের জন্য তাদের নোটিস দেয়া হচ্ছে। যদি তারা বিল পরিশোধ না করে তাহলে পর্যায়ক্রমে তাদের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হবে।

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

বাংলাদেশি কর্মীদের বেতন না দিয়ে শাস্তির মুখে মালয়েশিয়ান কোম্পানি

বিশ্বকাপ খেলতে যুক্তরাষ্ট্রের পথে বাংলাদেশ দল