নিজস্ব প্রতিবেদক :কর্মব্যস্ততার পাশাপাশি করোনা মহামারিতে প্যাকেটজাত হিমায়িত বা প্রস্তুত খাবারের চাহিদা দেশে দ্রুত বাড়ছে। অতীতে মানুষের মধ্যে এ ধরনের খাবার কেনার হিড়িক দেখা যায়নি। কিন্তু বর্তমানে প্যাকেটজাত খাদ্য এক দিনে যা বিক্রি হয়, আগে তা এক সপ্তাহে বিক্রি হয়নি। মূলত করোনা মহামারিতে হিমায়িত বা প্রস্তুত খাবার আরো জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এখন ক্রেতাদের চাহিদা বিবেচনা করে প্যাকেটজাত ফ্রোজেন খাদ্যপণ্য বাজারজাত করছে। তার মধ্যে প্রাণ আরএফএল, কাজী ফার্মস, গোল্ডেন হারভেস্ট, ব্র্যাক চিকেন, আফতাব ফুডস, আইজি ফুডস, রিচ ফুড, সিপি, এজি গ্রুপ, প্যারাগনসহ প্রায় ২৮-৩০টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। নিরাপদ খাদ্যের অঙ্গীকারে সম্ভাবনাময় এই বাজারে এবার শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী গ্রুপ বসুন্ধরাও আসছে। তারা পছন্দের নানা স্বাদের ফ্রোজেন ফুড বাজারে নিয়ে আসছে বলে জানা যায়। রাজধানীর বিভিন্ন দোকান ও সুপারশপ এবং হিমায়িত বা প্রস্তুত খাদ্য বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিগত ২০০৬ সাল থেকে এদেশে গোল্ডেন হারভেস্ট হিমায়িত খাদ্যপণ্য উৎপাদন ও বাজারজাত করে আসছে। তাদের হিমায়িত খাদ্যপণ্যের মধ্যে রয়েছে পরোটা, আলু ও ডালপুরি, বিফ ও চিকেন স্ক্রিং রোল, শিঙাড়া, সমুচা, চিকেন নাগেটসসহ মুরগির মাংসের তৈরি নানা পদ। তাছাড়া চিকেন মিটবল, মিষ্টি ও ঝাল স্বাদের চিকেন উইংস, পপ চিকেন, চিকেন স্ট্রিপস নামের নতুন কয়েকটি পণ্যও প্রতিষ্ঠানটি বাজারে এনেছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে মানুষের কর্মব্যস্ততায় দ্রুতই বদলে যাচ্ছে খাদ্যাভ্যাস। কারণ কর্মজীবী মহিলাদের বড় বিরক্তির কারণ হয়ে ওঠে অফিস শেষে বাজার করে বাসায় ফেরা, তার ওপর রান্নাবান্না করা। ওসব ঝামেলা থেকে মুক্তি পেতে প্যাকেটজাত রুটি, পরোটা, শিঙাড়া ইত্যাদি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। প্যাকেট খুলেই ঝটপট ভেজে ফেলা বা রান্না করে পরিবেশন করা যায় এমন সুবিধাতেই দেশে দ্রুত বাড়ছে হিমায়িত বা প্রস্তুত খাদ্যের বাজার। ক্রেতাদের চাহিদায় এখন হিমায়িত রুটি, পরোটা, শিঙাড়া, সমুচা, চিকেন মমো, চিকেন ফ্রাই, চিকেন নাগেটস, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, চিকেন মিডবল খাবারগুলোর চাহিদা ৪০-৫০ শতাংশ বেড়েছে এবং ক্রেতারাও ওসব প্যাকেটজাত ফ্রোজেন খাদ্য কিনে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছে।
সূত্র জানায়, বিগত ২০১৩ সালে এদেশে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের ঝটপট ফ্রোজেন খাদ্যের বাজারে আসে। ওই ব্র্যান্ডের অধীনে পরোটা, শিঙাড়া, সমুচা, রুটি, চিকেন রোল, চিকেন নাগেট, চিকেন পেটি, চিকেন সসেজ, পুরি, পপকর্ন, স্ট্রিপস, ফ্রেঞ্চ ফ্রাইসহ বিভিন্ন পণ্য রয়েছে। ঝটপট ফ্রোজেন ফুডস এখন দেশের বাইরেও ফ্রোজেন খাদ্য পাঠাচ্ছে। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশে চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় সীমিত পরিসরে আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরে ঝটপটের পণ্য রপ্তানি হচ্ছে। আর এদেশে মূলত কর্মব্যস্ত জীবনে দীর্ঘ সময় ধরে নাশতা কিংবা খাবার তৈরির ঝামেলা থেকে বাঁচতে ক্রমেই জনপ্রিয় হচ্ছে ফ্রোজেন খাবার। বিশেষ করে বর্তমানে করোনাভাইরাসে মানুষজন হোটেল, রেস্টুরেন্ট, পাড়া-মহল্লার ছোট খাবারের দোকানে কম যাওয়ায় ফ্রোজেন খাবারের চাহিদাও দ্রুত বাড়ছে।
সূত্র আরো জানায়, গত চার-পাঁচ বছর যাবতই হিমায়িত খাদ্যের বাজারে ভালো প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। বছরে গড়ে ২০ শতাংশ করে প্রবৃদ্ধি এসেছে। বর্তমানে মাংস পণ্যসহ হিমায়িত খাদ্যের বাজারের আকার এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ কোটি টাকার মতো। তবে করোনা ওই সম্ভাবনা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে আশা করা যায় ২০২৫ সাল নাগাদ এই বাজার দ্বিগুণ বেড়ে দুই হাজার ৫০০ কোটি টাকা হবে। কাজী ফুডস ইন্ডাস্ট্রিজ ২০১৪ সালে দেশের বাজারে হিমায়িত খাদ্যপণ্যের ব্যবসা শুরু করে। প্রতিষ্ঠানটি নিজস্ব খামারে উৎপাদিত মুরগির তৈরি বিভিন্ন আইটেমের পাশাপাশি টিজার্স, স্ট্রিপস, স্ক্রিং রোল, নাগেটস, পরোটা, পুরি, সমুচা, হালকা খাবারও বিক্রি করছে । তাদের কাজী ফার্মস কিচেন আউটলেট নামের নিজস্ব বিক্রয়কেন্দ্র আছে। পাশাপাশি সুপারশপ ও সাধারণ মুদি দোকানে তাদের পণ্য বিক্রি হচ্ছে। তাছাড়াও কাজী ফার্মস বেশ কয়েকটি নতুন ফ্রোজেন পণ্য বাজারে নিয়ে এসেছে। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে ক্রিস্পি শ্রিম্প, চিকেন পপকর্ন, খিচুড়ি উইথ চিকেন কারি ও চিকেন সাসলিক।
এদিকে হিমায়িত বা প্রস্তুত খাবারের বাজার প্রসঙ্গে কাজী ফার্মসের বিক্রয় ও বিপণন শাখার প্রধান জাকারিয়া হোসেন কালের জানান, দেশে দিন দিন ফ্রোজেন খাবারের চাহিদা বাড়ছে। মানুষের জীবনযাত্রা পরিবর্তন হচ্ছে, স্বামী-স্ত্রী দুজন চাকরি করছেন, মানুষের হাতে সময় কম। সব মিলিয়ে এখন সবাই রেডি টু ফুড চায়। ওই কারণেই ফ্রোজেন খাবারের মার্কেট বাড়ছে। কাজী ফার্মসের ফ্রোজেন খাবার শতভাগ স্বাস্থ্যসম্মত। যেগুলোতে ক্ষতিকারক প্রিজারভেটিভ আছে সেগুলো ব্যবহার করা হয় না এবং সব সময় গুণগত মান নিশ্চিত করা হয়
অন্যদিকে করোনাকালে হিমায়িত খাদ্যের চাহিদা বেড়েছে জানিয়ে এসিআই লজিস্টিকস লিমিটেডের (স্বপ্ন) নির্বাহী পরিচালক সাব্বির হাসান নাসির জানান, করোনা ভাইরাসের কারণে প্যাকটেজাত খাদ্যের চাহিদা অনেক বেড়েছে। মুদি পণ্যের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের শিশুখাদ্য, সহজেই রান্না করা যায় এমন হিমায়িত খাদ্যের চাহিদা বেড়েছে।