আতাউর রহমান মিন্টু, গফরগাঁও (ময়মনসিংহ) সংবাদদাতা ঃ ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে মঙ্গলবার দিবাগত গভীর রাতে কনকনে ঠান্ডার মধ্যে শতবর্ষী বৃদ্ধা হাসিনা বেগম (১০৫) কে ছালার ভিতর ভরে রাস্তার মধ্যে ফেলে যায় তার পরিবারের লোকজন।
থানা পুলিশ শতবর্ষী বৃদ্ধা হাসিনা বেগমকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেছে। এ ঘটনায় থানা পুলিশ বৃদ্ধার সৎ ছেলে ও নাতি জামাইকে আটক করেছে।
পৌর শহরের ৪ নং ওয়ার্ডের চর জন্মেজয় এলাকার শতবর্ষী বৃদ্ধা হাসিনা বেগম। স্বামী আব্দুল খালেক মারা গেছেন ৩০ বছর আগে। একমাত্র মেয়ে জোসনাও মারা গেছে বেশ ক‘বছর হলো । নিজের ছেলে সাহিদ ও দুই সৎ ছেলে দুলাল (৬২), জালাল (৫৯) ও তাদের ছেলেমেয়ে ও বৃদ্ধার মেয়ে জোসনার ছেলে মেয়েরা নিজ নিজ সংসারে ভালোই আছে। কিন্ত তাদের কারও সংসারে শতবর্ষী বৃদ্ধার ঠাই হয়নি। শতবর্ষী বৃদ্ধাকে খেতে-পরতে দিতে চায় না বৃদ্ধার জীবিত কোনো সন্তান কিংবা সন্তানদের ছেলে-মেয়েরা । তাই কনকনে ঠান্ডা ও ঘন কুয়াশার মধ্যে মঙ্গলবার দিবাগত গভীর রাতে বাড়ি থেকে দেড় কিলোমিটার দুরে গফরগাঁও-ভালুকা সড়কের ষোলহাসিয়া এলাকায় তিতাস গ্যাস অফিস সংলগ্ন একটি দোকানের সামনে শতবর্ষী বৃদ্ধা হাসিনা বেগমকে ফেলে রেখে যায়। বুধবার ভোরে একটি ছালার ভিতর্ েসারা শরীর ও বাইরে মুখ বের করা অবস্থায় হাসিনা বেগমকে দেখতে পায় পথচারীরা। দেখতে পেয়ে তারা গফরগাঁও থানা পুলিশকে খবর দিলে থানা পুলিশ বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। পুলিশ বৃদ্ধার সৎ ছেলে দুলাল (৬২) ও দুলালের মেয়ের জামাই আনোয়ার হোসেন (৪০) কে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। বৃদ্ধার ছেলে সাহিদ ত্রিশাল উপজেলার বালিপাড়া গ্রামে বাস করে।
হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, বৃদ্ধাকে স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে । তার দু’চোখ বেয়ে অশ্রু নেমে এসেছে। তিনি কি যেন বলতে চাইছেন। কিন্ত শতবর্ষী বৃদ্ধার ক্ষীন কন্ঠে তা বোঝা যাচ্ছে না। বৃদ্ধার বাড়ি হাসপাতাল থেকে আধা কিলোমিটারের মধ্যে হলেও বৃদ্ধাকে হাসপাতালে নেওয়ার ৫ ঘন্টার মধ্যে তার পরিবারের কোন সদস্য কিংবা কোন আত্ত্বীয়স্বজন বৃদ্ধাকে দেখতে হাসপাতালে যায়নি।
স্থানীয়রা জানায়, ৩০ বছর আগে স্বামী মারা যাওয়ার পর অনেক কষ্ট করে সংসারের হাল ধরে রেখেছিলেন হাসিনা বেগম। এখন বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে ভুগছেন। চলাফেরাও করতে পারেন না তিনি । ছেলে ও পরিবারের লোকজনের কাছে হয়ত বোঝা হয়ে গেছেন তিনি।
গফরগাঁও থানার ওসি অনুকুল সরকার বলেন, এলাকাবাসীর কাছ থেকে খবর পেয়ে বৃদ্ধা হাসিনা বেগমকে রাস্তা থেকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। এখন বৃদ্ধাকে তার ছেলেদের কাছে কিংবা নাতিদের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হবে। বৃদ্ধার যাতে কোন অযত্ন না হয় সেজন্য থানা পুলিশ তদারকি করবে।