পিজিসিবি বিদ্যুৎ সরবরাহ উন্নয়ন প্রকল্প দ্বিগুণ সময়েও বাস্তবায়ন করতে পারেনি

পিজিসিবি বিদ্যুৎ সরবরাহ উন্নয়ন প্রকল্প দ্বিগুণ সময়েও বাস্তবায়ন করতে পারেনি

নিজস্ব প্রতিবেদক :সরকারি সংস্থা পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) দেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতির উন্নয়নে নেয়া প্রকল্প নির্ধারিত সময়ের চেয়ে দ্বিগুণ সময়েও সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন করতে পারেনি। ৪ বছর মেয়াদের প্রকল্প ৮ বছরেও বাস্তবায়িত হচ্ছে না। প্রকল্প যথাসময়ে বাস্তবায়িত হলে দেশের বিভিন্ন জেলা জুড়ে ২২০ কিলোমিটার দীর্ঘ সঞ্চালন লাইন এবং ১৩টি সাবস্টেশন বসতো। কিন্তু সঞ্চালন লাইন নির্মাণ সম্পন্ন না হওয়ায় উৎপাদন ও চাহিদা থাকলেও শুধু সঞ্চালন দুর্বলতায় গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুৎ বিতরণ করা যাচ্ছে না। বরং প্রায় সময়ই বিদ্যমান লাইনে ত্রুটি ও অগ্নিকাণ্ড ঘটছে। তাতে গ্রাহকদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎ, জ¦ালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় প্রকল্পের একটি অংশ বাদ দিয়ে বাকি কাজ ২০২১ সালের জুনের মধ্যে সম্পন্ন করতে বলেছে। বিদ্যুৎ, জ¦ালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিগত ২০১২ সালে ন্যাশনাল পাওয়ার ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক ডেভেলপমেন্ট (এনপিটিএনডি) প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয় এবং ২০১৩ সালে তা একনেকে অনুমোদন পায়। ২০১৭ সালের জুনের মধ্যেই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সময়সীমা নির্ধারিত ছিল। প্রকল্পের খরচ প্রাক্কলন করা হয় ২ হাজার ৪২৬ কোটি ৬১ লাখ টাকা। তার মধ্যে সরকার ৩৭৮ কোটি ৩৩ লাখ টাকা এবং পিজিসিবির ২৮০ কোটি ৭৬ লাখ টাকা সংস্থানের কথা ছিল। বাকি ১ হাজার ৭৬৭ কোটি ৫২ লাখ টাকা উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা জাইকা ঋণ সহায়তা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু কয়েক দফা সময় বাড়িয়েও পিজিসিবি এবং ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারেনি। বরং সময় বেড়ে যাওয়ায় খরচ বেড়ে দাঁড়ায় ২ হাজার ৫১৬ কোটি ১৫ লাখ টাকা। সংশোধিত ডিপিপিতে সরকারের খরচের অংশ বেড়ে হয় ৮০০ কোটি ২৩ লাখ টাকা। আর জাইকার খরচ কমে দাঁড়ায় ১ হাজার ৪২২ কোটি ৭৪ লাখ টাকা।
সূত্র জানায়, এনপিটিএনডি প্রকল্পের আওতায় ১৩টি সাবস্টেশনের (উপকেন্দ্র) মধ্যে ১২টির নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। ৬টি উপকেন্দ্রের বে-এক্সটেনশনের মধ্যে ৪টি সম্পন্ন হয়েছে। ২২০ কিলোমিটার দীর্ঘ সঞ্চালন লাইনের মধ্যে ৩০ কিলোমিটারের বেশি এখনো বাকি রয়েছে। আর প্রকল্পটির আওতায় ২৬ কিলোমিটার হাটহাজারী-রামপুর সঞ্চালন লাইন বাদ দেয়া হয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, হাটহাজারী-রামপুর ২৩০ কেভি সঞ্চালন লাইনের নির্মাণকাজ চলাকালে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর বানৌজা ভাটিয়ারির আপত্তির কারণে নির্মাণকাজ বন্ধ হয়ে যায়। সামরিক স্থাপনার নিরাপত্তা এবং ভাটিয়ারির সীমানা নিকট ভবিষ্যতে সম্প্রসারণের প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় নৌবাহিনী লাইনটি তাদের আওতাধীন ওই এলাকা দিয়ে নির্মাণ করার ব্যাপারে সম্মত হয়নি। বিকল্প পথে লাইনটি নির্মাণ করতে হলে তার দৈর্ঘ্য বেড়ে যায় এবং তা বাস্তবায়নে আরো দুই বছর সময় লাগবে। কিন্তু পিজিসিবির এমন প্রস্তাবে সায় দেয়নি অর্থ মন্ত্রণালয় এবং বিদ্যুৎ জ¦ালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। বরং হাটহাজারী-রামপুর ২৩০ কেভি সঞ্চালন লাইনটি বাদ দিয়েই প্রকল্পটি ২০২১ সালের জুনের মধ্যে সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। আর হাটহাজারী-রামপুর লাইনটি পরবর্তী সময়ে অন্য কোনো প্রকল্পভুক্ত করার নির্দেশনা দেয়া হয়। পাশাপাশি গত সেপ্টেম্বরে খরচ আর না বাড়িয়ে আগামী জুনের মধ্যে এনপিটিএনডি প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে বিদ্যুৎ বিভাগ পিজিসিবিকে নির্দেশনা দিয়ে চিঠি দিয়েছে।
এদিকে এ প্রসঙ্গে পিজিসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম কিবরিয়া জানান, প্রকল্পটি বেশ পুরোনো। দ্রুত সম্পন্নের চেষ্টা করা হচ্ছে। আগামী বছরের জুনের মধ্যেই তা করার চেষ্টা করা হবে। তবে করোনা সংক্রমণের মধ্যে তা বাস্তবায়ন করা বেশ কঠিন।

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

বাংলাদেশি কর্মীদের বেতন না দিয়ে শাস্তির মুখে মালয়েশিয়ান কোম্পানি

বিশ্বকাপ খেলতে যুক্তরাষ্ট্রের পথে বাংলাদেশ দল