নিজস্ব প্রতিবেদক : রোহিঙ্গা গণহত্যার বিষয়ে আন্তর্জাতিক আদালতে (আইসিজে) মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ে গাম্বিয়াকে সহায়তার জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তহবিল সংগ্রহের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন। চলতি সপ্তাহের ২৭-২৮ নভেম্বর নাইজারে ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের অংশগ্রহণে ওআইসির কাউন্সিল অব ফরেন মিনিস্টার্সের (সিএফএম) ৪৭তম অনুষ্ঠিত হবে। ৫৭ সদস্য বিশিষ্ট এ অধিবেশনে যোগ দেবেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীও। বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থাকে (বাসস) দেয়া এক সাক্ষাতকারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী নাইজার সফর সম্পর্কে বলেন, গাম্বিয়ার এই লড়াইয়ে দেশটিকে আর্থিক সহায়তার প্রস্তাব দেয়া হবে। একইসঙ্গে গাম্বিয়াকে আর্থিক সহায়তা দেয়ার জন্য ওআইসির সদস্য দেশগুলোকেও আহ্বান জানাবে বাংলাদেশ। মোমেন বলেন, আমরা গাম্বিয়াকে আইসিজে-তে এই আইনি লড়াই চালাতে আর্থিক সহায়তা প্রদানের জন্য ওআইসির কাছে অর্থ দেব। এই মামলায় আইনজীবী নিয়োগ করায় তাদের এই সহায়তার প্রয়োজন রয়েছে। ওআইসির সদস্য এবং রোহিঙ্গা ইস্যুতে স্বপ্রণোদিত হয়ে আইসিজে-তে এই মামলা দায়েরকারী গাম্বিয়ার এই আইনি লড়াই চালাতে আর্থিক সহযোগিতার প্রয়োজন। এ বিষয়ে জোরালো আহ্বান জানাবে ঢাকা। বাংলাদেশের এই আর্থিক সহায়তার বিষয়টি সম্পর্কে অবগত কর্মকর্তারা বলেন, ঢাকা এখন এই মামলায় গাম্বিয়ার সহায়তায় ওআইসিকে একটি তহবিল দিয়েছে। কিন্তু তারা তহবিলের পরিমাণ সম্পর্কে জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেছেন, সিএফএম-এর অধিবেশনই তহবিলের পরিমাণটি জানানোর উপযুক্ত স্থান। সিএফএমের এই বৈঠকের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘শান্তি ও উন্নয়নের লক্ষ্যে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ঐক্য’। ওআইসি মহাসচিব ড. ইউসেফ আল-ওসমানী নাইজারের রাজধানী নিয়ামেই-তে এই আয়োজনের সভাপতিত্ব করবেন। সেখানে রোহিঙ্গা সংকট ও মামলার বিষয়টি সর্বাধিক প্রাধান্য পাবে এবং অধিবেশনে বাংলাদেশ থেকে তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারকে চাপ দেয়া হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন মোমেন। মিয়ানমারের ওপর চাপ দেয়ার বিষয়ে আশা রেখে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ওআইসি রোহিঙ্গা ইস্যুটিকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। জাতিসংঘে এই ইস্যুতে ওআইসির সকল সদস্য জোরালোভাবে আমাদের সমর্থন করছে। এই সংকটটিতে ওআইসি লক্ষ্যণীয়ভাবেই সাড়া দিয়েছে। মিয়ানমারে নিজভূমি থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ। এদের অধিকাংশই ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর কঠোর দমনপীড়ন শুরুর পর প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কীভাবে তহবিল সংগ্রহ করা হবে সে বিষয়েও সেখানে আলোচনা হবে। গত বছরের নভেম্বর মাসে, গাম্বিয়া আইসিজে-তে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে এই মামলাটি দায়ের করে। ওআইসি, কানাডা ও নেদারল্যান্ডস গাম্বিয়াকে সমর্থন দেয়। ১০-১২ ডিসেম্বর আসিজে-তে মামলাটির প্রথম শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। ডিসেম্বরের শুনানিতে গাম্বিয়া মামলার আর্জিতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে ১৯৪৮ সালের গণহত্যা সনদের আলোকে অভিযোগ এনে বলে, ভয়াবহ সামরিক হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে ‘মিয়ানমার তাদের নিজ দেশে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে দমনপীড়ন চালিয়েছে।’ গত ২৩ জানুয়ারিতে আইসিজে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে নতুন করে গণহত্যার মতো ঘটনা ঠেকাতে প্রয়োজনীয় জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নেয়। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে, এই মামলার চূড়ান্ত রায় না হওয়া পর্যন্ত গাম্বিয়াকে অব্যাহতভাবে সমর্থন প্রদানের জন্য বাংলাদেশ ওআইসি’র প্রতি আহ্বান জানায়। পাশাপাশি বাংলাদেশ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের মাতৃভূমিতে তাদের সম্মানজনক, নিরাপদে ও টেকসই প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে ওআইসির সহায়তা চায়। ওআইসির কাউন্সিল অব ফরেন মিনিস্টার্স (সিএফএম) অধিবেশনের ফাঁকে সৌদি আরব, মালদ্বীপ ও আফগানিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সাথে তিনি দ্বিপক্ষীয় বৈঠকেও বসবেন আবদুল মোমেন। এছাড়াও সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কুয়েতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গেও তিনি পৃথক বৈঠকে বসতে পারেন বলে পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। এই সফরে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরসঙ্গীরা হলেন- পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত ড. মোহাম্মদ জাভেদ পাটোয়ারী এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ডিরেক্টর জেনারেল অব ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন (আইও) ওয়াহিদা আহমেদ। ড. মোহাম্মদ জাভেদ পাটোয়ারি ওআইসিতে বাংলাদেশি স্থায়ী প্রতিনিধি।