নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রায় ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা আত্মসাতের পর কানাডায় পাড়ি জমানো পি কে হালদার (প্রশান্ত কুমার হালদার) দেশে ফিরিয়ে আনা ও গ্রেপ্তারের বিষয়ে সরকারের পদক্ষেপ কী তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। আগামী ১ ডিসেম্বরের মধ্যে সংশ্লিষ্টদের ওই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ আমলে নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের একটিু ভার্চুয়াল বেঞ্চ এ আদেশ দেন। প্রায় ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে কানাডায় চলে যান পি কে হালদার (প্রশান্ত কুমার হালদার)। পিকে হালদারের প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স সার্ভিস লিমিটেডের করা এক আবেদনের মাধ্যমে তিনি দেশে ফিরতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি দেশে ফেরেননি বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়। ওই সংবাদ আমলে নিয়ে হাইকোর্ট এই রুল জারি করেন।
টাকা পাচার করে ধরাছোঁয়ার বাইরে, মগের মুল্লুক নাকি: এদিকে পি কে হালদারকে নিয়ে আদেশের সময় আদালত বলেন, দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করবে কেউ, আর সে ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকবে, মগের মল্লুক নাকি? কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। তাকে অবশ্যই দেশে ফিরিয়ে নিয়ে আনতে হবে, জবাবদিহি করতে হবে। ১৮ নভেম্বর দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনে ‘পি কে হালদারকে ধরতে ইন্টারপোলের সহায়তা চাইবে দুদক’ শীর্ষক প্রকাশিত প্রতিবেদন নজরে নিয়ে আদেশ দেন বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের ভার্চ্যুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ। আদালতে দুদকের পক্ষে ছিলেন মো. খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক। খুরশীদ আলম খান আদালতে বলেন, আসার কথা বলেও তিনি (পি কে হালদার) দেশে আসেননি। সবশেষ অবস্থা হলো, আমরা ইন্টারপোলের মাধ্যমে চেষ্টা করছি। এ সময় আদালত পত্রিকায় প্রকাশিত নিউজের একটি অংশ পড়ে শোনান। আদালত বলেন, আত্মসাৎ করে টাকা দেশের বাইরে পাঠিয়েছে কি? জবাবে খুরশীদ আলম খান বলেন, সেটাই তদন্ত চলছে। এখানে মানিলন্ডারিং হয়েছে। অনেক টাকাই বিদেশে পাঠিয়েছেন। সেটার তদন্ত চলছে। আদালত বলেন, দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করবে কেউ, আর সে ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকবে, মগের মুল্লুক নাকি? কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। তাকে অবশ্যই দেশে ফিরিয়ে নিয়ে আসতে হবে। তাকে আইনের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। তাকে অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে। এত টাকা সে কীভাবে আয় করেছে, কিভাবে বিদেশে পাচার করলো? আমরা মনে করি তাকে ফিরিয়ে আনতে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে কিনা সেটা আমাদের জানা দরকার। আদালত আরও বলেন, আমরা মনে করিÑ এটা তো হতে পারে না, একজন মানুষ হাজার হাজার কোটি নিয়ে যাচ্ছে, সে আইনের আওতার বাইরে থাকবে, কোর্টের আওতার বাইরে থাকবে, সমস্ত জাতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করবে, এটা হতে পারে না। তাকে ব্যাখ্যা করতে হবে কীভাবে এত টাকা বিদেশে নিলো। এ বিষয়ে অব্যশই যথাযথ আইনগত পদক্ষেপ নিতে হবে। তার বিরুদ্ধে অবশ্যই পদক্ষেপ নিতে হবে। এরপর আদালত প্রশান্ত কুমার হালদারকে (পি কে হালদার) বিদেশ থেকে ফেরাতে এবং গ্রেপ্তার করতে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা জানতে চেয়েছেন। দুদক চেয়ারম্যান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, ঢাকা জেলা প্রশাসককে ১০ দিনের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। ১০ দিনের মধ্যে এ বিষয়ে লিখিত ব্যাখ্যা দিতে হবে দুদক চেয়ারম্যানকে। এ ছাড়া পরবর্তী আদেশের জন্য ২ ডিসেম্বর দিন রেখেছেন আদালত। প্রশান্ত কুমার হালদার বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে থেকে অন্তত সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা লোপাট করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। পরে দুই বিনিয়োগকারীর করা আবেদনের শুনানি নিয়ে গত ১৯ জানুয়ারি এক আদেশে প্রশান্ত কুমার হালদারসহ সংশ্লিষ্ট ২০ জনের ব্যাংক হিসাব ও পাসপোর্ট জব্দের নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। এর মধ্যে দেশে ফিরতে প্রশান্ত কুমার হালদার এ বিষয়ে আদালতের কাছে আবেদন করতে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স সার্ভিস লিমিটেডের কাছে একটি পত্র দেন। এরপর কোম্পানিটি আদালতে আবেদন করে। ৭ সেপ্টেম্বর আদালত বলেছেন, তিনি কখন কীভাবে আসবেন তা জানাতে। পরে ২০ অক্টোবর একটি আবেদন করেছে কোম্পানিটি। যেখানে নির্বিঘ্নে দেশে আসার কথা বলা হয়েছে এবং সেখানে ২৫ অক্টোবরের একটি টিকিটের কপিও সংযুক্ত করা হয়। ২১ অক্টোবর হাইকোর্ট এ বিষয়ে এই আদেশ দেন। আদেশে দেশে আসার সঙ্গে সঙ্গে তার গ্রেপ্তার নিশ্চিত করতে বলা হয়। পরে তার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বাস্তবায়ন করতে সংশ্লিষ্ট আদালতে পাঠাতে বলা হয়েছে। পুলিশের মহাপরিদর্শক, ইমিগ্রেশন অথরিটিরি চিফ ও দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রতি এ নির্দেশনা দেওয়া হয়। কিন্তু ২৪ অক্টোবর ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স সার্ভিস লিমিটেডের আইনজীবী দুর্নীতি দমন কমিশন এবং রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীকে জানিয়েছেন পি কে হালদার ২৫ অক্টোবর দেশে ফিরছেন না।