কথা সাহিত্যিক মীর মশাররফ হোসেনের ১৭৩ তম জন্মবার্ষিকী

কথা সাহিত্যিক মীর মশাররফ হোসেনের ১৭৩ তম জন্মবার্ষিকী

নিজস্ব প্রতিবেদক :  ১৩ নভেম্বর, কালজয়ী উপন্যাস বিষাদ সিন্ধু রচয়িতা অমর সাহিত্যিক মীর মশাররফ হোসেনের ১৭৩তম জন্ম বার্ষিকী। বাংলা সাহিত্যের অন্যতম দিকপাল, ঊনবিংশ শতাব্দীর সর্বশ্রেষ্ঠ মুসলিম সাহিত্যিক ছিলেন তিনি।
কথা সাহিত্যিক মীর মশাররফ হোসেন এঁর ১৭৩ তম জন্ম বার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষ্যে রাজবাড়ী জেলা শিল্পকলা একাডেমীর মিলনায়তনে ছড়া উৎসব, সম্মাননা প্রদান ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতি সংসদ।
মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতি সংসদের ছড়া উৎসব উদযাপন উপ-কমিটির আহবায়ক শাহ মুজতবা রশীদ আল কামাল জানান, আজ ১৩ নভেম্বর সকাল ১০টায় অনুষ্ঠানের ১ম পর্বে উদ্ধোধন করবেন রাজবাড়ী সরকারি কলেজের প্রাক্তণ অধ্যক্ষ ও মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতি সংসদের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. ফকীর আব্দুর রশিদ। এসময় অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন রাজবাড়ী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান, রাজবাড়ী সরকারি আদর্শ মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর দিলীপ কুমার কর, রাজবাড়ী জেলা শিল্পকলা একাডেমীর সাধারণ সম্পাদক অসীম কুমার পাল, ফরিদপুর বর্ণমালা সাহিত্য পরিষদের সভাপতি কবি আবু জাফর দিলু। উক্ত অনুষ্ঠানের সভাপত্বি করবেন মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতি সংসদের সভাপতি সালাম তাসির।
অনুষ্ঠানের ২য় পর্ব সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন রাজবাড়ী জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা ফকীর আব্দুল জব্বার। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন রাজবাড়ী সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এ্যাড: ইমদাদুল হক বিশ্বাস, মাগুরা মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক কবি ডা. আব্দুল্লাহ আবু সাঈফ, রাজবাড়ী প্রাক্তণ জেলা শিক্ষা অফিসার সৈয়দ সিদ্দিকুর রহমান। উক্ত অনুষ্ঠানের সভাপত্বি করবেন মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতি সংসদের সভাপতি সালাম তাসির।
জানা গেছে, কালজয়ী সাহিত্যিক মীর মশাররফ হোসেন ১৮৪৭ সালের ১৩ নভেম্বর কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলা লাহিনীপাড়া গ্রামের মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা মীর মোয়াজ্জেম হোসেন এলাকার সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি ছিলেন। তাঁর মায়ের নাম দৌলতুন্নেসা। মীর মশাররফ প্রথমে জগনমোহন নন্দীর পাঠশালায় পড়াশুনা করেন। এরপর তিনি কুমারখালির এমএন হাই স্কুল, কুষ্টিয়া হাই স্কুল ও রাজবাড়ী জেলার পদমদী হাই স্কুলে কিছুদিন পড়াশুনা করেন। এরপর তিনি কুমারখালির এমএন হাই স্কুল, কুষ্টিয়া হাই স্কুল ও রাজবাড়ী জেলার পদমদী হাই স্কুলে কিছুদিন পড়াশুনা করেন। ১৮৬০ সালে মীর মশাররফের মা দৌলতুন্নেসা মারা যান। সেই সময় মীরের বয়স ছিল মাত্র ১৩ বছর। এ বয়সেই তিনি সাহিত্যচর্চা শুরু করেন।
তিনি একাধারে গল্প, উপন্যাস, নাটক, কবিতা, আত্মজীবনী, প্রবন্ধ ও ধর্মবিষয়ক ৩৭টি বই রচনা করেছেন। সাহিত্য রচনার পাশাপাশি কিছুদিন সাংবাদিকতা করেছেন। মীর মশাররফ হোসেনের রচনা সমগ্রহের মধ্যে রত্নাবতী, গৌরি সেতু, বসন্ত কুমারী, জমিদার দর্পণ, সংগীত লহরী, উদাসীন পথিকের মনের কথা, মদিনার গৌরব, বিষাদ সিন্ধু, গো-জীবন, বেহুলা গীতাভিনয়, গাজী মিয়ার বোস্তানী, মৌলুদ শরীফ, মুসলমানের বাঙ্গালা শিক্ষা, বিবি খোদেজার বিবাহ, হযরত ওমরের ধর্মজীবন লাভ, হযরত বেলালের জীবনী, হযরত আমীর হামজার ধর্ম জীবন লাভ, মোসলেম বীরত্ব, এসলামের জয়, আমার জীবনী, বাজিমাত, হযরত ইউসোফ, খোতবা বা ঈদুল ফিতর, বিবি কুলসুম, ভাই ভাই এইতো চাই, ফাস কাগজ, একি!, টালা অভিনয়, পঞ্চনারী, প্রেম পারিজাত, বাধাখাতা, নিয়তী কি অবনতি, তহমিনা, গাজী মিয়ার গুলি ও বৃহৎ হীরক খনিসহ উল্লেখযোগ্য।
কারবালার বিষাদময় কাহিনী অবলম্বনে রচিত বিষাদ-সিন্ধু বাংলা সাহিত্যের এক অমূল্য সৃষ্টি। মুসলমান সমাজের দীর্ঘ অর্ধশতাব্দীর জড়তা দূর করে আধুনিক ধারায় সাহিত্যচর্চার সূচনা করে তিনি মুসলিম সাহিত্যিকদের শিল্পকর্মে উদ্বুদ্ধ করেছেন। বাংলা সাহিত্যে তাঁকে চিরঞ্জীব করে রেখেছে তাঁর রচনা সমগ্র।
এছাড়াও তিনি ছাত্র অবস্থাতেই সংবাদ প্রভাকর (১৮৩১), গ্রামবার্তা প্রকাশিকা (১৮৬৩) এর মফস্বল সংবাদদাতার দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে সাহিত্যজীবন শুরু। গ্রামবার্তার সম্পাদক “কাঙাল হরিনাথ” ছিলেন তাঁর সাহিত্যগুরু। আজিজনেনহার (১৮৭৪) ও হিতকরী (১৮৯০) নামক পত্রিকা সম্পাদনা করেন। বঙ্কিম যুগের অন্যতম প্রধান গদ্যশিল্পী মীর মশাররফ হোসেন অসাম্প্রদায়িক এবং প্রগতিশীল চিন্তা-চেতনায় উজ্জীবিত ছিলেন। অনেক সময় তাঁর এই উদার সংস্কারমুক্ত ব্যক্তিত্বের কারণে তীব্র সমালোচনার মুখোমুখিও হতে হয়েছে। ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং কল্পনার সমন্বয়ে তাঁর অমর সৃষ্টি “বিষাদ-সিন্ধু”। ১৮৭২-৭৩ সালে সিরাজগঞ্জে সংঘটিত কৃষক বিদ্রোহের পটভূমিতে লিখেছেন “জমিদার দর্পণ” নাটক। তাঁর লেখার প্রধান বিশেষত্ব সমকালীন সমাজের অসঙ্গতি, সমস্যা এবং জমিদার শ্রেণির ভেতরের চিত্রসমূহের উপস্থাপন। তাঁর আত্মজীবনীমূলক রচনাগুলোতে আত্মসমালোচনাও করতে দ্বিধা করেননি। প্রকৃতপক্ষে তিনি ছিলেন অসংকোচ সত্যের প্রকাশক। তিনি ১৯১১ সালের ১৯ ডিসেম্বর রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের পদমদী গ্রামে তিনি মৃতুবরণ করেন। সাহিত্যের সব ক্ষেত্রেই তাঁর উজ্জ্বল স্বাক্ষর রেখে গেছেন।

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

১৬৯ কর্মচারিকে চাকরিচ্যুত করলো রাসিক

মেহেন্দিগঞ্জ পল্লী কর্মসংস্থান ও সড়ক রক্ষণাবেক্ষণের কর্মসূচি-৩ পরকল্পের চেক বিতরণ